সেলিম রেজা, মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুরের গাংনীতে ভাইয়ের কাটারিদায়ের আঘাতে সহোদর বড় বোন ও আপন মেজো ভাবি খুন হয়েছে। নিহত সহোদর বড় বোন জোসনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের হাফিজুল ইসলাম এর স্ত্রী এবং মেজো ভাবি জাকিউল ইলমা জাকিয়া (৪৭) গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও গাংনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড বাগানপাড়ার জাহিদ হোসেনের স্ত্রী।
শনিবার (১২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার সানঘাট গ্রামের দাঁইড়পাড়ার কাশেম আলী টোকন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল করিমসহ গাংনী থানা পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেহেরপুর ইউনিটের একটি টিম ও সিপিসি ৩ মেহেরপুর র্যাব ১২ এর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সানঘাট গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে কাশেদ আলী টোকন জানান, প্রায় ৩৫ বিঘা জমি জায়গার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দীর্ঘ ছয়-সাত বছর উপজেলার সানঘাট গ্রামের মৃত আজিত আলীর ছেলে জাহিদ ও ওহিদসহ অংশীদারদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। বাড়ির পাশেই তিন একর ২৫ শতাংশ জমিতে একটি পুকুর রয়েছে সেই পুকুরটি ভাগবাটোয়ারা না করে মহিবুল ইসলাম ওহিদ মাছ চাষ করে আসছে। আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার জন্য ওহিদ সেখানে পৌঁছালে সহোদর ভাই জাহিদ, ভাবি জাকিউল ইলমা জাকিয়া, সহোদর বোন যথাক্রমে জোসনা খাতুন, শামীমা খাতুন ও বুলবুলি খাতুন ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছায়। এ বছর অংশীদারদের অন্য কেউ মাছের পোনা ছাড়বে। এমন প্রস্তাব দিলে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে ওহিদের আগে থেকেই ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ধারালো কাটারিদা বের করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। দায়ের কোপে মেজো ভাবি জাকিউল ইলমা জাকিয়া ও বড় বোন জোসনা খাতুন ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং গুরুতর আহত হয় মেজো ভাই জাহিদ হোসেন, বোন শামীমা ও বুলবুলি খাতুন।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে আসেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। জাহিদ হোসেন ও শামীমা খাতুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দিনে দুপুরে আপন ভাই ও ভাবিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে ওহিদ পালিয়েছে। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। একই মতামত প্রকাশ করেছে স্থানীয়দের অনেকে।
গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ সাজ্জাদ রেজা জানান, জাকিউল ইলমা জাকিয়া তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। তারে পারিবারিক বিষয়টি আমি কিছুটা জানি। গাংনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড বাগানপাড়ায় ১৭ শতাংশ জমি রয়েছে। তার মধ্যে বোনদের অংশ ভাই জাহিদ হোসেন কিনে নিলে জাহিদের জমি গিয়ে দাঁড়ায় মোট জমির তিন ভাগের দুইভাগে। সেখানে বিল্ডিং করতে গেলে ওহিদ বাধা দেয় এবং ২২/০৪/২০২৪ ইং তারিখে একটি মামলা দিয়ে ১৪৪ ধারাজারি করে জাহিদকে অযথা হয়রানি করেন। ওই ঘটনায় জাহিদ ও তার পরিবারের লোকজন ওহিদকে মারধর করার ঘটনাও ঘটিয়েছিল। মূলত তারপর থেকেই ওহিদ তার মায়ের নামে ১১ বিঘা জমি তার নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। মা রাজি না হওয়ায় মায়ের সাথেও তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। সে কারণে আজ সকালে পুকুরে মাছের পোনা দিতে এসে এমন ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়েছে। একজন সরকারি কর্মচারীকে এমনভাবে হত্যা করার জন্য ধিক্কার জানাই এবং হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল করিম জানান, পারিবারিক ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গাংনী উপজেলার সানঘাট গ্রামে জাকিউল ইলমা জাকিয়া ও জোসনা খাতুন নামের দু’জনকে কাটারি দা দিয়ে খুন হয়েছে। আসামি আমাদের নজরের মধ্যে রয়েছে। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আটক করা সম্ভব হবে বলেও উল্লেখ করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।