কর্পোরেট ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দেশের সর্ববৃহৎ বানিজ্যিক ব্যাংক। দেশের অর্থনীতি ও জাতীয় উন্নয়ন এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় নিয়ে ইসলামী ব্যাংক ১৯৮৩ সালের ৩০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এ দেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক হিসেবে কাজ শুরু করে।
ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) সহ সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থিত প্রসিদ্ধ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ উদ্যোক্তা হিসেবে মূলধন যোগান দেন। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় দেশী ব্যক্তি ও সংস্থা মিলে মোট মূলধনের ২৮.৫০% এবং বিদেশী উদ্যোক্তাগণ ৭১.৫০% মূলধন প্রদান করেন।
গত চার দশকে ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। দেশব্যাপী সুনাম, সুখ্যাতি ও আস্থা বৃদ্ধির কারণে বিগত ৩০ বছর ধরে প্রতিবছরই ব্যাংকের ডিপোজিট, এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট, রেমিট্যান্স সব বেড়েছে। আইনকানুন পরিপালন, গ্রাহককে উত্তম সেবা দেওয়া ও আর্থিক সূচকে অন্য সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এই ব্যাংক।
২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এর অবস্থান নিম্নরূপ:
২০১২ সাল থেকেই যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সসিয়াল ইনটেলিজেন্স ম্যাগাজিন ‘The Banker’ কর্তৃক বিশ্বের সেরা ১০০০ ব্যাংকের মধ্যে এই ব্যাংক অন্তর্ভূক্ত যা ধাপে ধাপে ২০২১ সালে ৮৮২তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে যা ২০২৩ সালে ৯২২তম অবস্থানে রয়েছে। উপরোক্ত অসাধারণ অর্জনের পর ২০১৬ সালে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংক এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ট সহচর এস. আলম গ্রুপ এবং ২০১৭ সালে ৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় অবৈধভাবে ব্যাংক দখল করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকে এস. আলম গ্রুপের কোন শেয়ার ছিলনা। ২০১৬ সালে ৭টি অস্তিত্বহীন শেল কোম্পানি দিয়ে ১৪.০৭% শেয়ার নেয় যা বর্তমানে প্রায় ৮২% হস্তগত করেছে।
নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব নির্দিষ্ট পলিসি/সার্কুলার, লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা ছাড়াই প্রায় ৯ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এসব কর্মকর্তার বেশির ভাগই সাইফুল আলমের নিজের এলাকা পটিয়া উপজেলার। ২০১৬ সালে ব্যাংকে কর্মকর্তা ছিল ১৩,৫৬৯ জন যা ব্যাংকের নিয়ম-নীতি লংঘন করে ২০২৩ সালে ২০,৮০৯-এ তুলে আনা হয়েছে। পাশাপাশি এস. আলম গ্রুপ অন্তীত্বহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠার/ফার্মের নামে/বেনামে অত্যন্ত অনৈতিকতার ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এবং বিভিন্ন কায়দায় অজস্র বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেছে। ফলে ব্যাংকের নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের পতন ঘটে।
এস আলম গ্রুণ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ধীরে ধীরে শেয়ার ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), দুবাই ইসলামী ব্যাংক, আল-রাজি গ্রুপ, সৌদি কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল এন্ড টুরিস্ট এজেন্সিসহ বেশির ভাগ উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিতে হয়। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে বিদেশীদের শেয়ার ছিল ৫২ শতাংশের মতো, যা এখন ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
গত ১৫ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ার এবং সাবেক পরিচালক শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর বরাবার পাঠানো হয়েছে। এতে গভর্নরের কাছে তিনটি দাবির উপস্থাপনের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকের বিগত দিনের অনিয়ম ও সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হয়।
তিনটি দাবি হল-
*নামে বেনামে ক্রয় করা ব্যাংকের ৮২% শেয়ার যাতে অন্য কোথাও হস্তান্তর করতে না পারে দ্রুত সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
*বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইসলামী ব্যাংকের সম্পদ লুটপাটের তথ্য অবিলম্বে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র তুলে আনা।
*বর্তমান দখলদার পরিচালনা পর্ষদ অনতিবিলম্বে বাতিল করে তদস্থলে পূর্ববর্তী ২০১৩ সালের ন্যায় সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও সক্ষম পেশাদার ব্যক্তিবর্গ দিয়ে একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা।
এছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-কে জনগণের উত্তম আস্থাভাজন এবং সর্বোত্তম পারফর্মার ও সেরা ব্যাংক হিসাবে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে গ্রাহকদের আস্থা ও স্বার্থ রক্ষার্থে জরুরী ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ব্যাংকের সম্মানিত অভিভাবক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাননীয় গভর্নর মহোদয়কে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন কর্মকর্তাগণ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩তম গভর্নর হিসেবে অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছে তারা।