বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন একীভূত করে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডা। এ প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে নিচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোগ। বিনিয়োগ নিয়ে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম।
প্রশ্ন:বিনিয়োগ বোর্ড থেকে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) হিসেবে রূপান্তরে বিশেষ কী সুবিধা হলো?
আমিনুল ইসলাম :বিনিয়োগ একটি বহুমাত্রিক বিষয়। বর্তমান এবং ভবিষ্যতের অনেক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। এর জন্য ভবিষ্যৎমুখী একটা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল। সে বিবেচনা থেকে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগের জন্য প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এবং বিনিয়োগ বোর্ডকে একীভূত করে বিডা গঠন করা হয়েছে। শক্তিশালী আইনের মাধ্যমে বিডাকে একটা কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। একটা বৈশ্বিক ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হবে বিডা। যাতে বিনিয়োগকারীদের খুব সহজেই প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে বিডা গঠনের এটাই বিশেষ সুবিধা।
প্রশ্ন:বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ কী সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে বিডা?
আমিনুল ইসলাম :সাধারণত বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থার প্রধান চারটি কাজ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে_ উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সেবা দেওয়া, দেশের ইমেজ নির্মাণ, বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরা। আমরাও এই চারটি বিষয়ে কাজ করছি। তবে বিডার মূল ফোকাস হচ্ছে, উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত উন্নত মানের সেবা নিশ্চিত করা। যাতে তারা সহজেই এ দেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। আমরা মনে করি, বিদেশি উদ্যোক্তারা সহজে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সেবা পেলে একটা ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিয়ে যেমন ব্যবসা করতে পারবেন, তেমনি বিদেশে বাংলাদেশের পক্ষে দূতের কাজ করবেন। এ কারণে উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, আমরা সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিবেশ উন্নয়নের চেষ্টা করছি। ওয়ানস্টপ সার্ভিস দিচ্ছি। ঢাকা-চট্টগ্রামকেন্দ্রিক বিনিয়োগের ধারণাকে আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের প্রতিটি বিভাগে বেসরকরি বিনিয়োগ উন্নয়ন পরিকল্পনা করছি। নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি নিচ্ছি।
প্রশ্ন:গত এক বছরে এসব উদ্যোগের দৃশ্যমান কী অগ্রগতি হয়েছে?
আমিনুল ইসলাম :এত অল্প সময়ের ব্যবধানে বড় ধরনের সাফল্য হয়তো আশা করা যায় না। তবে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে ইতিমধ্যেই। বিডার যাত্রার পর থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগে বড় ধরনের সাড়া লক্ষ্য করছি। অনেক দেশই এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দেশ থেকে আগ্রহ নিয়ে উদ্যোক্তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এমনকি বিনিয়োগের জন্য অপ্রচলিত দেশ বেলারুশ থেকেও আগ্রহ পাচ্ছি। সম্প্রতি জাপান এবং সিঙ্গাপুরের বিজনেস ফোরামে বড় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বিশ্বসেরা একটি জাপানি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি শিল্পগ্রুপের যৌথ বিনিয়োগে বড় ধরনের চুক্তি হবে শিগগিরই। এসব অগ্রগতি নির্দেশ করে যে, বিনিয়োগ উন্নয়নে সঠিক পথেই এগোচ্ছে বিডা। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং কোম্পানিকে টার্গেট করে এগুচ্ছি আমরা। দেশ হিসেবে জাপান, সিঙ্গাপুর, চীন, প্যারিস, নিউইয়র্ক এসব দেশ এবং শহরের বড় প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা হয়েছে। ইতিমধ্যে টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট, ম্যাগনেটিক ট্রেন, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছি।
প্রশ্ন:বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা পরিচালনা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে । আপনি বিভিন্ন সময়ে বলছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ অবস্থান ১০০-এর নিচে আনার লক্ষ্য রয়েছে। লক্ষ্য অর্জনের পথে আছেন আপনারা?
আমিনুল ইসলাম :বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে আগের বছরের তুলনায় দুই ধাপ উন্নয়ন হয়েছে আমাদের। ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশর অবস্থান ১৭৮ থেকে এখন ১৭৬তম। লক্ষ্য করতে হবে, ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের ক্ষেত্রে এরকম একটা নিচু সারির দেশ সত্ত্বেও এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে পারলে এ দেশের প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ কিংবা তারও ওপরে। এটা মাথায় রেখে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে আগামী ৫ বছরের মধ্যে অবস্থান ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবো আমরা।
প্রশ্ন :গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। প্রায় সব দেশে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং সস্তা শ্রমের মতো বড় আকর্ষণ সত্ত্বেও কেন বাংলাদেশ পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারছে না?
আমিনুল ইসলাম :বিদেশি বিনিয়োগে গত বছরটি সারাবিশ্বের জন্য একটা মন্দার বছর ছিল। উন্নত দেশের বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে ১৪ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের ৪ শতাংশ বেশি_ এটা বড় ধরনের সাফল্য। তবে বিনিয়োগ একটা দেশের বিধি-বিধান, আইন ও নীতিমালার ওপরও নির্ভর করে। আমাদের এগুলো সংস্কার চলছে। আধুনিকায়ন হচ্ছে। বিনিয়োগে বাধা অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে। মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নে চেষ্টা চলছে।
প্রশ্ন :ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?
আমিনুল ইসলাম :ওয়ানস্টপ সার্ভিস হবে বিনিয়োগ উন্নয়নে অত্যন্ত উঁচু মানের সেবার নিশ্চয়তা। মানুষের কোনো স্পর্শ ছাড়াই ওয়েবে পরিচালিত এই সেবা আইনের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে উদ্যোক্তারা সেবা পাবেন।
সূত্র: সমকাল