দেশে মানসম্মত লুব্রিক্যান্ট পণ্য উত্পাদন ও বাজারজাতের পাশাপাশি আঞ্চলিক বাজারে রফতানি করছে লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড। নিজেদের লুব্রিক্যান্ট ব্র্যান্ড বিএনও, টেস্টিং ল্যাব সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি কোম্পানির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ।
প্রশ্ন: স্থানীয় লুব্রিক্যান্ট ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করতে আপনার চেষ্টা অনেক দিনের। আপনার উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
মোহাম্মদ ইউসুফ: নিজ জেলা নোয়াখালীতে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর আমি চট্টগ্রাম চলে আসি এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ভর্তি হই। সেখানে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স করি। উচ্চশিক্ষা সমাপ্তির পর চট্টগ্রামের একটি কলেজে পার্টটাইম প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম কিছুকাল। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭৬ সালে আমি যৌথভাবে হোমল্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করি। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সেখানে অংশীদার হিসেবে ছিলাম। ১৯৭৬ সালেই লুব্রিক্যান্টসের ব্যবসায় যুক্ত হই এবং গ্রিজ ও লুব্রিক্যান্ট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে থাকি। সুযোগ পেলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমি লুব্রিক্যান্ট, পেট্রোকেমিক্যাল-সম্পর্কিত কর্মশালায় অংশ নিয়েছি। দেশে প্রথমবারের মতো লুবিক্যাটিং গ্রিজ উত্পাদনের জন্য গ্রিজ হাউজ লিমিটেড কোম্পানি করি। তখন বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলাম। এরপর একসময় লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড গঠন করি। এ কোম্পানির চেষ্টায় দেশে বেসরকারি খাতে প্রথম লুব্রিক্যান্ট ব্লেন্ডিং প্লান্ট হলো।
প্রশ্ন: লুব-রেফের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে বলুন?
মোহাম্মদ ইউসুফ: লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য লুব্রিক্যান্ট প্রস্তুতকারক। সর্বোচ্চ মানের লুব্রিক্যান্ট পণ্য সরবরাহকারী হিসেবে আমরা এরই মধ্যে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। এখন আমরা ৩৫ ধরনের পেট্রো রাসায়নিক পণ্য তৈরি করছি। কোম্পানির ব্যবসার পাশাপাশি টেকসই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আমাদের পণ্য এখন আঞ্চলিক বাজারেও বিক্রি হচ্ছে।
লুব-রেফের সবচেয়ে বড় শক্তি এর ল্যাবরেটরি। উন্নত বিশ্বের সেরা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ব্যয়বহুল সব যন্ত্রপাতি এনে আমরা এ পরীক্ষাগার স্থাপন করেছি। এটি অনেক প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল স্বীকৃতি পেয়েছে। নিজেদের পণ্যের সেরা মানটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের টেকনিশিয়ানরা এখানে সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে আধুনিক টেস্টিং ল্যাব হিসেবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও আমরা টেস্টিং সেবা দিচ্ছি।
আমরা এএসটিএম ইন্টার ল্যাবরেটরি ক্রস-চেক প্রোগ্রামের নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। পেট্রোকেমিক্যাল ওয়ার্ল্ডের সর্বাধুনিক সংযোজনগুলো আমাদের এখানে পরিচয় করিয়ে দেয়ার একটা চেষ্টা আমার মধ্যে সবসময়ই থাকে।
প্রশ্ন: স্থানীয় লুব্রিক্যান্ট বাজার ও ইন্ডাস্ট্রির সম্ভাবনা কতটা?
মোহাম্মদ ইউসুফ: যন্ত্রের প্রসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত এক-দুই দশকে দেশে লুব্রিক্যান্টের চাহিদা অনেক বেড়েছে। আগামীতে এ চাহিদায় বড় একটি উল্লম্ফনও দেখতে পারি আমরা। কারণ রেলপথ, বিদ্যুেকন্দ্র, সড়ক পরিবহন, জাহাজ, উড়োজাহাজ চলাচল, ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা প্রতিটি ফিল্ডেই প্রচুর লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদার বিপরীতে আমরা আমাদের ব্র্যান্ডটিকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ল্যাব, উত্পাদন ব্যবস্থা ও পণ্যের মানের কারণে আমরা বাজারে এরই মধ্যে সুনাম অর্জন করেছি।
প্রশ্ন: আপনার কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য রোড শো করতে যাচ্ছে। ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাবেন?
মোহাম্মদ ইউসুফ: ব্যাপক সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা নতুন কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এ অগ্রযাত্রার অংশ হতে পারেন। এই মুহূর্তে আমি বেইজ অয়েল রিফাইনারি, ট্যাংক টার্মিনাল, বার্থ অপারেটিং জেটি, বিটুমিন প্লান্ট, হাইড্রোজেন প্লান্ট ও পাওয়ার প্লান্টের কথা উল্লেখ করতে পারি।
আপনারা জানেন, বেইজ অয়েল হলো লুব্রিক্যান্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল। এ উপাদান ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্রেডের লুব্রিক্যান্ট প্রস্তুত হয়। বছরে ৭০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন বেইজ অয়েল রিফাইনারিটি হয়ে গেলে দেশের লুব্রিক্যান্ট ইন্ডাস্ট্রিতে একটি নতুন মাইলফলক যোগ হবে। পরিবেশ রক্ষা ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অনেক টেকনিশিয়ান তৈরি হবে।
সৌজন্যে: বণিক বার্তা