শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধতো হচ্ছেই না বরং বেড়ে চলেছে অব্যাহতভাবে। শিশুর প্রতি নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটছে অহরহ। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, এ বছরের প্রথম দেড় মাসে সারা দেশে বিভিন্নভাবে ৪৫ শিশু খুন হয়েছে। এছাড়াও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ সময়ের মধ্যে গড়ে প্রতিদিন একটি করে শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
শিশু হত্যার কারণ হিসেবে দেখা যায়, পারিবারিক বিরোধ, সন্ত্রাসী সংগঠন দ্বারা শিশু অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়কারীদের হাতে হত্যা। এছাড়া পরিবারের জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের কারণে প্রতিশোধ হিসেবে প্রায়ই শিশুদের লক্ষ্য করা হচ্ছে। এক পরিবার আরেক পরিবারের ্উপর প্রতিশোধ হিসেবে শিশুদের বেছে নিচ্ছে কিছু নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে শিশুদের জন্য এ সমাজ হয়ে উঠবে একেবারেই অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ।
বাবা-মায়ের দ্বারা শিশু সন্তান হত্যার ঘটনাও ঘটেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। গত দেড় মাসে বাবা-মায়ের হাতে সাত শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাবা-মায়ের কাছে যেখানে শিশুরা নিরাপদে থাকার কথা সেখানে কোথাও কোথাও বাবা-মায়ের কাছেই হয়ে উঠছে অনিরাপদ। এ পরিস্থিতে শুধু আইনের প্রয়োগ ও আরো কঠোর আইন প্রণোয়ন করাটাই একমাত্র সমাধান নয়। এর জন্য প্রয়োজন মানুষের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা।
শিশুরা সবসময় নিষ্পাপ। বড়দের দ্বন্দ্বে কেনই বা ওদের জীবন দিতে হবে, কেন পারিবারিক কলহের জেরে তাদের হত্যা করা হবে, কেনই বা এই শিশু বয়সে ওদের গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে হবে – এসব সমস্যার কার্যকরি সমাধানের উপায় বের করা একান্ত জরুরি। শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রচলিত যে আ্ইন রয়েছে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
পারিবারিক বিরোধের মাঝে কখনও শিশুদেরকে জড়ানোটা বিবেকবান কাজ নয়। শিশুকে সবসময় এসব বিরোধের বাইরে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে জনগণের দায়িত্ব বেশি। পারিবারিক বিরোধ সমাধানে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে সহিংসতা বা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া নয়।
অপরাধ যেসব চক্র রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। জঙ্গিবাদের মতই এ সমস্যাকে গুরুতর মনে করতে হবে। যারা শিশু অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে তাদেরকে অবিলম্বে খুঁজে বের করে আ্ইনের আওতায় আনতে হবে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সেই শিশুদের জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। সরকারের পাশাপাশি দেশের সকল স্তরের মানুষে দায়িত্ব-এ সবের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। প্রতিটি শিশুই নিরাপদে বেড়ে উঠুক – এমন প্রত্যাশা হোক আমাদের সকলের।