সাইফুল ইসলাম তানভীর: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. সাজেদুল ইসলামের সরকারি গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো- ঠ-১৫-২২৬৮) ব্যবহৃত হচ্ছে তার ব্যক্তিগত কাজে। এতে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক ও খামার পরিদর্শনসহ দৈনন্দিন সরকারি কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে অফিস ও ফিল্ড স্টাফদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার সাজেদুল ইসলাম গত ২৪ সেপ্টেম্বর সিংগাইরে যোগদান করেন। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সাভারে। সেখান থেকে প্রতিদিন অফিস করেন সিংগাইরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলডিডিপি) সরকারি ডাবল কেবিন পিকআপটি উপজেলায় খামার পরিদর্শন ও মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। গাড়িটি রাখার জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে অফিস কম্পাউন্ডে তৈরী করা হয়েছে গ্যারেজ। বিধি মোতাবেক অফিসের গাড়ি কর্ম এলাকার বাইরে নেয়ার নিয়ম না থাকলেও ডা. সাজেদুল গাড়িটি তার সাভারস্থ বাসার গ্যারেজে নিয়ে রাখেন। সেখান থেকে তিনি সিংগাইরে অফিস করেন এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে সাভার ও ঢাকায় যাতায়াতে গাড়িটি ব্যবহার করে থাকেন।
সূত্র আরো জানায়, বাজার-ঘাট থেকে শুরু করে সন্তানকে সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে নেয়া-আনাসহ তার পারিবারিক আচার অনুষ্ঠানেও গাড়িটি ব্যবহৃত হয়। স্বাচ্ছন্দে গাড়িটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়িটির সামনে সাঁটানো মনোগ্রামযুক্ত সরকারি স্টীকারটিও তুলে ফেলা হয়েছে।
এদিকে, গাড়ির ড্রাইভার মো. মনিরুল ইসলাম সিংগাইর থেকে সকালে বাসযোগে সাভার গিয়ে ডা.সাজেদুল ইসলামকে নিয়ে আসেন। অফিস শেষে তাকে আবার সাভার বাসায় পৌঁছে দিয়ে গ্যারেজে গাড়ি রেখে চলে আসেন। এ নিয়ে শুরু হয়েছে কানাঘুষা। প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল কেন্দ্রীক সেবা নিতে আসা সচেতন একাধিক ব্যক্তি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ সম্পর্কে ড্রাইভার মো. মনিরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, স্যার আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই গাড়ি নিয়ে যেতে হবে। অন্যান্য বিষয় তিনি এড়িয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গাড়িটি নিয়ে কর্ম এলাকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জরুরি প্রয়োজন হলে ডিরেক্টর স্যারের অনুমতি সাপেক্ষে যেতে পারবেন।
সিংগাইর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে সিংগাইরের বাইরে যেতে হয়। গাড়ি নিয়ে সাভার ও ঢাকা গেলে সেটা আমার জেলা অফিসার জানেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মুজিবর রহমান বলেন, সিংগাইরের বাইরে গাড়িটি ব্যবহারের অনুমতি নেই। সরকারি কাজ ছাড়া ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ডা. মো. সাজেদুল ইসলাম ২০১৫ থেকে সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে কয়েক মাস ঝালকাঠির রাজাপুরে দায়িত্ব পালনের পর পূনরায় সাভারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণবিপ্লবে তোপের মুখে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর সাভারস্থ প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল ভাঙ্চুর ও অফিসের গাড়িটি পুড়িয়ে দিলে তিনি সিংগাইরে পোস্টিং নিয়ে আসেন।