September 20, 2024 - 2:41 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসসাঈদ খোকন, মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

সাঈদ খোকন, মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

spot_img

কারো হাতে আলাদিনের চেরাগ থাকে না, যা দিয়ে রাতারাতি ঢাকাকে বদলে দেওয়া সম্ভব। মুখে মুখে বড় বড় বুলি আউড়িয়ে তো লাভ নেই। কাজ করতে হলে সবার আগে দরকার পরিকল্পিত পদক্ষেপ, আন্তরিকতা আর ঢাকার প্রতি অগাধ ভালোবাসা। সেটা পুঁজি করে এবং নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকাকে সব মানুষের বাসযোগ্য একটি তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সিটি করপোরেশনকে আমলাতান্ত্রিক পরিবেশ থেকে ফিরিয়ে জনতার করপোরেশনে পরিণত করতে চাই। এ জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকন।

আপনার দৃষ্টিতে ঢাকা নগরীর মূল সমস্যাগুলো কী এবং আপনি মেয়র নির্বাচিত হলে তা কিভাবে সমাধান করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, নগরবাসী যেভাবে কর পরিশোধ করছেন সেভাবে সেবা পাচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ যানজট, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারে না। মশার উৎপাতে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা প্রায়ই বিঘ্নিত হতে দেখা যায়। জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর অনেক এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। নৌকা দিয়ে চলাফেরা করতে হয়।

সাঈদ খোকন বলেন, 'আমাকে যদি নগরবাসী ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন তাহলে আমি তাঁদের কথা দিচ্ছি- আপনারা ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন। রাতে মশা ঘুমে বিঘ্ন ঘটাবে না। দিনে নিরাপদে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবেন। যানজটমুক্ত এবং সুন্দর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক নগরী উপহার দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করব। সেটা নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়েই করব। তবে হঠাৎ করে ঢাকাকে ব্যাংকক কিংবা হংকং বানাতে পারব না। ধীরে ধীরে এই প্রিয় শহরকে একটি তিলোত্তমা নগরী বানাতে জীবন দিয়ে হলেও কাজ করব। প্রয়োজনে নগরবিদদের পরামর্শ নেওয়া হবে। আর যদি সেটা না করতে পারি তাহলে মেয়র পদ থেকে আমি পদত্যাগ করে চলে যাব।'

দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সাঈদ খোকন বলেন, 'মেয়র নির্বাচিত হলে আমি আমার প্রয়াত বাবা এবং ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পথ অনুসরণ করব। ঢাকাকে গড়ে তোলার জন্য শুধু সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের ব্যবহার করব না, এর সঙ্গে নগরীর সব পঞ্চায়েত, ক্লাব ও সমিতিকে কাজে লাগাব। সূর্য ওঠার আগে কিভাবে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা যায়, তার জন্য তাদের সঙ্গে সপ্তাহে সপ্তাহে বসব। প্রয়োজনে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন করব। প্রথমে পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি ওয়ার্ড দিয়ে তা শুরু করব। এই কাজে সফলতা এলে পরে ঢাকা দক্ষিণের সব এলাকায় তা ছড়িয়ে দেব।'

সাঈদ খোকন বলেন, 'সিটি করপোরেশনে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের কারণে অনেক ভালো কাজ ঠিকমতো করা যায় না। অনেক কর্মচারী ঠিকমতো কাজ করেন না। বর্জ্য পরিষ্কার না করেই গাড়ির তেল মেরে দেওয়া হয়। মশার ওষুধে ভেজাল মিশিয়ে স্প্রে করা হয়। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে এসব দুর্নীতি চিরদিনের জন্য নির্মূল করব।'

ঢাকা শহরে একটি বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। সাঈদ খোকন বলেন, 'এক সময় শান্তিনগরকে ঢাকার অশান্তি বলা হতো। একপশলা বৃষ্টিতেই পুরো এলাকা তলিয়ে যেত। আমার বাবা মোহাম্মদ হানিফ শান্তিনগরে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন। শান্তিনগরের মতো অনেক এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করে তিনি নগরবাসীর ভালোবাসা পেয়েছিলেন। তাই আমিও বাবার পথ ধরে এ কাজ করব। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করে পানি চলাচল সুসংহত করব। ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে দুটি সংস্থা কাজ করলে অবশ্যই ঢাকা নগরী থেকে জলাবদ্ধতা দূর হবে।'

নগরবিদদের অভিযোগ, বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতার জন্যই নগরবাসীর সমস্যা নিরসন করা যায় না। সিটি করপোরেশনের ভেতরে প্রায় ৫২টি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কাজ করে। কারো সঙ্গে কারো সমন্বয় নেই। এ সমস্যা দূর করা যাবে কিভাবে সে প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, 'একটি মাত্র উদ্যোগেই এর সমাধান হতে পারে। আর সেটা হলো নগর সরকার। কিন্তু হঠাৎ করে তো এত বড় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমার বাবা এ ব্যাপারে প্রথম দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যিনি মেয়র হয়েছিলেন তিনি এ ব্যাপারে নীরব ছিলেন। তাই আমি যদি মেয়র নির্বাচিত হই তা হলে অবশ্যই এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। আমার বিশ্বাস, আমার মহান নেত্রী নগরবাসীর মঙ্গল চেয়ে নগর সরকার গঠন করে দেবেন। কারণ তিনি নিজেও ঢাকা নগরের বাসিন্দা।'

যানজটের জটিল সমস্যা কিভাবে সমাধান করবেন জানতে চাইলে এই মেয়র প্রার্থী বলেন, 'যানজটের কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে। তবে বর্তমান সরকার তা দূর করার জন্য ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, উড়াল সড়ক, স্কাই ট্রেন, মেট্রো রেলের পরিকল্পনা করেছে। আগামী বছরগুলোতে অবশ্যই ঢাকা যানজটমুক্ত শহরে পরিণত হবে। আমি প্রাইভেট কারের পরিবর্তে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়াতে কাজ করব। ফুটপাত দখলমুক্ত করে হকারদের পুনর্বাসন করার জন্যও কাজ করব। তবু যানজট থাকলে তা নিরসনের জন্য প্রয়োজনে নগরবিদদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে তাঁদের পরিমর্শ নেওয়া হবে।'

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় পড়েছে পুরান ঢাকার সিংহ ভাগ। সেখানকার কিছু ব্যতিক্রমী সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, 'ঢাকা কেন্দ্রীয় জেলখানা অচিরেই স্থানান্তর হয়ে যাচ্ছে। আমি মেয়র হলে জেলখানার বিশাল জমিতে পুরান ঢাকাবাসীর জন্য একটি পুষ্পশোভিত সবুজ উদ্যান গড়ে তুলব। সেখানে জাদুঘর কমপ্লেক্স ছাড়াও সিনেপ্লেক্স অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করব। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীদূষণ ও দখলমুক্ত করে সেখানকার বাকল্যান্ড বাঁধ থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করব, যাতে পুরান ঢাকাবাসী সে বাঁধ ধরে সকাল-বিকেল হাঁটতে পারে; নারী-শিশুরা নির্মল বায়ু সেবন করতে পারে। পুরান ঢাকায় যত ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে তা টিকিয়ে রাখা এবং সংস্কারে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ পুরনো স্থাপনা অক্ষত না থাকলে আমরা কোনো দিন পুরান ঢাকার বাসিন্দা দাবি করতে পারব না।'

সাঈদ খোকন বলেন, 'ঢাকা দক্ষিণে ৫৭টি মাঠ ও পার্ক রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ১৩টি মাঠ ভালো আছে। অধিকাংশ মাঠই বেদখল, অর্ধেক দখল কিংবা খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমি মেয়র হলে এসব মাঠ থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করব।'
 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ