September 20, 2024 - 5:29 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসমোহাম্মদ মুসা, শিক্ষক, স্কুল অব বিজনেস , ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মদ মুসা, শিক্ষক, স্কুল অব বিজনেস , ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়

spot_img

বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও, বিনিয়োগকারী সুরক্ষাসহ পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট একাধিক বিষয়ে গবেষণা করেছেন। পাঁচ বছর গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন একটি মার্চেন্ট ব্যাংকেও। সাম্প্রতিক শেয়ারবাজার পরিস্থিতি, বিনিয়োগকারীর আস্থাহীনতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। 

প্রশ্ন: শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা কেমন বলে মনে করেন? এ বাজার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মোহাম্মদ মুসা: বছরের শুরুতে আমার প্রত্যাশা ছিল, বছর শেষে বাজারের সূচকটি সাড়ে পাঁচ হাজারের ওপরে থাকবে। বছরজুড়ে বাজার ভালো অবস্থায় থাকবে। কিন্তু বছর প্রায় শেষ হতে চলল। এখন এসে তাই বলতে পারি, বাজারটিকে আমি যেখানে দেখতে চেয়েছিলাম, সেখানে তা যায়নি। তবে গত কয়েক মাসের চিত্র দেখলে হয়তো মনে হবে, বাজারের পারফরম্যান্স ভালো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে তা প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ।

প্রশ্ন: কেন বাজার প্রত্যাশিত মাত্রায় পারফরম্যান্স করতে পারেনি বলে মনে করেন?
মোহাম্মদ মুসা: অনেকের বিশ্বাস, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। তাই বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমার মনে হয় না, এখনো বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি ফিরেছে। আমার ধারণা, এই আত্মবিশ্বাস ফিরে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ২০১০ সালের ধসের কারণে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের যাঁরা সর্বস্ব খুইয়েছেন, তাঁরা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। এখনো আমাদের বাজারটা অদক্ষ বাজার। তাই এ বাজারে এখনো অবমূল্যায়িত শেয়ার যেমন আছে, তেমনি অতিমূল্যায়িত শেয়ারও আছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।

প্রশ্ন: কেন বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরছে না? কেনই–বা এ বাজারকে অদক্ষ বাজার বলছেন?
মোহাম্মদ মুসা: বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি আস্থা না ফেরার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সব কারণকে একত্র করে মোদ্দা কথায় বলা যায়, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা আইনত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা—কারও মাধ্যমেই সুরক্ষিত নন। বিনিয়োগকারীরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করছেন না বলেই তাঁদের মধ্যে আস্থা ফিরছে না। আর এ বাজারকে অদক্ষ বলার পেছনেও কিছু কারণ রয়েছে। একটি অদক্ষ বাজারের অন্যতম লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অবমূল্যায়িত ও অতি মূল্যায়িত শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ও অংশগ্রহণ কম, মিউচুয়াল ফান্ডের দুর্বল ভূমিকা ইত্যাদি। সব কটি কারণই আমাদের বাজারে বিদ্যমান রয়েছে।

প্রশ্ন: ২০১০ সালের ধসের পর সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি কারসাজির দায়ে অনেককে অভিযুক্ত করেছিল। এখন পর্যন্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে কোনো প্রভাব ফেলছে কি?
মোহাম্মদ মুসা: যেকোনো অপরাধের বিচারহীনতা আস্থাহীনতার বাড়ায়। বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস না ফেরার পেছনে এটিও একটি কারণ। আমরা দেখলাম, ২০১০ সালের ধসের পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে কারসাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন। আবার কিছু কারসাজির ঘটনায় অধিকতর তদন্তের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, ওই সব বিষয়ে পরে তেমন কোনো ফলোআপ হয়নি। যে কয়টা মামলা হয়েছে, সেগুলোও দীর্ঘসূত্রতায় আটকে গেছে। অপরাধীর শাস্তি না হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও তাঁরা তখন আস্থায় নিতে পারেন না।

প্রশ্ন: কিন্তু আমরা তো দেখলাম, ধসের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে। অনেক সংস্কারও আনা হলো। তবু কেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারী আস্থা রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন?
মোহাম্মদ মুসা: ২০১০ সালের ধসের পর জানলাম, কারসাজির সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজনও জড়িত ছিল। আবার ধসের পর পুনর্গঠিত কমিশনের ওপর সবার যে প্রত্যাশা ছিল, সেটি পূরণ হয়নি। প্রত্যাশা পূরণ হলে হয়তো বাজারটি ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াত। কিন্তু সেটি হয়নি। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীর সেন্টিমেন্ট বলে একটি বিষয় আছে। যেটির সঙ্গে বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাসও সম্পর্কিত। যাদের হাতে অধিকাংশ শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ থাকে, তারাও বাজারের শেয়ারের দামকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে হলে এসব প্রভাব মুক্ত করা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে সে ধরনের কার্যকর উদ্যোগ বেশি দেখি না। কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার যে ধরনের ভূমিকা দরকার, সেটিতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এমন অনেক কারসাজি খোলা চোখে অনেকের কাছে ধরা পড়লে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখে তা ধরা পড়ে না বা দেখলেও নানা কারণে এড়িয়ে যায়।

প্রশ্ন: শেয়ারের কারসাজির বিষয়ে বলছিলেন। আপনি কি মনে করেন, এখানকার বাজার কারসাজি মুক্ত হয়েছে?
মোহাম্মদ মুসা: বাজার পুরোপুরি কারসাজি মুক্ত হয়ে গেছে, সেটি আমি মনে করি না। ২০১০ সালের আগে যে ধরনের কারসাজি ঘটেছে, হয়তো সেভাবে ঘটছে না। কারসাজির ধরনটা হয়তো পাল্টেছে। আবার বড় ধরনের কারসাজির জন্য যে ধরনের শক্তি বা সামর্থ্য দেখানো দরকার, সেটি এখন কেউ দেখাচ্ছেন না। বর্তমানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিজস্ব সার্ভেল্যান্স বা তদারকি ব্যবস্থা রয়েছে। এ কারণে অনেকে মনে করেন, কারসাজির মাত্রাটি আগের চেয়ে কমেছে।

প্রশ্ন: শেয়ারবাজারে ভালো কোনো কোম্পানি আসছে না কেন বলে মনে করেন?
মোহাম্মদ মুসা: দুঃখজনক হলেও সত্য, বাজারে ভালো কোনো কোম্পানি আনা সম্ভব হয়নি। কোনো বিনিয়োগকারী যদি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তও নেয়, তাহলে দেখা যাবে বিনিয়োগের উপযুক্ত যথেষ্টসংখ্যক কোম্পানি পাওয়া যাবে না। একদিকে ভালো কোম্পানি আসছে না, অন্যদিকে অর্থও খুব বেশি আসছে না। ফলে বাজারে চাহিদাও তৈরি হচ্ছে না।

প্রশ্ন: দেশে বিনিয়োগ কম। ব্যাংকে আমানতের সুদ হারও কম। এই অবস্থায় শেয়ারবাজারেই টাকা আসার কথা। সেটি হচ্ছে না কেন?
মোহাম্মদ মুসা: ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অনেকে এখন বাজারে নিষ্ক্রিয়। নতুন করে বিনিয়োগ বা বিনিয়োগকারী আসছে না। পুরোনো বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের কারণে সক্রিয় হতে পারছে না। এই অবস্থায় বিনিয়োগ আসতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাত ধরে। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসগুলো নিজেরাও আগের মতো ঋণ পাচ্ছে না।
(দৈনিক প্রথম আলোর সৌজন্যে)

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ