October 7, 2024 - 10:28 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসম্পাদকীয়বিশ হাজার টন চাল লোপাট; মূল হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক

বিশ হাজার টন চাল লোপাট; মূল হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক

spot_img

দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার এ বছর হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী এ বছরের ৭ সেপ্টেম্বরে কুড়িগ্রামের চিলমারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। সেদিন থেকে শুরু হয় খাদ্যবান্ধব এ কর্মসূচি। সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। দেশের হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এ রকম উদ্যোগ সত্যিকার অর্থেই প্রয়োজন। কিন্তু এ কর্মসূচীর শুরুর পর থেকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। একটি বিশেষ কুচক্রী মহল সরকারের বিতরণ করা এসব চাল নিয়ে রীতিমত ব্যবসা ও রাজনীতি করছে। হতদরিদ্রদের চাল নিজেদের কাছে মজুদ রেখে পরে অন্য জায়গায় বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাদের নামে। এ রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি করে প্রায় ২০ হাজার টন চাল বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাকর ও দু:খজনক। 

এ কর্মসূচীর প্রথম তিন মাসে এ রকম বিশেষ কুচক্রী মহল ২০ হাজার টন চাল বিক্রি করে লুটে নিয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ২ লাখ ১৮ হাজার ভুয়া কার্ড বানিয়ে এসব চাল তুলে নিয়েছে তারা, যাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে যাদের এ কর্মসূচীর মাধ্যমে উপকৃত হবার কথা, তাদের অনেকেই বঞ্চিত হয়েছে। ফলে সরকারের নেয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়ন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

মোট ৫০ লাখ পরিবারকে এ কর্মসূচীর আওতায় আনার কথা থাকলেও ৮৮ হাজার ১৯৪ পরিবার এখনো এর আওতায় আসতে পারেনি। অথচ এ সময়ের মধ্যে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭৭৩ টন চাল উত্তোলন করা হয়েছে এবং বিক্রি হয়েছে মোট ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৫ টন। অর্থাৎ, এখনো অবিক্রিত আছে ৭৮ টন চাল। অবশ্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, এ তিন মাসে মোট ৪৯ লাখেরও বেশি পরিবার এ কর্মসূচীর সুবিধা পেয়েছে। তিন মাসে যে ২ লাখ ১৮ হাজারের বেশি ভুয়া ফেয়ার প্রাইজ কার্ড বানানো হয় তার প্রায় সবগুলোই করে মাঠ পর্যায়ের সরকারদলীয় লোকরা। কার্ডপ্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল তোলা হলে এই ২ লাখ ১৮ হাজার কার্ড দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টন চাল। এই চাল কুচক্রীরা বাজারে কেউ ২০ টাকায় আবার কেউ ৩০ টাকায় বিক্রি করেছে। গড়ে ২৫ টাকা কেজি ধরলে ২০ হাজার টন চাল বিক্রি করে এই চক্র হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। 

ইতিমধ্যে দলীয় ডিলার বাতিল করা হয়েছে ১৩০টি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১০ লাখ টাকারও বেশি। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে খাদ্য অধিদফতরের আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জানা যায়, রংপুর বিভাগে ৫৭ হাজার ৮০২টি, গাইবান্ধায় জেলায় ১৫ হাজার ২৮২টি, রাজশাহী বিভাগে ১৯ হাজার ৮১২টি, ঢাকা বিভাগে ১৭ হাজার ৫১৫টি এবং ময়মনসিংহ জেলায় ১২ হাজার ৪৬৩টি ভূয়া কার্ড বানানো হয়েছে।

সরকারের নেয়া এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে যারা এ রকম দুর্নীতি করেছে তাদের কোনভাবে ছাড় দেয়া উচিত নয়। দুর্নীতিরও একটি সীমা থাকে। কিন্তু হতদরিদ্রদেরকে বঞ্চিত করে যারা এভাবে লাভবান হয়েছে তারা অবশ্যই দুর্নীতির পাশাপাশি মানবিকগত দিক থেকেও অপরাধী। যারা এর নেপথ্যে আছে তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের। পূর্বে অনেক ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন অপরাধ ও দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়ার অনেক নজির এ দেশে আছে। অপরাধীর কোন দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। যারাই প্রকৃত অপরাধী তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অপরাধীর সংখ্যা হয়ত হ্রাস পাবে।

সরকার হতদরিদ্রদের স্বল্পমূল্যে চাল বিক্রির প্রশংসনীয় কর্মসূচি সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়ন হোক, প্রকৃত ব্যক্তিরা এর সুফলভোগী হোক এটাই সবার প্রত্যাশা। পাশাপাশি, অপরাধী চক্র যাদের কারণে সরকারের প্রশংসিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। 
 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ