নিজস্ব প্রতিবেদক : যৌক্তিক কোন কারন ছাড়াই কৃত্রিমভাবে টানা দর বাড়ানো হচ্ছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার। কোম্পানির যোগসাজোশে কারসাজিতে মেতে উঠেছে ভূয়া আর্থিক হিসাব দেখানো কোম্পানিটির। যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেরও (বিএসইসি) নজরে এসেছে।
দেখা গেছে, গত ১৯ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৪২.৩০ টাকা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে ৩ এপ্রিল লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৯.৮০ টাকায়। অর্থাৎ গত ১০ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৪৭.৫০ টাকা বা ১১২ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দাম বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এজন্য ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ব্যবসার ইতিহাস খুব একটা ভালো নয়। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এমনকি চলমান হিসাব বছরেও কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ার কারসাজির জন্য আগের বছর বিতর্কিত ১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। যারা সর্বশেষ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে ভূয়া তথ্যও প্রকাশ করেছে।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে কোম্পানির প্রধান অফিস ও কারখানায় যথাক্রমে নগদ ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ও ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা উল্লেখ করেছে। তবে নিরীক্ষা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই অর্থের বিশ্বাসযোগ্য ও পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। যাতে কোম্পানি নগদ অর্থ বেশি দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
কোম্পানিটিতে গত অর্থবছরের শেষে গ্রাহকদের কাছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে দেখানো হয়েছে। যা কয়েক বছর ধরেই আদায় হচ্ছে না। এই অবস্থায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিগত বছরে কিছু পরিমাণ ইমপেয়ারম্যান্ট লস দেখিয়েছে। কিন্তু নিরীক্ষকের মতে, প্রকৃতপক্ষে ওই পাওনা অর্থের মধ্যে একটি বড় অংশ আদায় হবে না। এতে করে কোম্পানির লোকসান হবে। যা ইমপেয়ারম্যান্ট লসের তুলনায় অনেক বেশি।
এমন একটি ভূয়া কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছে টানা। যা অস্বাভাবিক বিবেচনায় গত ২৩ ও ২৮ মার্চ দু-দফায় ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। কোম্পানিটিকেও নোটিশ পাঠায় ডিএসই। ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানায়, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে, তার জন্য তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
এ বিষয়ে বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, কারসাজির প্রাথমিক কোনো প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারসাজিতে কেউ জড়িত থাকলে, বাজারের স্বার্থে কাউকে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। কমিশন এ বিষয়ে কঠোর।