November 23, 2024 - 4:12 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeধর্ম ও জীবনরোজা ভেঙে যায় যেসব কাজ করলে

রোজা ভেঙে যায় যেসব কাজ করলে

spot_img

নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র রমজানে মাসে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা রেখে যেসব কাজ করলে রোজা ভেঙে যায় সেসব কারণ ও গুনাহের কাজগুলো হলো-

আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আর এখন তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করতে পারো এবং আল্লাহ যা কিছু তোমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করেছেন বা দান করেছেন তা আহরণ কর। আর ভক্ষণ করো, পান করো যতক্ষণ না রাতের কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্কার দেখা যায়। এরপর তোমরা রাত পর্যন্ত রোজাকে পূর্ণ কর।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ১৮৭)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে তা পরিপূর্ণভাবে উল্লেখ করেছেন। এখানে রোজা ভঙ্গের কারণগুলো উল্লেখ করা হলো-

প্রথম কারণ: স্ত্রী সহবাস করা

সহবাস করা রোজা ভঙ্গের বড় কারণ এবং রোজা অবস্থায় সবচেয়ে বড় গুনাহের কাজ। এতে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।

এই অবস্থায় রোজা ভঙ্গের ফলে ৫টি জিনিস সংঘটিত হয়-

১. কবিরা গুনাহ হয়; আর এর ফলে তাকে তওবা করতে হবে;

২. রোজা বাতিল হয়ে যাবে;

৩. তাকে ঐ দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে;

৪. ঐ দিনের রোজা (রমজানের পরে) ক্বাযা করতে হবে;

৫. বৃহৎ কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর কাফ্ফারা হলো শরিয়ি ওজর ছাড়া একাধারে দুই মাস রোজা রাখা অথবা একজন গোলাম আজাদ করা কিংবা ৬০ জন মিসকিনকে একবেলা খাবার খাওয়ানো।

হাদিসের গ্রন্থ মুসলিমে এসেছে-

‘এক লোক রমজানে তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে ফতওয়া জানতে চাইল? তখন তিনি বললেন: তুমি কি কৃতদাস আজাদ করতে পারবে। সে উত্তরে বললো জ্বি-না। তখন তিনি বললেন, তুমি কি একাধারে দুমাস রোজা রাখতে পারবে। (একাধারে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাওম রাখা অন্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে) সে বলল: জ্বি-না। তখন আল্লাহর রাসুল বললেন, তাহলে তুমি ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়াও।’ (বুখারি ১৯৩৬; মুসলিম ১১১১)

দ্বিতীয় কারণ: ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত ঘটানো

চাই তা চুম্বন, স্পর্শ বা হস্তমৈথুন অথবা কামভাবসহ এমন কিছু করার মাধ্যমে হোক যা বীর্যপাত ঘটায়, এমন হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ এগুলো এমনসব কাজ যেগুলো পরিত্যাগ করা ছাড়া রোজা সংঘটিত হতে পারে না। যেমন হাদিসে কুদসীতে এসেছে-

‘(আল্লাহ তা‘আলা বলেন) রোজা পালনকারী আমার কারণে তার পানাহার ও কামভাব থেকে বিরত থাকে।’ (বুখারি ১৮৯৪)

আর চুম্বন বা স্পর্শ করাতে যদি বীর্যপাত না হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন-

‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা অবস্থায় স্ত্রী চুম্বন করতেন এবং রোজা অবস্থায় তিনি স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। কিন্তু তিনি তাঁর কামভাব তোমাদের চেয়ে অধিক নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলেন।’ (বুখারি ১৮৯৪, মুসলিম ১১৫১)

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত ওমর ইবন আবু সালমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন-

রোজা পালনকারী কি চুম্বন করতে পারবে? তখন আল্লাহর নবি বললেন, একে জিজ্ঞাসা কর অর্থাৎ উম্মে সালমাকে (যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী ছিলেন) এরপর উম্মে সালমা বলে দিলেন, আল্লাহর রাসুল এমনটি করতেন। তখন তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ কি আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করে দেননি? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শুনে রাখ! আল্লাহর কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের চেয়ে অধিক তাকওয়ার অধিকারী এবং আমি আল্লাহকে অধিক ভয় করি।’ (বুখারি ১৯২৭, মুসলিম ১১০৬)

তৃতীয় কারণ: পানাহার করা

পানাহার করা বলতে, যে কোনো প্রকার খাদ্য বা পানীয় দ্রব্য মুখ বা নাক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করানোকে বুঝায়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

‘তোমরা পানাহার কর, যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়। এরপর রোজাকে রাত পর্যন্ত পূর্ণ কর।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ১৮৭)

আর নাক দিয়ে কিছু প্রবেশ করানো পানাহারের মতোই। কারণ, হজরত লাকিত ইবনে সুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘তুমি অজুর সময় নাকে ভালোভাবে পানি পৌঁছিয়ে দাও অবশ্য রোজা পালনকারী হলে এমন করবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ ৪/৩২, ৩৩, ২১১; আবু দাউদ ২৩৬৬; তিরমিজি ৭৮৮; নাসাঈ ১/৮৭)

চতুর্থ কারণ: পানাহারের অনুরূপ বস্তু গ্রহণ করা

এটা দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক. রোজা অবস্থায় রক্তপাত কিংবা অন্য কোনো কারণে রক্তে প্রয়োজন হলে যদি রক্ত দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কেননা পানাহারের পুষ্টির চূড়ান্ত পর্যায় হলো রক্ত। রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে সে-ই পুষ্টি অর্জিত হয়।

দুই. যেসব ইনজেকশন খাদ্য ও পানীয়ের বিকল্প, তা প্রয়োগ করা হলেও সিয়াম ভেঙ্গে যাবে। যদিও তা বাস্তবে খাদ্য ও পানীয় নয়, কিন্তু খাদ্য-পানীয়ের বিকল্প। সুতরাং তা খাদ্য ও পানীয়ের বিধান রাখবে।

আর যে ইনজেকশন খাদ্যের পরিপূরক নয়; তা দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না। যদিও ইনজেকশন মাংসপেশী কিংবা রগে নেয়া হয়। এমনকি কণ্ঠনালীতেও যদি এর প্রভাব যায় তাহলেও রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা তা খাদ্যও নয় পানীয়ও নয়; তাছাড়া তা খাদ্য বা পানীয়ের অর্থেও পড়ে না। সুতরাং এর দ্বারা খাদ্য বা পানীয়ের বিধান প্রযোজ্য হবে না।

পঞ্চম কারণ: সিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘সিঙ্গা যে লাগায় ও যে সিঙ্গা গ্রহণ করে- উভয়ের রোজা ভঙ্গ হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ ৫/২৭৭, ২৮০, ২৮২, ২৮৩; আবু দাউদ ২৩৬৭; ইবন খুযাইমাহ ১৯৬২, ১৯৬৩; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪২৭)

ষষ্ঠ কারণ: ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা

বমি হচ্ছে, পাকস্থলীতে খাবার বা পানীয় যা কিছু রয়েছে তা মুখ দিয়ে বের করে দেওয়া। বমি দ্বারা রোজা নষ্ট হয়। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

‘যে ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃত বমি হলো, তার ওপর কোনো কাজা নেই। তবে যে ইচ্ছাকৃত বমি করল, সে যেন কাজা করে নেয়।’ (তিরমিজি ৭২০; আবু দাউদ ২৩৮০; মুসনাদ আহমদ ২/৪৯৮, ১০৪৬৩)

ইচ্ছাকৃত বমি করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। চাই পেট চেপে বমি করুক, কিংবা কণ্ঠনালীতে কিছু প্রবেশ করিয়ে বমি করুক কিংবা এমন বস্তুর ঘ্রাণ নিল, যাতে বমি আসে, অথবা এমন বস্তুর দিকে ইচ্ছে করে নজর দিল যার কারণে বমি হয়। এসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

সপ্তম কারণ: হায়েয তথা ঋতু বা নেফাস তথা সন্তান প্রসবের রক্ত বের হওয়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘নারীর যখন হায়েজ (ঋতুস্রাব) হয়, তখন নামাজ আদায় করে না এবং রোজাও পালন করে না, তা নয় কি?’(বুখারি ৩০৪)

যখন কোনো নারীর হায়েজ হয় কিংবা নেফাসের রক্ত দেখা যায় তখন তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। চাই সে দিনের শুরুতে দেখুক কিংবা শেষভাগে দেখুক। এমনকি যদিও তা সূর্য ডোবার এক ক্ষনিক আগেও হয়। আর যদি সে অনুভব করে যে রক্ত বের হওয়া শুরু হচ্ছে, কিন্তু সূর্য ডোবার পরই শুধু সেটা বের হয়, তবে তাতে তার রোজা শুদ্ধ হয়ে যাবে।

সুতরাং আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে যত্নবান হও এবং পাপাচার ও হারাম থেকে বিরত থাকা জরুরি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানি ২টি হলো-গ্লোবাল...

জেড ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঢাকা স্টক...

পুঁজিবাজারের ২ কোম্পানির এজিএমের তারিখ পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাহি অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল লিমিটেড ও বিবিএস কেবলস পিএলসির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ পরিবর্তন করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ...

শরীয়াহ পরিপালনে ইউনিয়ন ব্যাংক বদ্ধপরিকর

কর্পোরেট ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকিং এমন এক ব্যাংক ব্যবস্থা যেখানে সকল লেনদেনে সুদ নিষিদ্ধ।ব্যাংকিং সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ইসলামী শরীয়ার আলোকে পরিচালিত হয়। ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি....

সাউথইস্ট ব্যাংক, টাইনি টটস ও সামার ফিল্ড স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কর্পোরেট ডেস্ক : সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি. টিউশন ফি কালেকশন সার্ভিস, পে-রোল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকের হেড অফিসে টাইনি টটস ও...

বরগুনায় প্রান্তিক মানুষের মাঝে এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ

কর্পোরেট ডেস্ক : বরগুনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নিন্ম আয়ের প্রান্তিক মানুষদের মাঝে প্রকাশ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অর্থায়ন তহবিল কর্মসূচির আওতায়...