কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : রানিং এলাউন্সসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের ট্রেন চলাচল। কমলাপুর স্টেশন থেকে গতকাল রাত পৌনে একটায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ছেড়ে যাবার পর আর কোন ট্রেন যাত্রা করে নি। এতে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে যাদের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবার কথা ছিল তারা পড়েছেন বিপাকে।
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া ও আনুতোষিক সুবিধা দেয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গেছে রেলের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। রানিং স্টাফের মধ্যে রয়েছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট চেকার পদধারীরা।
সমস্যা সমাধানে গতকাল সোমবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। যদিও যাত্রী ভোগান্তি বিবেচনা করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু আন্দোলনরত রেলকর্মীরা বলেছেন, চার বছর ধরে এসব দাবি উপেক্ষা করায় কর্মবিরতি ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।
তারা জানান, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।
তারা আরও জানান, ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১১ জুন তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই বছর ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানায়। ফলে রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।