বাদল হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি।। মানবিকতাকে পদদলিত করে নির্মম প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে জনতার রোষানলে পড়েছে কুয়াকাটার উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় বুধবার (৬ নভেম্বর) উপজেলা স্থানীয় জনতা এবং প্রশাসনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পযার্য়ে উত্তেজিত জনতা উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে কুয়াকাটার পৌর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘পটুয়াখালীর কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে পৌরভবন পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন।’
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই অভিযান। উচ্ছেদ অভিযানে কমপক্ষে ২ হাজার ছিন্নমূল মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- ‘টিন, পলিথিন, নিম্নমানের কাঠের বেড়া দিয়ে তৈরি ৪ শতাধিক ছিন্নমূল মানুষের মাথাগোঁজার ঠাঁই গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে কমপক্ষে ২ হাজার ছিন্নমূল মানুষ। তাদের মধ্যে সহায়হীন বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষ ছাড়াও রয়েছে কমপক্ষে অর্ধশত গর্ভবতী নারী, নবজাতক, বিভিন্ন বয়সী শিশু, উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী। অপরিকল্পিত উচ্ছেদ অভিযানের কারণে জীবনঝঁুকিতে পড়ে ছিন্নমূল হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘উচ্ছেদ অভিযানের নামে চরম নির্মমতার কারণে ভুক্তভোগীরা ছাড়াও ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টায় শুরু হওয়া অভিযানের নামে হিংস্র হায়েনার মতো নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েও সেনাসদস্যদের উপস্থিতির প্রতি সম্মানবোধের কারণে সিন্ধান্ত বদল করে বিক্ষুব্দ জনতা।
পরের দিন সোমবার (৫ নভেম্বর) সকালে ফের উচ্ছেদের নামে মানবিকতাকে পদদলিত করে নির্মম নিষ্ঠুরতা শুর করলে রুখে দাঁড়ায় ভুক্তভোগীরা ছাড়াও বিক্ষুব্দ জনতা। এক পযার্য়ে উত্তেজিত জনতা উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে কুয়াকাটার পৌর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
উল্লেখ্য, উচ্ছেদ অভিযানের নামে যারা নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগই ছিন্নমূল। তারা বাঁচার তাগিদে পরিত্যক্ত জায়গায় ঝুপরি তৈরি করে কোনোরকম মাথাগোঁজার ঠাঁই নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নিবার্হ করেন। হিংস্র তাণ্ডব চালিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই কেড়ে নেয়ার ফলে জীবন-জীবিকা দুটোই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবনঝঁুকিতে পড়ে ভুক্তভোগীরা।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে- ‘বিশেষ প্রয়োজন ছাড়াই প্রায়ই এধরণের নির্মম তাণ্ডব চালিয়ে এসব ছিন্নমূল সহায়হীন মানুষের জীবন-জীবিকার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর প্রায় সবগুলো অমানবিক অভিযানের নেতৃত্ব ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম। তার উদ্যোগে পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানের প্রক্রিয়া ছাড়াও এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েও রয়েছে সর্বমহলে বিতর্ক।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ ও মাইকিং করে অবৈধ স্থাপনার সরিয়ে নিয়ে জায়গা স্থানান্তরের জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানানো হলেও স্থানীয়রা দাবি করেন- ‘উচ্ছেদ অভিযানের ৩দিন আগে নামমাত্র মাইকিং করা হয়েছে যা অনেকেই শুনেননি বা অন্য কোনো মাধ্যমে জানতেও পারেননি তারা। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ সরকার কিংবা জনগণের জন্য নয়, এ উচ্ছেদ অভিযানের নেপথ্যে রয়েছে ইউএনও রবিউল ইসলামের ব্যক্তিগত স্বার্থ।
এরপর উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট) ও কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক মো. কৌশিক আহমেদ ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুয়াকাটা ইউনিট, মহিপুর থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা মোট চার শতাধিকের অধিক অবৈধ দখলদারদের যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময় পরেও অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি। এরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হয়েছে।