নিজস্ব প্রতিবেদক : জাপানি বংশোদ্ভূত দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে মায়ের জিম্মায় রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দুই শিশুকে জাপানে নিয়ে যেতে বাধা নেই মা নাকানো এরিকোর।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারক দুরদানা রহমান এ রায় ঘোষণা করে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি বাদী ও বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজ রোববার (২৯ জানুয়ারি) তারিখ ধার্য করেন। মায়ের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন শিশির মনির। বাবার পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন নাসিমা আক্তার।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ওই দুই জাপানি শিশু ও তাদের মা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। পরদিন ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে জাপানি দম্পতির বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা জাপান ফিরে যাওয়ার আকুতি জানায়।
জেসমিন মালিকা বলে, ‘আমি জাপান যেতে চাই, আমাকে বলা হয়েছিল যে আমরা আমেরিকায় যাব। কিন্তু আমরা আমেরিকায় যেতে পারব না। দুই বছর থেকে আমরা এখানে আছি। আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। আমার মায়ের বিষয়ে আমাকে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছিল। আমি নির্ভরযোগ্য রিসার্চ করেছি। আমি সব জানতে পেরেছি। আমার স্কুল জাপানে, আমার সংস্কৃতি জাপানে, আমার বন্ধুবান্ধব জাপানে এবং আমার সবকিছু জাপানে। আমি এখানে কীভাবে থাকব? আমি সেখানে যেতে চাই।’
এ সময় জেসমিন মালিকার সঙ্গে তার জাপানি মা এরিকো নাকানো ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এর পর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন ওই জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতা করতে বলেন বিচারক। কিন্তু, ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা আক্ষেপ প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন।
দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ। এর পর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।
এদিকে, সন্তানসহ পালানোর চেষ্টার অভিযোগে জাপানি মা এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে সন্তানদের বাবা ইমরান শরীফ গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: