আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে জাতীয়তাবাদী নেতা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র শুরু হয়। ১৯২৩ থেকে ১৯৩৮ সাল, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেড় দশকের শাসনকালে একটি আধুনিক, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতি গঠনে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার ঘটান কামাল পাশা। এ কারণে তাকে ‘আতাতুর্ক’ অর্থাৎ ‘তুরস্কের জনক’ উপাধি দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে তার শাসন শুরুর ১০০ বছর উদযাপন হবে।
২০১০ সালে তুরস্কের কর্তৃত্ববাদি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, দেশটির জিডিপি ২ ট্রিলিয়নে উন্নীত করান এবং ২০২৩ সালের মধ্যে অর্থনীতিকে বিশ্বের দশটি বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ৮০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি এবং একটি দুর্বল মুদ্রা, উভয়ই এরদোয়ানের নিজস্ব নীতির কারণে সৃষ্ট, যা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। একই সঙ্গে ১৯তম স্থানে আটকে আছে দেশটির অর্থনীতি। ডলারের পরিপ্রেক্ষিতে, জিডিপিও কমেছে। ২০১৩ সালে ৯৫৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২১ সালে ৮১৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে জিডিপির আকার।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে এরদোয়ানের আগামী নির্বাচনে সম্ভাবনা কতখানি তা তুলে ধরা হয়েছে। দেশটিতে আগামী জুনে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থনীতি, সেই সঙ্গে দুর্নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক অখণ্ডতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে তুরস্কের মানুষের। বিরোধীরা এখনও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তাদের প্রার্থীর বিষয় সামনে আনেননি। তবে জরিপ বলছে, এরদোয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে হেরে যাবেন।
এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) এবং তার জোটের অংশীদার, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পার্টি, বিরোধী জোটের কাছে পরাজিত হওয়ার পথে। বলা হচ্ছে, এরদোয়ানের রাজনৈতিক ‘মৃত্যুবাণী’ আগেও লেখা হয়েছে, তবে তার মিত্ররা স্বীকার করেন এই নির্বাচন তার জন্য সবচেয়ে কঠিন হবে।
দেশটির অনেকে মনে করছেন এরদোয়ান পরাজয় এড়াতে চরম ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারেন। তুরস্ক রাশিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে নতুন বিনিয়োগের প্রস্তাব আসছে। এরই মধ্যে একটি ঋণ ক্ষমা কর্মসূচি চালু করেছে এবং নাটকীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়েছে এরদোয়ান সরকার।
এরদোয়ান হয়তো সিরিয়ায় কুর্দি বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিংবা আকাশসীমা ও সামুদ্রিক অধিকার নিয়ে পুরোনো শত্রু গ্রিসের সঙ্গে কূটনৈতিক চালে পরিবর্তন আনবেন। গ্রিসের নির্বাচনও কিনারে, সেকারণে বাস্তবে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
তবুও এটি এরদোয়ানকে রক্ষা করতে পারে না। বাস্তবতা হলো, অক্টোবরের মধ্যে, যখন আনুষ্ঠানিক শতবর্ষ উদযাপন হবে, এরদোয়ান যুগ শেষ হয়ে যাবে। তবে এটি যেন না ঘটে সেকারণে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেকোনো মূল্যে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে চান তিনি। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট