October 7, 2024 - 5:25 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeআইন-আদালতরাজধানীতে ১৪টি অটোরিক্সাসহ চোরচক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার

রাজধানীতে ১৪টি অটোরিক্সাসহ চোরচক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার

spot_img

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর খিলগাঁও এবং সবুজবাগ থানা এলাকা হতে রিকশা চোরচক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারী চালিত ১৪টি অটোরিক্সা, ১৮টি অটোরিক্সার চার্জার ব্যাটারী, ৬টি মোবাইল ফোন, ১টি চাবি এবং নগদ ৩৭০/-টাকা উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ ও গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল জানতে পারে যে, রাজধানীর খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানাধীন এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভিতর কতিপয় সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ চোরাই ও ছিনতাইকৃত বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারী চালিত চোরাই এবং ছিনতাইকৃত রিক্সা মজুদ করে পরে ইহার রং পরিবর্তন করে বিক্রয় করে আসছে।

উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানাধীন এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভিতরে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ রিক্সা চোর চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ কামাল হোসেন কমল (৩৫), ২। মোঃ রাশেদ (২৮), ৩। মোঃ আলম হাওলাদার (৩৬), ৪। মোঃ কাজল (৩৬), ৫। মোঃ ফজলু (৩০) এবং ৬। মোঃ সাজু (২৫)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট হতে বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারী চালিত ১৪টি অটোরিক্সা, ১৮টি অটোরিক্সার চার্জার ব্যাটারী, ৬টি মোবাইল ফোন, ১টি চাবি এবং নগদ ৩৭০/-টাকা উদ্ধার করা হয়।

ধৃত আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, উক্ত চক্রের মূলহোতা কমল। সে ১৫ বছর পূর্বে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে রিক্সা চালানো শুরু করে। একদিন তার রিক্সাটি চুরি হয়ে যায়। তারপর রিক্সার মালিক তার নিকট হতে চুরি যাওয়া রিক্সার মূল্য আদায় করে। সে ধার করে উক্ত চুরি যাওয়া রিক্সার মূল্য মালিককে পরিশোধ করে। উক্ত ধারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সে চুরি যাওয়া রিক্সা খুজতে থাকে। তার চুরি যাওয়া রিক্সা খুজতে গিয়ে অপরাধ জগতের সদস্যদের সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর সে নিজেই রিক্সা চুরিকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেয়। সে ১২ বছর যাবৎ রিক্সা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করে আসছে। প্রথমে কমল নিজেই একা রিক্সা চুরি করত। সে নতুন রিক্সায় উঠে রিক্সা চালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খেতে দিয়ে রিক্সা চালককে অজ্ঞান করে রিক্সা নিয়ে পালিয়ে যেত। আবার কখনও রিক্সা চালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভিজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিক্সা চুরি করত। এরপর সে রিক্সা চুরির জন্য একটি চক্র গড়ে তোলে। উক্ত চক্র অভিনব কায়দায় রিক্সা চুরি করত। তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রিক্সা নিয়ে ঘুরে বেড়াত। সাজু উক্ত রিক্সা চালিয়ে যেত। পথিমধ্যে নতুন রিক্সা পেলে উক্ত রিক্সার উপর তারা নজরদারী করত। তারপর কমল রিক্সার ড্রাইভারকে বলত সামনের রাস্তায় একটি বাসা থেকে আমার কিছু মাল তুলবো। উক্ত মালগুলো কাছাকাছি আরেকটি বাসায় পৌঁছে দিলে সে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুন বেশি ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দিত এবং রিক্সা চালকের নিকট হতে তার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করত। বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে সহজ সরল রিক্সা চালক তার কথায় রাজি হয়ে যেত। তারপর তার সুবিধামত একটি বাসার সামনে রিক্সা থামিয়ে রিক্সার ড্রাইভারকে বলত আপনাকে বাসার ভিতরে ঢুকে মালামাল নিয়ে আসতে হবে। রিক্সার ড্রাইভার বাসার ভিতরে প্রবেশ করা মাত্র উক্ত চক্রের অপর সদস্য ফজলু গাড়ি নিয়ে উক্ত স্থান হতে দ্রæত পালিয়ে যেত। তারপর কমল মালামালসহ রিক্সা চালককে নিয়ে আসলে রাস্তায় রিক্সা না পেয়ে রিক্সা চালক হাউমাউ করে কান্না শুরু করত। তখন কমল রিক্সা খোজার নাম করে তাদের চক্রের রিক্সা নিয়ে উক্ত স্থান হতে পালিয়ে যেত। এরপর এসব চুরি যাওয়া রিক্সা রাশেদ, আলম হাওলাদার ও কাজল একটি গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখত। তারপর রিক্সার মালিককে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবী করত। মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করত। এরপর একটি অজ্ঞাতস্থানে রিক্সা রেখে রিক্সার মালিককে রিক্সা নিয়ে যেতে বলত। উক্ত কৌশলে রিক্সা চুরি করার পর সে তার সহযোগীসহ একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তারপর সে তার চুরির কৌশল পরিবর্তন করে। সে ও তার সহযোগীরা অধিক ভাড়ায় একটি রিক্সায় উঠে রিক্সা চালককে নির্জন স্থানে নিয়ে তাকে মারধর করে হাত পা বেধে রাস্তায় ফেলে রেখে রিক্সা নিয়ে পালিয়ে যেত। রিক্সা চুরির পর রিক্সার রং পরিবর্তন করে খোলা বাজারে রিক্সাটি বিক্রয় করে দিত। কখনও রিক্সার মোটর পার্টস খুলে আলাদা আলাদাভাবে বিক্রয় করত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে গাড়ি চুরি, চোরাই গাড়ি নিরাপদ হেফাজতে রাখা, চোরাই গাড়ি বিক্রয় ইত্যাদি কাজে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। উক্ত চক্রের সকলেই রিক্সা চালনায় পারদর্শী।

উক্ত চক্রের মূলহোতা কমল রিক্সা চুরির মূল পরিকল্পনাকারী। তার নেতৃত্বে রাস্তায় নজরদারী করে টার্গেট নির্ধারণ করা হত। কমল টার্গেটের সাথে কথা বলে রিক্সার ভাড়া ও গন্তব্য নির্ধারণ করত। তার সহযোগী সাজু চোরাই রিক্সা চালিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিত। তার অন্যতম সহযোগী ফজলুর সহায়তায় চোরাইকৃত ব্যাটারী চালিত রিক্সার রং, সিট কভার পরিবর্তন করে বিভিন্ন লোকজনের কাছে বাজার দামের অর্ধেক দামে বিক্রয় করে দিত। তারা রিক্সা চুরির উপযুক্ত স্থান হিসেবে বাসাবো বাস স্ট্যান্ড এলাকা, মান্ডা এলাকাকে বেচে নিত। এভাবে উক্ত চক্র রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হতে বিগত ০৭ বছর যাবত ৫০০ এর অধিক ব্যাটারী চালিত রিক্সা চুরি ও ছিনতাই করে গরীব ও নিরীহ রিক্সা চালক ও মালিকদের সর্বশান্ত করে আসছে। এসব রিক্সা তারা ৫০০০ হতে ১২০০০ টাকায় বিক্রয় করত। ধৃত কমলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ০৮ টি চুরি মামলা এবং ধৃত ফজলুর নামে ০১ টি চুরি ও ০১ টি মাদক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়া বিভিন্ন গ্যারেজকে নিরাপদ স্থান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। আসামীদের এরূপ কার্যকলাপের ফলে গরীব ও নিরীহ ব্যাটারী চালিত রিক্সার চালক ও মালিকগণ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানে উক্ত আসামীরা আটক হওয়ার ফলে গরীব ও নিরীহ রিক্সা চালক ও মালিকদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

উল্লেখ্য যে, ধৃত কামাল হোসেন কমল, ফজলু ও সাজু গত ১৭ আগস্ট ২০২২ তারিখ র‌্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছিল এবং জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই কাজের সাথে লিপ্ত হয়।

উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ