সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া চন্দ্রপাড়া গ্রামের যমজ দুই বোন আফিয়া আক্তার ও ইভা আক্তারের সামনে। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে তারা দুজনই জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, ইংরেজির মতো কঠিন বিষয়ে পেয়েছেন ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৯৫।
দুই বোনই শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জন্ম থেকেই তারা চোখে কম দেখেন। বোর্ডে লেখা দেখা তো দূরের কথা, বইও পড়তে হয় চোখের একেবারে কাছে এনে। তবে এই শারীরিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাঁদের অধ্যবসায় ও মনোবলই এনে দিয়েছে অভাবনীয় সাফল্য।
আফিয়া আক্তার বলেন, “চোখের সমস্যা সবসময়ই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে ভয় লাগত। তবু স্বপ্ন ছাড়িনি। আমি ভবিষ্যতে বিসিএস দিয়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই।”
তার যমজ বোন ইভা আক্তার বলেন, “পড়ার সময় বই খুব কাছে এনে পড়তে হতো। অনেক কষ্ট করেছি, কিন্তু মনোবল হারাইনি। আমি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখি।”
তাদের বাবা প্রকৌশলী গোলাম আক্তার বলেন, “স্কুলে যাওয়া ও কোচিংয়ে যাওয়া—সবকিছুতেই আমি ওদের পাশে থেকেছি। রাত ১২টা বা ১টা পর্যন্ত তারা পড়েছে। চোখের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও তারা বলত—‘পড়াশোনা না করলে কিছুই হবে না।’ আজ ওদের সাফল্যে আমরা গর্বিত।”
মা তানিয়া শাবনাজ বলেন, “ছোটবেলা থেকেই ওদের চোখে সমস্যা ছিল। তাই বাসায় আলাদা শিক্ষক রেখেছিলাম। আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ওদের সাহস ও মনোবলই সাফল্যের মূল ভিত্তি।”
বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, “দুই বোনই অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। চোখে সীমিত দৃষ্টিশক্তি থাকা সত্ত্বেও ইংরেজিতে ১৯৫ নম্বর পাওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে তারা বিসিএসে সফল হবেই।”
উল্লেখ্য, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সারাদেশে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তবু এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই বোনের কৃতিত্ব প্রমাণ করে—শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নয়, আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়ই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি।


