November 29, 2024 - 1:56 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeজাতীয়বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ: প্রধানমন্ত্রী

spot_img

ইমা এলিস, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপিসহ আমরা এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি উদীয়মান বৃদ্ধির ইঞ্জিন। তিনটি মানদণ্ডেই যোগ্যতা অর্জন করে আমরা জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উন্নতশীল দেশের তালিকায় পৌঁছেছি। তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিশ্বব্যাংক সহ বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগীদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার (১ মে) সকালে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বোর্ডের সাথে অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় বক্তব্য রাখেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এরপর দুপুরে ডব্লিউবি’র প্রিস্টন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠেয় ‘বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের ৫০ বছরের প্রতিফলন’ বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয় এবং বাংলাদেশ কখনই তার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি।”

আজ (সোমবার) সকালে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের শিহাতা সম্মেলন কক্ষে নির্বাহী পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উপলক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আরো অধিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চাইছে। তিনি বলেন, “আমরা এখন আমাদের অংশীদারিত্বের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের মূল লক্ষ্যের বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমাদের সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার জন্য আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি”।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের মতো উন্নয়ন সহযোগীদের আমাদের ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমরা বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় সাপেক্ষ ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ অর্থ এ পর্যন্ত ব্যাংকের দেয়া ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান ও ঋণের অংশ। তিনি বলেন, “মানব পুঁজি গঠনে আমাদের কর্মক্ষমতা অবকাঠামো মেগা-প্রকল্পে আমাদের বিনিয়োগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ও কারিগরি সংস্থান দিয়ে ৬.১ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক পরিপক্কতার লক্ষণ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যুৎ সুবিধা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, “আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ সেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিশু কল্যাণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নগর উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের সুযোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংককে অর্থায়ন বাড়াতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, “সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের এসডিজি সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট ধারনা তুলে ধরবে। প্রধানমন্ত্রী পরে বিশ্বব্যাংকের ইস্ট ডাইনিং রুমে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, এমডি এবং ভিপিদের সাথে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর একটি উচ্চ পর্যায়ের মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।

পরে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেস্টন অডিটোরিয়ামে “বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছর বিষয়ে প্রতিফলন” শীর্ষক বক্তৃতা দেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এবং তার এসএআর ভিপি মার্টিন রাইজার ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং প্রদর্শনীর কিছু অংশ ঘুরে দেখেন।

বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরমেশ্বরন আইয়ার, পরিচালক জুনাইদ আহমেদ কামাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনা বিয়েরদে, বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আহমেদ কায়কাউস এবং অন্যান্য পরিচালকরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি নৃত্য পরিবেশনাও উপভোগ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা ও জ্ঞান তৈরিতে বিশ্বব্যাংককে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, “এটি উৎসাহজনক যে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু অর্থায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য প্রশমন ও অভিযোজন উভয় ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে তার নিজস্ব জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল থেকে ৮০০টি প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। তিনি বলেন, “মূল খাতগুলোতে আমাদের সবুজ পরিবর্তনকে দ্রুত এগিয়ে নিতে আমরা একটি মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা চালু করছি। শুধুমাত্র অভিযোজনের জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের ২৩০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। জুন মাসে প্যারিসে জলবায়ু অর্থায়ন শীর্ষ সম্মেলনকালে বিশ্বব্যাংক এই বিষয়ে আমাদেরকে ফলপ্রসূ আশ্বাস দেয়ার একটি সুযোগ পাবে।”

বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরদের সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা চলতি বছর ভূ-অর্থনীতিতে কিছু বড় পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। উত্তরণকালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এগুলোর প্রভাব রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি বিশ্বব্যাংকও ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।”

তিনি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর বঙ্গোপসাগরের কাছে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি অবস্থান।” আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কিছু অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এখন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি সহ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি উদীয়মান প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। তিনটি মানদ-েই যোগ্যতা অর্জন করে আমরা জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভ করেছি।

তিনি বলেন, “২০২২ সালে, আমাদের দারিদ্র্য হার ১৮.৭%-এ নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্যের দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৫.৬%-এ নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারী, ইউরোপে যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট বহু-মাত্রিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এই সব সাফল্য এসেছে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল সহিষ্ণুতা। আমরা গণহত্যার পর আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং ১৯৭১ সালে ধ্বংসের মুখে থাকা একটি অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তিনি বলেন, “আমাদের উন্নয়ন যাত্রা মসৃণ ছিল না। বাংলাদেশ বারবার সামরিক বাহনীর ক্ষমতা দখল, চরমপন্থী হুমকি এবং মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। গত দেড় দশকে, জাতি অবশেষে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, “এগুলি ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই সমান আচরণ নিশ্চিত করে। সুশাসনের জন্য জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন স্তরে দায়বদ্ধ।” রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বব্যাংক অনুদান সহায়তা বাড়িয়েছে। তাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে, তারা প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে। আমি আস্থাশীল যে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম সঠিক রাজনৈতিক পরিবেশে আমাদের জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা দেশের দায়িত্বশীল ও অবদানকারী সদস্য হিসাবে আমাদের ভূমিকা আরও প্রসারিত করতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’ এই বৈদেশিক নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতি অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক দিকগুলির বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে একটি প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়ন যাত্রায় আমাদের সাথে যোগ দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরদের সাথে এই বৈঠক হওয়াটা খুবই আনন্দের। আমি এখানে বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছি। আমরা এই বছর ভূ-অর্থনীতিতে কিছু বড় পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। উত্তরণকালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এগুলোর প্রভাব রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি বিশ্বব্যাংকও ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।

বিশিষ্ট পরিচালকগণ,
বাংলাদেশ হল বিশ্বের বৃহত্তম সক্রিয় ব-দ্বীপ যা বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর-বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক নামে পরিচিত এর কেন্দ্রস্থলে একটি অবস্থান। ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপিসহ আমরা এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি উদীয়মান বৃদ্ধির ইঞ্জিন। তিনটি মানদণ্ডেই যোগ্যতা অর্জন করে আমরা জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে স্নাতক হয়েছি। ২০২২ সালে আমাদের প্রধান গণনা দারিদ্র্য ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ -এ নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্যের তীব্র হ্রাস ৫ দশমিক ৬ শতাংশতে নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারী, ইউরোপে যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই সবই ঘটেছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ এর স্থিতিস্থাপকতা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন ১৯৭১ সালে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি গণহত্যার পর ধ্বংসের মুখে থাকা অর্থনীতির সাথে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকও সাড়া দেয় এবং এভাবে আমাদের অংশীদারিত্ব শুরু হয়।

আমাদের উন্নয়ন যাত্রা মসৃণ থেকে অনেক দূরে। বাংলাদেশ বারবার সামরিক দখল, চরমপন্থী হুমকি এবং মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। গত দেড় দশকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে জাতি অবশেষে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

এই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জনগণের মুক্তির আহ্বানে আমরা সত্য রয়েছি। আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জাতীয়তাবাদকে ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে এবং সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি ন্যায়পরায়ণ সমাজের কল্পনা করে। এগুলো ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই সমান আচরণ নিশ্চিত করে। শাসনের জন্য দায়ী জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন স্তরের জবাবদিহির অধীন।

বিশিষ্ট গভর্নরগণ,
বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশে ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে ইউএসডি ১৫ বিলিয়ন রয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত ব্যাঙ্কের দেওয়া ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান ও ঋণের অংশ। বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির বৃদ্ধির সুযোগ এবং শোষণ ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ কখনোই তার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি, বা তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি।
মানব পুঁজি গঠনে আমাদের শক্তিশালী কর্মক্ষমতা অবকাঠামো মেগা-প্রকল্পে আমাদের বিনিয়োগের সাথে মিলে যায়। আমাদের নিজস্ব আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সংস্থান দিয়ে ৬.১ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক পরিপক্কতার লক্ষণ।
তিনি বলেন আমি দুঃখিত যে বহিরাগত চাপের কারণে বিশ্বব্যাংক এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে এসেছে।
আমরা এখন আমাদের অংশীদারিত্বের ভবিষ্যত দেখতে চাই। বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী থাকতে হবে।

বাংলাদেশে, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যুতের অ্যাক্সেস এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে চিত্তাকর্ষক অর্জন করেছি। আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ, মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিশু কল্যাণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নগর উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান নির্মাণের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই।

আমাদের জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য তার রেয়াতমূলক অর্থায়ন বৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রয়োজন। সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট ধারণা শেয়ার করার অপেক্ষায় রয়েছি। বিশ্বব্যাংককে টেকসই উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা ও জ্ঞান তৈরিতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।

এটা উৎসাহজনক যে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু অর্থায়নের উপর অতিরিক্ত জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য, আমাদের প্রশমন এবং অভিযোজন উভয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রয়োজন। ২০০৯ সাল থেকে, আমরা আমাদের নিজস্ব ট্রাস্ট ফান্ড থেকে 800টি প্রকল্পে অর্থায়ন করেছি। আমরা একটি মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা চালু করছি যাতে গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমাদের সবুজ পরিবর্তন দ্রুত এগিয়ে যায়। শুধুমাত্র অভিযোজনের জন্য আমাদের ২০৫০ সালের মধ্যে ইউএসডি ২৩০ বিলিয়ন লাগবে। জুন মাসে প্যারিসে জলবায়ু অর্থায়ন শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বব্যাংকের জন্য আমাদের এই বিষয়ে কিছু অর্থপূর্ণ আশ্বাস দেওয়ার একটি সুযোগ হবে।

বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে নিযুক্ত রয়েছে। আমাদের সরকার একত্রে একটি ‘ডিজিটাল’ তৈরি করে আমাদের জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌসিক বসু অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এবং সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বৈশ্বিক ঋণদাতা ভিপি মার্টিন।

পরে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের ইস্ট ডাইনিং রুমে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট, এমডি এবং ভিপিদের সাথে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শেষে একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক মধ্যাহ্নভোজ সভায় যোগ দেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে ডব্লিউবি সদর দপ্তরে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এবং এর এসএআর ভিপি মার্টিন রাইজার ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সাথে প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে একটি চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন এবং প্রদর্শনীর কিছু মূল চিত্র ঘুরে দেখেন। পরে শেখ হাসিনা একটি নৃত্য পরিবেশন প্রত্যক্ষ করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ডব্লিউবি’র প্রোগ্রামে যোগ দিতে ২৮ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান। ওয়াশিংটন ডিসিতে তাঁর ছয় দিনের সফরের পর শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য ও কমনওয়েলথ দেশের রাজা ও রাণী হিসেবে চার্লস তৃতীয় এবং তার পত্মী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৪ মে লন্ডনের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন।

এর আগে ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ চার্টার্ড ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি-১৪০৩) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) টোকিও’র হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

জাপানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং বিমানবন্দরে তাঁকে স্ট্যাটিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তাঁর জাপান সফরকালে ঢাকা ও টোকিও কৃষি, মেট্রো রেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্ক, মেধা সম্পদ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি এবং সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে আটটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ২৬ এপ্রিল শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেন।

২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য জাপানের চার নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ হস্তান্তরের পাশাপাশি একটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন এবং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

টোকিও সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি এবং জাইকা, জেট্রো, জেবিআইসি, জেবিপিএফএল ও জেবিসিসিইসি’র নেতাদের সঙ্গে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জাপানের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের স্ত্রী আকি অ্যাবে এবং জাপানের এক স্থপতি তাদাও আন্দোর সাথেও সাক্ষাত সাক্ষাত করেন। আগামী ৯ মে প্রধানমন্ত্রী লন্ডন হয়ে ঢাকায় ফিরবেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

মানিকগঞ্জে উপদেষ্টার প্রেস সচিবের নাম ভাঙ্গিয়ে সাংবাদিককে ডাক্তারের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্তরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ কিউ এম আশরাফুল হকের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলমের...

বেগমগঞ্জে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া, আটক ৩

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার সময় তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে...

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৫২২তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

কর্পোরেট ডেস্ক: সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-এর পরিচালনা পর্ষদের ৫২২তম সভা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক...