সাইফুল ইসলাম তানভীর ।। হালি, বীজ ও কৃষিশ্রমিক খরচ আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় লোকেশনের শঙ্কা মাথায় নিয়েই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মাঠে মাঠে হালি পেঁয়াজের চারা রোপণের কাজ করে যাচ্ছেন চাষীরা। শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলি জমিতে দলবেঁধে পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কৃষকেরা শীত উপেক্ষা করে খুব সকালে একেকটা জমিতে সারিবদ্ধভাবে বসে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন। একদল শ্রমিক পেঁয়াজের চারা (হালি) উত্তোলন করে জমিতে কর্মরত শ্রমিকের হাতে তুলে দিচ্ছেন। জমিতে চারা রোপণের কাজ শেষ হতেই সেচ ও সার-ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় শত বছর ধরেই পিঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয় এই উপজেলার হালি পিঁয়াজ ও কন্দ পিঁয়াজ (শাখা পিঁয়াজ)। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কয়েক হাজার কৃষক বিভিন্ন জাতের হালি পিঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন। তবে পিঁয়াজের হালির দাম বেশি হওয়ায় এবং দিনমজুরদের মজুরি মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় উৎপাদন খরচ নিয়ে হিশশিম খাচ্ছে কৃষকেরা। এতে ফলন ভাল হলেও পিঁয়াজের দাম নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন পিঁয়াজ চাষীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে এ উপজেলায় প্রায় ২৮৩০ হেক্টর জমিতে হালি পিঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ক্ষেতে কৃষকেরা দলবেঁধে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিঁয়াজের হালি রোপণ করছেন। অনেকে আবার পিঁয়াজ লাগানো শেষে ক্ষেতের আদ্রতা বাড়াতে পানি দিচ্ছে। পিঁয়াজ চাষীদের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে এ উপজেলার কৃষকেরা ফরিদপুর থেকে ৫ হাজার টাকা দরে সুপার কিং পিয়াজের দানা এনে রোপন করেন। যা বর্তমানে ১৬ হাজার টাকা দরেও কৃষকদের কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও অনেক কৃষক ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা মন পিঁয়াজের হালি কিনেও পিঁয়াজ চাষ করছেন। তবে এক বিঘা জমিতে ৪ থেকে ৫ মন হালি লাগে। এতে করে এক বিঘা জমিতে পিঁয়াজ চাষে প্রায় ৫০- ৬০ টাকা খরচ হচ্ছে। আবাদ ভাল হলে প্রতি বিঘায় সুপার কিং ৫০-৭০ মন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। প্রতিমণ পিঁয়াজ আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে না পারলে কৃষকদের মোটা অংকের টাকা লোকসান হতে পারে বলে ধারণা করছেন একাধিক কৃষক।
উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ভাদিয়াখোলা গ্রামের মোজাহার হোসেন জানান, আমি এক বিঘা জমিতে হালি পিঁয়াজ চাষ করেছি। পিঁয়াজের দানা এবং হালির যে দাম তাতে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। পিঁয়াজের বাজার যদি চড়া না হয় তাহলে আমাদের অনেক লোকসান হবে। তারপরে প্রাকৃতিক বৈরি আবহাওয়ার একটা শঙ্কা তো থাকেই।
গালা ইউনিয়নের আলনডি গ্রামের মামুন বলেন, এ বছর ৩ একর জমিতে হালি পেঁয়াজ রোপণ করেছি। চারা ভালো হয়েছে। আশা করি ভালো ফলন পাবো। জনপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা দরে কৃষি শ্রমিক নিয়ে চারা রোপনের কাজ করছি। একযোগে কাজ শুরু হওয়ায় শ্রমিকের চাহিদা বেশি। তাই দাম একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ রোপণ সম্পন্ন হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান জানান, হরিরামপুর উপজেলায় ঐতিহ্যগতভাবে অনেক আগে থেকেই হালি পিঁয়াজের চাষে কৃষকদের সুখ্যাতি রয়েছে। এর ফলেএ উপজেলার কৃষকদের সবসময় কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। আশা করি এ বছর উপজেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব হবে।