October 7, 2024 - 12:24 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসারাদেশ ও রাজনীতিসারাদেশসাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক সিইও’র বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু

সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক সিইও’র বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু

spot_img

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাজিমউদ্দীনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতা ও সেবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগ। অভিযোগের তদন্ত করে মানসিক বিকারগ্রস্থ এমন কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন সাতক্ষীরা পৌরবাসী।

সাতক্ষীরা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, নাজিমউদ্দীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সাতক্ষীরা পৌরসভায় যোগদান করেন ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে। এর আগে কুড়িগ্রামের আরডিসি ও কক্সবাজারের এসিল্যান্ড থাকাকালে বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য তিনি হন ব্যাপক সমালোচিত। বিশেষ করে কক্সবাজারের এসিল্যান্ড থাকাকালে বয়স্ক একজন ব্যক্তিকে কান ধরে টেনে লাঞ্চিত করে দেশব্যাপী ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েন এ কর্মকর্তা।

সর্বশেষ জানা যায়, অন্তবর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এনিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে সরিয়ে ০৮ সেপ্টেম্বর তাকে কিশোরগঞ্জের ইটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক শুরু হলে তার চাকরি বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পৌরসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরায় যোগদানের পর থেকে শুরু হয়ে যায় তার অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সেবাগ্রহীতাদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে চলতি বছরের ১৩ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে ভোলা পৌরসভায় বদলীর আদেশ দেন। তবে সেআদেশ অগ্রাহ্য করে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বহাল তবিয়তে সাতক্ষীরা পৌরসভায় অফিস করেছেন তিনি।

সাতক্ষীরা পৌরসভায় যোগদান করেই পানি সরবরাহ বিভাগে মাস্টাররোলের ২৭ কর্মচারিকে কোনো কারণ ছাড়াই বেতন বন্ধ করে দেন নাজিমউদ্দীন। এ সকল অভিযোগের জন্য নাজিমউদ্দীনকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে পানি বিভাগের কর্মচারি বাপী আহমেদ বলেন, আমরা পানি বিভাগের মাস্টাররোলের কর্মচারি। সিইও নাজিম আসার পরের মাস

থেকে কারণ ছাড়াই আমাদের বেতন বন্ধ করে দেয়। সেই বেতন চাইতে গেলে ক্রসফায়ারে গুলি করে হত্যা করে মারার হুমকি দেয়। সেই থেকে আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করছি। তিনি প্রচন্ড দুর্নীতিবাজ। আমরা তার বরখাস্ত দাবি করছি। পৌরসভায় চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ৭ ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেন নাজিমউদ্দীন। ২বছর পার হলেও কারো চাকরি দেননি তিনি,টাকাও ফেরত দেননি।

পৌরসভার মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিরাজ হোসেন বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছিল সিইও নাজিম। স্ইে টাকা ফেরতও দেয়নি,চাকরি স্থায়ীকরণও করেনি। নাজিমউদ্দীনের সময়ে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়েনি পৌরসভায়। রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের জন্যও তাকে দিতে হয়েছে ঘুষ।

কোরাইশী ফুড পার্কের স্বত্বাধিকারী আনিছুর রহমান কোরাইশী বলেন, রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের জন্য যারপরনাই হয়রানি করেছিলেন নাজিম ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান এবং ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স ছাড় করা হয়। সেবাগ্রহীতা ও সাধারণ মানুষের সাথে চরম দুব্যবহার করতেন নাজিম। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরাও তার দুর্ব্যবহার ও লাঞ্চনা থেকে রেহাই পাননি। অফিসে বসে মাদক সেবনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয় দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক মুনসুর রহমান বলেন, অসহায় একজন ব্যক্তির প্রয়োজনে আমি আমি সাতক্ষীরা পৌরসভায় যাই। কিন্তু সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আসলে সে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মাদকাসক্ত মানুষ। কিছু বাটপার সাংবাদিককে ম্যানেজ করে সে মুলধারার গণমাধ্যমকর্মীদের

চরমভাবে নাজেহাল করেছে। আমরা চাই সে যেন বাংলাদেশের কোথাও পোস্টিং না পায়। বিএনপি থেকে নির্বাচিত মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতিকে চেয়ারে বসতে দেননি নাজিম। কাউন্সিলরদের হাত করে ফিরোজ হাসানকে বানিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। এরপর থেকে নাজিমউদ্দীন ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকেন। সেবাগ্রহীতাসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা ঘুষ। তাকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনসহ একাধিকবার আন্দোলন হয়েছে সাতক্ষীরায়। তার বিরুদ্ধে তদন্তও হয়েছে। কিন্তু এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বহাল তবিয়তে রাজসিক কায়দায় চাকরি করেছেন সাতক্ষীরা পৌরসভায়। ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার

সাবেক মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি স্থানীয় সরকার বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে ৯টি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে, ভুয়া প্রকল্পের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, আর্থিক অনুদানের নামে ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ,অর্থ বানিজ্যের মাধ্যমে পৌরসভার ১৪ জন কর্মচারী নিয়োগসহ ৯টি অভিযোগ।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন,‘আওয়ামী সরকারের আমলে আমি বিভিন্ন ছলে হয়রানি হয়েছি। সিইও নাজিমউদ্দীন আর ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ পেশিশক্তি দেখিয়ে আমাকে পৌরসভায় আসতে দেয়নি।শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে একবছরের মধ্যে তারা ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা তারা আত্মসাৎ করেছে।ঠিকাদাররা স্টেটমেন্ট দিয়েছে, এসব প্রকল্পএর কাজ তারা করেনি।

নাজিমউদ্দীন ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসানের বিরুদ্ধে সাবেক মেয়রের আনীত অভিযোগ তদন্ত করে মতামতসহ স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রতিবেদন দিতে দেওয়া হয়েছে নির্দেশ। গত ৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রলায়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মন্তব্যসহ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা মোতাবেক তদন্তকাজ শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস।

এ বিষয়ে তিনি জানান, পৌরসভার সিইও ও পৌর কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্থানীয় সরকার বিভাগে দেওয়া হয়েছে। সেটার তদন্তভার আমার ওপর। তদন্ত শুরু করেছি। যতদ্রত সম্ভব মন্তব্যসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ