বেনাপোল প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এবার বেনাপোলে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরুপ একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণে গণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দানের জমি চাইলেন বেনাপোল পৌরসভা। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা জমি দিতে আগ্রহী তাদের পৌরসভা এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই অনুরোধে অনেকে সাড়াও দিয়েছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন সেগুলো যাচাই বাছাই করে চুড়ান্ত ভাবে নির্ধারণ করবেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালনায় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রজেক্ট-২ এর আওতায় বেনাপোল পৌরসভার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরুপ একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মিত হবে।
উক্ত হাসপাতালের জন্য ছয়তলা বিশিস্ট একটি অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবন নির্মাণের জন্য রাস্তার পাশে প্রায় বর্গাকৃতির কমপক্ষে ১৫ শতাংশ জায়গা প্রয়োজন। জমিটি অবশ্যই কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বেনাপোল তথা শার্শাবাসীর স্বার্থে হাসপাতালের জন্য তার নিজ অথবা কোন আত্মীয়ের নামে জমিটি দান করতে পারবেন।
এলাকার লোকজন বলছেন, বেনাপোলের আশেপাশে সরকারি জমি রয়েছে অনেক। কিন্তুু সেগুলো দখল করে অনেকে ভোগ দখল করছে। কেউ কেউ আদালতে মামলা করে নিজের আয়েত্বে রেখেছেন সরকারি জমি। জমি না পেয়ে অবশেষে গণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হাসপাতালের জন্য জমি সাধারন মানুষের কাছে চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বেনাপোল পৌরসভায় ১ লাখ ৩০ হাজার এবং এ থানার আওতায় আরও তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে অন্তত আড়াই লাখ মানুষের বসবাসের জন্য স্বাধীনতার ৫২ বছরেও গড়ে ওঠেনি সরকারি ভাবে কোন হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্র। বেসরকারি ভাবে যেসব চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো আছে তাতে নেই পর্যাপ্ত কোন ডাক্তারের ব্যবস্থা। সপ্তাহে এক দুই দিন সেখানে রোগি দেখতে ডাক্তার আসে দূর-দুরান্ত থেকে। অপারেশন করতেও ডাক্তার আনতে হয় যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে।
সীমান্ত ঘেঁষা এ বন্দরের মানুষ নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দক্ষিণাঞ্চলের সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রাণকেন্দ্র বেনাপোল বন্দর। প্রতি বছর এ বন্দর থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও এখানে এখনো কোন হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি। স্থলবন্দর বেনাপোলে চাকরি ব্যবসাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করে বন্দরে। জরুরি কোন দুর্ঘটনায় কোন শ্রমিক আহত হলে বা কোন প্রসূতির জরুরি ডেলিভারির প্রয়োজন হলে তাকে বেনাপোল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে যশোর সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করাতে হয়। ৩৮ কিলোমিটার যাওযার সময় অনেকে পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। তারা বলছেন, কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এখান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও এখানে কাস্টমস ও বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য কিছুই করেনি। অথচ এই বন্দর থেকে আয় করে অন্য বন্দরের উন্নয়ন করছেন।
এ ব্যাপারে বেনাপোল পৌর সভার প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন। এখনো চুড়ান্ত হয়নি। আশা করছি হাসপাতালের জন্য জমি পাওয়া যাবে। আমরা সকলের সাথে বসে দ্রুত বিষয়টি চুড়ান্ত করে ফেলবো।
এদিকে মা ও শিশুদের সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ২০১৩ সালে যশোরের বেনাপোল বন্দরের তালশারি ও শার্শা উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়া বাজারে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ শষ্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র দুইটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে নির্মাণ কাজ শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। হস্তান্তরের ৭ বছর অতিবাহিত হলেও সেখানে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই দুই এলাকার হাজার হাজার মা ও শিশুরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের টানাপড়োনের কারণে এর কার্যক্রম শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির উদ্বোধন এবং কার্যক্রম চালু হবে এমন তোড়জোরে বছর ৫ আগে এখানে ২/৪টি চেয়ার টেবিল ও কয়েকটি রোগীদের বেড আনা হয়। সেগুলোও এখন নষ্ট হওয়ার পথে। এ কেন্দ্রের জন্য এখনও কোন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সরজ্ঞাম ব্যবহার না করায় অবস্থা এমন হয়েছে ৭ বছর আগের নির্মাণ করা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দরজা জানলাসহ ভবন দুটির রংসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নস্ট হয়ে পড়ছে।