জাকির হোসেন আজাদী: “হলুদ গাঁদা নয় নয়তো স্বর্ণলতা” এমন অসাধারণ কথা সমৃদ্ধ গান গাইলেন সময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রুবিয়া মল্লিকা। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার সংবাদের পর বিটিভির “অন্তরের গান’ অনুষ্ঠানে গানটি প্রচার হবে। গানটির কথা লিখেছেন আবুল কালাম আজাদ ও সুর করেছেন ইউনূস আলী মোল্লা।
সঙ্গীত শিল্পী রুবিয়া মল্লিকা আধুনিক বাংলা গানের প্রতিভাময়ী এক শিল্পীর নাম। উচ্চাঙ্গসংগীতের সারেগামাপা যার নখদর্পণে। ক্লাসিক্যাল গানের সাধনায় যিনি সকাল-সন্ধ্যা ডুবে থাকেন সুরের মূর্ছনায়। সময়ের গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে নিজের মতো করে নিয়মিত রেওয়াজ করে থাকেন তিনি।
তিনি কেবল গানের জনপ্রিয় তারকা হতে চান না। তিনি একজন প্রকৃত শিল্পী হতে চান। তিনি তথাকথিত ইউটিউব শিল্পীর কাছে সংগীত শিক্ষা নেননি বরং তিনি গানে তালিম নিয়েছেন দুই বাংলার গুণী সংগীতবোদ্ধাদের কাছ থেকে। শিল্পী মল্লিকা বয়সে তরুণ হলেও গানের জগতে তার পথচলা সুদীর্ঘ দিনের। এখনকার ফেইসবুক বা ইউটিউব যুগের শিল্পীদের মত গতানুগতিক নন তিনি। তাঁর মতে লাখ লাখ ভিউয়ার্স মানেই বড় শিল্পী হয়ে যাওয়া নয় বরং সংগীতের গণিত সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যিনি নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন সেই প্রকৃত শিল্পী। যারা মঞ্চের এপাশ থেকে এপাশ পর্যন্ত দৌড়ঝাপ করে গান করেন না। তারা তাদের গায়কি আর সুরের মূর্ছনায় দর্শক শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেন।
আজকাল শিল্পী নামধারী কতিপয় উঠতি গায়ক-গায়িকার মধ্যে দাপাদাপির কারণে কনসার্টে গান করার পরিবেশ নষ্ট হয়। ঠিক এ কারণেই উপযুক্ত পরিবেশ ছাড়া কোথাও গান করতে যান না মল্লিকা। রুচিশীল পরিবেশ ও রেডিও-টেলিভিশনের নিয়মিত গানের অনুষ্ঠান আর একক সংগীতানুষ্ঠানেই মঞ্চে গান করেন তিনি। তার মতে, অর্থের জন্য শিল্পীসত্তা এবং নিজস্ব স্বকীয়তা বিকিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এসব করলে নিজের শিল্পবোধের প্রতি অসম্মান করা হয়।
কথা প্রসঙ্গে শিল্পী মল্লিকা জানান, করোনা পরিস্থিতিতেও সংগীত সাধনায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি তার। গান ছেড়ে কাপড়ের ব্যবসা কিংবা সরকারি বা ব্যক্তিগত অনুদানের জন্য নামেননি। বরং এই সময়ে নিয়মিত গানের রেওয়াজ করে গেছেন সকাল-সন্ধ্যা আরও বেশি গভীরে ঢুকে গেছেন শাস্ত্রীয় সংগীতের বিভিন্ন রাগের ভেত সংকটকালীন এ সময়ে সংগীতের দশটি রাগ-রাগিনীর ওপর আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি। এরই মধ্যে চারটি নতুন গানের রেকর্ডিং সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া প্রস্তুতি চলছে সম্পূর্ণ-রাগের ওপর একটি শাস্ত্রীয় সংগীতের অ্যালবাম করার। এটি তার দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন।
সম্প্রতি সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন শুভজনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শাস্ত্রীয় সংগীতে ‘শুভজন শিল্পী পুরস্কার’-২০২১ পেয়েছেন গুণী কণ্ঠশিল্পী কবিয়া মল্লিকা। তিনি বন্ধু ফোরামের সবধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রাখতে পেরে আনন্দবোধ করেন। ২০০৪ সালে কলকাতার এইচএমভি থেকে ‘আর কত রাত একা থাকব’ শিরোনামে শিল্পী মল্লিকার প্রথমএকক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। পুরোনো দিনের অমর গান নিয়ে করা এই অ্যালবামটি সে সময় দুই বাংলানা ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর একে একে আরও ১১টি গানের অ্যালবাম প্রকাশ পায় তার। এর মধ্যে কলকাতা থেকে পাঁচটি এবং বাংলাদেশ থেকে সাতটি গান প্রকাশিত হয়েছে।
সংগীতশিল্পী রুবিয়া মল্লিকার সর্বশেষ প্রকাশিত মৌলিক গানের একক অ্যালবাম ‘প্রেমের পথ’-এর সুর কথা লিখেছেন এদেশের
সংগীতাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র বরেণ্য সংগীত পরিচালক, গীতিকার ও সুরকার প্রয়াত গুণিজন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।
এছাড়া শিল্পী মল্লিকার গানের ঝুড়িতে আরও বেশ কিছু মূল্যবান মৌলিক গান রয়েছে প্রয়াত চির সবুজ গীতিকবি নজরুল ইসলাম বাবু, মুনসী ওয়াদুদ, মিল্টন খন্দকার, শফিউদ্দিন শিকদার, দেলোয়ার আরজুদা শরফ এবং মো. হাবিবউল্লাহর
লেখায়।
তিনি গান করেছেন বরেণ্য সুরকার শেখ সাদী খান, কলকাতার রুদ্র দত্ত, প্রয়াত আজমল হুদা মিঠু, মাকসুদ জামিল মিন্টু, প্রচাক মো. আলী হোসেন, মো. লোকমান হাকিম, মো. ইসহাক, মান্নান মোহাম্মদ এবং আনিসুর রহমান তনুর সুরে। যাদের কথা, সুর ও সংগীতায়োজনে মল্লিকা এযাবৎকালে গান করেছেন তাদের সবার প্রতি রয়েছে তার অকুন্ঠ ভক্তি ও শ্রদ্ধা।
সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতিক পরিষদ থেকে সঙ্গীতে অবদানের জন্য পেয়েছেন সম্মাননা পদক। শিল্পী রুবিয়া মল্লিকার জন্য শুভকামনা।
আরও পড়ুন:
এক বছর পর জানা গেল রাশেদ-স্বাগতার বিচ্ছেদের খবর
বিটিভি’র ‘অন্তরের গান’ অনুষ্ঠানে গাইলেন সাবিনা ইয়াসমিন কন্যা কণ্ঠশিল্পী বাঁধন