চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: পিতার অবসরের ৫০ লক্ষ টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে সন্তানদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বেড়াজালে লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর পিতার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের কেরানীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পদ্মা অয়েলের কর্মকর্তা মো. মনির আহম্মদ (৬৭) গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যান। সোমবার সকাল ১০টার দিকে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনির আহম্মদের সংসারে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছেন। সে চাকরির অবসর গ্রহণে ৫০ লাখ টাকা পেনশন পান। আর সে টাকা বৃদ্ধের একাউন্টে ছিল। তার বড় ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এর অভিযোগ, বোন বেবি আক্তার সেখান থেকে কাউকে না জানিয়ে ত্রিশ লাখ টাকা তুলে নেয়। তার ছোট ভাই আলমগীর সৌদি আরবে থাকেন। সে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি আসতেছে।
বার্ধক্যজনিত জটিলতায় গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মনির আহম্মদ মারা যান। সেখান থেকে ওইদিন রাত ১১টার দিকে এম্বুলেন্সের মাধ্যমে বৃদ্ধকে বাড়িতে আনা হয়।
এ সময় সন্তানের মধ্যে ওই টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ঝগড়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সন্তানেরা বাবার দাফনে বাধা দেন। পরদিন সকালে স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন।
খবর পেয়ে কর্ণফুলী থানার পুলিশ সদস্যরা গত রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নিহত ব্যক্তির সন্তানদের নিয়ে থানার ওসি দুলাল মাহমুদ ও ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম বৈঠক করেন। সেখানে পেনশনের টাকার ভাগের বিষয়টি পরে সমাধান করার আশ্বাস দেওয়া হয়। পরদিন সোমবার সকাল ১০ টার দিকে জানাজা শেষে মনির আহম্মদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়ে বেবি আক্তার বলেন, বাবার শেষ বয়সে আমরা সেবা-যত্ন করেছি। আমরা বাবার কোনো টাকা তুলি নাই। বৃদ্ধের স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম (৫৫) বলেন, আপনারা সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নিবেন যেটা ভালো মনে করেন ওইটায় আমি মেনে নিব।
ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম বলেন, এই ঘটনায় আমরা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিততে একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। বৃদ্ধের অসুস্থতার সময়ে যে টাকা খরচ হয়েছে। সেগুলো বাদ দিয়ে বর্তমানে তার একাউন্টে যে টাকা আছে সেগুলো তার সন্তানদের মধ্যে ভাগ হবে। সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সোমবার সকালে বৃদ্ধের লাশ দাফন করা হয়।
কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।