সাইফুল ইসলাম তানভীর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জে একটির কাজ শেষ না করেই তড়িঘড়ি করে প্রায় বছর খানিক পূর্বে উদ্বোধন হলেও মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে পরিত্যাক্ত অবস্থায়। অপরটির কার্যক্রম চলতে থাকলেও ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্তের পর থেকে রয়েছে বন্ধ। পুলিশ ফাঁড়ি দুটির একটি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলের নটাখোলায় অবস্থিত। অপরটি হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে জেলার প্রবেশদ্বার সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ভাষা শহীদ রফিক সেতুর পশ্চিমে অবস্থিত।
পুলিশ ফাঁড়ি দুটি বন্ধ থাকায় ফাঁড়ি এলাকার আশপাশের বাসিন্দারা ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। ঘটছে আইন শৃঙ্খলার অবনতি। স্থানীয়রা দ্রুতই ফাঁড়ি দুটির কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, পদ্মা নদীর কারণে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি ও আজিমনগর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এছাড়া ফরিদপুর সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন-নর্থ চ্যানেল ও ডিগ্রির চর এবং চরভদ্রাসন উপজেলার দুটি ইউনিয়নসহ মোট সাতটি ইউনিয়ন এই চরে অবস্থিত। পদ্মা নদী বেষ্ঠিত এই দুর্গম চরে প্রায় সময়ই ঘটে থাকে অপরাধমূলক কর্মকান্ড। চরে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি এবং জননিরাপত্তার উদ্দেশ্য দীর্ঘদিন ধরে চরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে লেছড়াগঞ্জের নটাখোলায় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক পুলিশি তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ না করেই গত বছরের ২১ জুলাই এটার উদ্বোধন করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পরিতাপের বিষয় হলো এই তদন্ত কেন্দ্রে একজন ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশের ২১ সদস্যের জনবল থাকার কথা থাকলেও উদ্বোধনের পর বছর পার হয়ে গেলেও তদন্ত কেন্দ্রের দরজাবিহীন ভবনটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। চারদিকে জঙ্গল এবং মূল ফটকটিও ভাঙা। লোকজন বলছে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় এখানে মাদকসেবীদেরও আড্ডা চলে রীতিমতো। এছাড়া মাঝে মাঝে তরুণ-তরুণীদেরও দেখা মেলে ওই তদন্ত কেন্দ্রের নির্জন কক্ষগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, চরকে কেন্দ্র করে চোরাকারবারিদের তৎপরতা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। মাদকের নিরাপদ অভয়াশ্রম হিসেবেও পরিচিত। তাই প্রতিনিয়তই ঘটছে অপরাধমূলক কর্মকান্ড। ফলে চরবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ৫ আগস্ট দূর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ রয়েছে সিংগাইর থানার অন্তর্গত হেমায়েতপুর -সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে প্রায় একযুগ আগে যাত্রা শুরু করা ধল্লা পুলিশ ক্যাম্পের সেবামূলক কার্যক্রম। এ ক্যাম্পে একজন এসআই এর অধীনে একজন এএসআই, সুবেদার ও হাবিলদারসহ সার্বক্ষণিক ১১ জন পুলিশ সদস্য আইনশৃঙ্খা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। বন্ধ থাকায় ক্যাম্প এলাকার আইন-শৃংখলা ক্রমশই অবনতি ঘটেছে। বেড়ে চলেছে খুনসহ অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। অপরদিকে পুলিশ ক্যাম্প চালু না হওয়ায় জানমাল নিয়ে চরম আতঙ্কিত ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দারা।
জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪ টার দিকে পুলিশ ক্যাম্পের অদূরে শহীদ রফিক সেতুর দক্ষিণ পাশে ধলেশ্বরী নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তির (৫০) অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে সিংগাইর থানা পুলিশ।
অপরদিকে ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ ক্যাম্প এলাকা ধল্লা ইউনিয়নের লাঙ্গুলিয়া খালাসীপাড়া ধলেশ্বরী নদীর উত্তর পাড়ে নিজ জমির পেঁপে খেত থেকে জবেদালী (৪৫) নামের এক কৃষকের মরদেহ উদ্ধার করলেও এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি।
এদিকে ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় ২৫ আগষ্ট রাতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩-৪ শত জনের নামে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। এছাড়াও জেলা এবং উপজেলার সীমান্তবর্তী এ পুলিশ ক্যাম্পটি বন্ধ থাকায় মাদক কারবারিদের ও চলছে অবাধ বিচরণ। স্থানীয়রা জানান, ধল্লা পুলিশ ক্যাম্পের কার্যক্রম চালু না থাকায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। এলাকাবাসী দ্রুত ক্যাম্পের পুলিশী কার্যক্রম চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ছাড়া গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে তালেবপুর গ্রামের মুক্তার মিয়া নামের একজনকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে গত ১৩ আগস্ট গভীর রাতে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের নীলটেক গ্রামের আয়ূব খানের ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে (৩৫) কুপিয়ে খুন করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
ধল্লা পুলিশ ক্যাম্প চালুর বিষয়ে সিংগাইর থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছু পুলিশ বদলি হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ এলে দ্রুত ধল্লা পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হবে। তার পরেও যতটুকু সম্ভব থানার পুলিশ দিয়ে আইনশৃঙ্খলার দিকে সার্বক্ষনিক নজর দেয়া হচ্ছে।
নটাখোলা পুলিশ ফাঁড়ির কাজ অসমাপ্তের বিষয়ে মানিকগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বনাথ বণিক বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই মূলত চরের পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি পরিপূর্ণতা পাচ্ছে না। অবশিষ্ট কাজের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ফান্ড দেয়া হলে বাকি কাজ আমরা সমাপ্ত করতে সক্ষম হবো।
মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ বলেন, আমি শুনেছি নটাখোলা তদন্ত কেন্দ্রের কাজ পরিপূর্ণভাবে সমাপ্ত না করে উদ্বোধন করা হয়েছে। ফান্ডের সমস্যা থাকায় গণপূর্ত বিভাগ কাজ শেষ করতে পারেনি। ফান্ডের বিষয়টি নিয়ে আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ করবো। যাতে দ্রুত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা যায়।