November 23, 2024 - 2:47 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeবিশেষ প্রতিবেদনশার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

spot_img

বেনাপোল প্রতিনিধি : যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পত্র দায়ের করেছেন অফিস সহায়ক রওশনারা। হাসপাতালের ৯ জন মেডিকেল অফিসারসহ ১৩২ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী তার বিরুদ্ধে একাত্মতা প্রকাশ করে গণস্বাক্ষর করেছেন।

ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে সর্বসময় অহেতুক দূর্ব্যবহার অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেন, যার যার দপ্তর তার নিজ খরচে চালাতে বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাওনা ঠিক মত দেন না, বিভিন্নভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন।

সর্বোপরি ৩ বছর চাকুরীকালীন সময়ে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ তার উপর অসন্তুষ্ট। এমতবস্থায় এমন কর্মকর্তার বদলীসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান অত্যাচারে অত্যাচারিত হওয়া সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অফিস সহায়ক রওশনারা স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রটি গত ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের মহাপরিচালক, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, যশোর সিভিল সার্জন, দূদক, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৭ এপ্রিল যশোর সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি টিম তদন্ত করেছেন। এছাড়া গত ৩ মে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনজুরুল মুরশিদ ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম সাথে নিয়ে তদন্ত করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) খুলনা মোঃ আক্তারুজ্জামান, সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রক) খুলনা অপর্ণা বিশ্বাস ও হেড ক্লার্ক মাসুম আহম্মেদ।

ডা. ইউসুফ আলী গত ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। এ হাসপাতালে যোগদানের পর পরই বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এসিআর ফরমে স্বাক্ষর বাবদ ৫ হাজার টাকা করে প্রতি বছর সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট থেকে জোর পূর্বক আদায় করে থাকে। বর্হিবিভাগের ৩ টাকার টিকেট ১০ টাকা করেন, বেডে ভর্তি বাবদ ৮ টাকার স্থলে ২০ টাকা। হাসপাতালের বেডে স্বল্প সংখ্যক রোগী থাকলেও প্রতিদিন বেশি রোগী ভর্তি দেখিয়ে ৩ বারের খাওয়ার টাকা ও নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহে সহযোগিতা করে। হাসপাতালের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত টেষ্ট ব্যবস্থা থাকা সত্বেও অবৈধ চুক্তিতে বিভিন্ন ক্লিনিকে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। ঠিকাদারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয়ের সময় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ১০/১২ হাজার টাকা বেতনে মাষ্টাররোলে কিছু কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তাদের পরিশোধ করে ৫/৬ হাজার টাকা। বেতন কম পাওয়ার প্রতিবাদ করলে তাদের চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাদের নামে বেতন ভাউচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।

করোনা ক্যাম্পেইনে একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও ৩ জন স্বেচ্ছাসেবীকে ১৭০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রদান করা হয়েছে ৫০০ টাকা। হামরুবেলা ক্যাম্পেইনে ২৭ জন টিকা প্রদানকারী প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা সন্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৯০০০ টাকা করে। করোনা ও ওমিক্রনকালীন বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন ডা. ইউসুফ আলী। মাহমুদা নামে এক নার্সের পা ভেঙ্গে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তার বেতন থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতিমাসে। প্রতিবছর যন্ত্রপাতি ও মালামাল ক্রয় বাবদ ভূয়া ভাউচার জমা করে টাকা উত্তোলন, হাসপাতাল অভ্যন্তরে একটি সড়ক, গ্যারেজ ও চালকের রুম নির্মাণে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নিলাম ছাড়াই পুরাতন এ্যাম্বুলেন্স ও বিভিন্ন ম্যাশিনারী যন্ত্রপাতি স্থানীয় কয়েক জনের কাছে কেটে কেটে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল অভ্যন্তরে লাইট পোষ্টের খুটি মেরামত করে নতুন খুটির বিল উত্তোলন করেছেন। পুরাতন কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত গ্রীল দিয়ে ফুল বাগানের বেষ্টনী গ্রীল নির্মান করে নতুন গ্রীলের বিল উত্তোলন করেছে।

তিনি যশোর শহরের ডালমিলের বিপরীতে আপন নিবাস নামে একটি আলীশান বাড়ি নির্মান করেছেন ও যশোর শহরে ২টি স্থানে জমি ক্রয়ের জন্য বায়নানামা করেছেন বলে সূত্র জানায়।

নাম প্রকাশে এক ব্র্যাক কর্মি জানান, করোনার টিকা পুশ করার জন্য ব্র্যাকের অর্থায়নে প্রতিদিন ৫০০ টাকা সম্মানী হিসাবে ৫ জন কে নিয়োগ দেয়া হয়। ২৫০ টাকা হারে তাদের সন্মানী দিয়ে অবশিষ্ট টাকা পকেটস্থ করেন এ কর্মকর্তা।

এছাড়াও যশোরের এনজিও ‘হিডো’ এর সুমাইয়া আক্তার, সাবিকুন্নাহার, খুশি, সম্রাট, সোহেলী আক্তার রিতু ও মিরা এই ৬ জন সদস্য নিয়োগ দিয়ে শার্শা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী ৫ জনের কাছ থেকে ৫ লাখ এবং সোহেলী আক্তার রিতুর কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।

শুধু তাই নয় এই ৬ জনের প্রত্যকের মাসিক বেতন ৮ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও তাদের বেতন দেয়া হয় ৬ হাজার টাকা করে। সুমাইয়া আক্তার, খুশি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলীকে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

অভিযোগকারী রওশনারা বলেন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী আমাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেন। আমাদের বাজেট, টিএডিএ, পোশাক ও ট্রেনিং এর কোন টাকা দেন না। টাকা চাইলে অপমান অপদস্থ্য করেন। তাই লিখিত অভিযোগ করেছি সব দফতরে। আমরা তার অপসারণ দাবি করছি।

শার্শা উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আবু তাহের বলেন, অফিস সহায়ক রওশনারার অভিযোগগুলি আমাদের কাছে সত্য প্রমানিত হওয়ায় আমরা শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলীর অপসারণ দাবি করে গণস্বাক্ষর করেছি। তিনি আমাদের লোকজনের সামনে অপমান অপদস্থ্য করেন।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি পূর্বে জ্ঞাত ছিলাম না। যখন জানতে পেরেছি আমার কাছে মনে হয়েছে সেই অভিযোগগুলি মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমি নরমাল ভিজিটে গিয়েছিলাম। খুলনা বিভাগীয় তদন্ত টিম তদন্ত করে গেছেন। আমাদেরও তদন্ত টিম তদন্ত চালাচ্ছে।

খুলনা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে এসেছি। সরেজমিনে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা সবার কাছ থেকে লিখিত নিয়েছি। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলেই আমরা রিপোর্ট জমা দিব।
সর্বশেষ আজ রোববার যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তদন্ত টিম শার্শা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সম্পন্ন করেন। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তদন্ত টিমের সভাপতি ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার নাজমুস সাদিক রাসেল, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রেহেনা নেওয়াজ ও অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ওয়াহেদুজ্জামান সাথে ছিলেন।

তদন্ত কমিটির সভাপতি ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার নাজমুস সাদিক রাসেল বলেন, আমরা তদন্ত করেছি। তদন্ত রিপোর্ট জেলা সিভিল সার্জন এর নিকট জমা দেয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিক বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ ছাত্রের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত: আরো ৩০...

বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহ জুড়ে কমেছে বাজার মূলধন ও টাকার পরিমাণে লেনদেন। সপ্তাহটিতে...

নতুন সিইসি ও ইসিদের শপথ আগামীকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য ৪ নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আগামীকাল রোববার দুপুরে শপথ নিচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম...

দেশের যেসব অঞ্চলে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শীতের মৌসুমি বায়ু প্রবেশের পর সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে সারাদেশে ভোরবেলায় কুয়াশা পড়া অব্যাহত রয়েছে।...

বৈরুতে দফায় দফায় বিস্ফোরণ, আরও ৬ মেডিক্যাল কর্মী নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লেবাননের রাজধানী বৈরুতে দফায় দফায় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বৈরুতের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এদিকে...

আরও বেড়েছে আলুর দাম, স্বস্তি নেই সবজিতেও

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : বাজারে আলুর দাম আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহে দুই দফা বেড়ে হয়েছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৭০ টাকা। আর...

‘দরদ’ দেখতে প্রেক্ষাগৃহে একঝাঁক তারকাসহ শাকিব খান

বিনোদন ডেস্ক : শাকিব খান অভিনীত ‘দরদ’ সিনেমা গত ১৫ নভেম্বর দেশের ৮৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। একইসঙ্গে চলছে আমেরিকা, মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশে। ২২...

এনার্জিপ্যাকের লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড গত ৩০ জুন, ২০২২ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানিটি...