সাইফুল ইসলাম, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি: নরসিংদী রায়পুরার উপজেলার বাঘাইকান্দি এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন (৩৮) প্রায় ১৩ বছর প্রবাসে থেকেছেন। তার প্রবাসে থাকা কষ্টার্জিত পরিশ্রমের অর্থ পাঠিয়েছিলেন তার স্ত্রী নাছরিন (৩৫) এর বাবা অর্থাৎ শ্বশুড় মোঃ জামাল মিয়া এর একাউন্টে। হঠাৎই নাছরিন প্রবাসী কবির হোসেনের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে তালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে টের পেয়ে কবির হোসেন প্রবাসে থাকা কষ্টার্জিত অর্থের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্বশুড় তা অস্বীকার করে।
গোপন সূত্রে কবির হোসেন জানতে পারেন যে, তার স্ত্রী নাছরিন পরকীয়া প্রেমে আকৃষ্ট হয়ে পালিয়ে যায় তার ৩৫ লক্ষ টাকা অর্থ নিয়ে। এই টাকার শোকে প্রবাসী কবির হোসেন প্রায় পাগল হয়ে এলাকায় এলাকায় গ্রাম প্রধানের কাছে বিচার দিতে থাকে। এক পর্যায়ে কোন উপায় না পেয়ে নরসিংদী আদালতে পলাশ সি.আর মোঃ নং- ৯১/২০২৪, ধারা- ৩২৩/৪২০/৪০৬/৫০৬ () দঃ বিঃ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পলাশ থানাকে তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করে।
তদন্ত ভার পেয়ে পলাশ থানার পুলিশ সদস্য তদন্ত কর্মকর্তা শামসু কে নিয়োগ করেন পলাশ থানার ওসি। এরপর শামসু তদন্ত ভার পেয়ে বাদী কবির হোসেনকে মোবাইল ফোনে থানায় ডেকে নিয়ে যায় বলে জানা যায়।
কবির হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, পলাশ থানার তদন্ত কর্মকর্তা শামসুকে আমি ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি। তদন্তটি সঠিকভাবে করার জন্য। তিনি এ রিপোর্টটি আমার পক্ষে দিবেন বলে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। নাহলে আমার বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়ে দিবে আদালতে মর্মে আমাকে হুমকি প্রদান করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই ১ লক্ষ টাকা ঘুষ না দিতে পারায় আমার বিপক্ষে রিপোর্টটি আদালতে প্রদান করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমার স্ত্রী ও শ্বশুড়ের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ পেয়েছেন তাই আমাকে মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করেন।
এদিকে নরসিংদী সদর প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক বাবুল বলেন, ঘটনাটি পুরোটিই সত্য। আমি নিজে তদারকি করেছি। পলাশ থানার এস.আই শামসু ১০ হাজার টাকা আমার সামনে ঘুষ নিয়েছে ও উল্টো আরো ১ লক্ষ টাকা ঘুষ দিলে বাদীর পক্ষে রিপোর্ট দিবে বলে আমার সামনে প্রতিশ্রুতি দেন শামসু এস.আই।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২ মে) নরসিংদী সদর উপজেলা হাজী গফুর মার্কেটে এড. বদরুল আলমের চেম্বারে এ তথ্যগুলি বলেন সাংবাদিক বাবুল। এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে সাংবাদিক বাবুল বলেন, এ মামলাটি নারাজী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি এই মহিলার বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ ও প্রকাশ করেছি। অথচ পলাশ থানার এ পুলিশ সদস্য এসব বিষয় আমলে না নিয়ে আসামীপক্ষ হতে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে উল্টো বাদীর বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়েছে আদালতে।
এদিকে পলাশ থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই শামসু সংবাদকর্মী রুদ্রকে মোবাইল ফোনে বলেন, বাদী কোন স্বাক্ষী আনতে পারে নাই। টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন টাকা খাইনি। যেটা সত্য সেটাই দিয়েছি। অথচ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা।
এদিকে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কিছু অসৎ পুলিশ কর্মকর্তা টাকার কারনে নিজের সততাকে বিক্রি করে দেন। অথচ বাংলাদেশ পুলিশ একটি স্বনামধন্য সরকারী প্রতিষ্ঠান। ঘুষ বাণিজ্য যারা করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
পলাশ থানার এক পুলিশ সদস্য পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, বর্তমানে এস.আই শামসু পলাশ থানা থেকে রায়পুরা থানায় বদলী হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে পলাশ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাঃ ইকতিয়ার উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। যেহেতু আপনি বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন তদন্ত করে পরবর্তীতে আপনাকে জানাবো।