নিজস্ব প্রতিবেদক : মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জমায়েত ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। হেদায়েতি বয়ানের পর রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টার দিকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। মোনাজাত শেষ হয় পৌনে ১২টার দিকে।
এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে তুরাগতীর মুখরিত হয়ে ওঠে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান। অনেকে কেঁদে কেঁদে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। বিশ্ব শান্তির জন্য দোয়া করেন। এই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন দেশি-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জমায়েতে আল্লাহর ক্ষমার আশায় আমিন আমিন ধ্বনিতে শেষ হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের কার্যক্রম।
এদিকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গী ময়দান ও আশপাশের এলাকায় স্থান না পেয়ে যে যেখানে পেরেছেন সেখানে বসেছিলেন। রাস্তায়, খোলা মাঠে বা বাসার ছাদে কিংবা যানবাহনেই। তবুও তাদের কোনো আক্ষেপ ছিল না। আখেরি মোনাজাতে যেকোনোভাবে অংশ নিতে পেরেই তারা খুশি।
আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে আজ রোববার ভোর থেকে দলে দলে যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। মধ্যরাত থেকে ইজতেমা ময়দান এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটেই রওনা হন মুসল্লিরা। তবে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে মেট্রোরেলে করে ইজতেমা এলাকায় এসেছেন অনেকে। এতে অফিস সময়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে।
রাজধানীর পুরান ঢাকা, শনিআখড়া, সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়িসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লোকজন বিভিন্ন বাহনে এবং মতিঝিল, প্রেসক্লাব, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর-১০ এর মুসল্লিরা মেট্রোরেলে উঠে উত্তরা স্টেশনে আসেন। গতকাল মধ্য রাত থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা, বোর্ড বাজার, কলেজ গেট, বিমানবন্দর, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, কামারপাড়া ও টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকা হয়ে ঢাকা ও গাজীপুরের আশপাশের জেলার মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমা ময়দান এলাকায় এসেছেন।
আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিরা দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য দোয়া করা হয়। বিশ্বশান্তি ও কল্যাণ চেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে আকুতি জানানো হয়েছে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এর আগে, শুক্রবার ইজতেমার প্রথমদিন জুমার জামাতে অংশ নিয়েছেন লাখো মুসল্লি। এতে ইমামতি করেন মাওলানা সা’দের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী।
এ লক্ষ্যে বুধবার দুপুর থেকেই জামাতবদ্ধ দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। সেই স্রোত মোনাজতের আগ পর্যন্ত অব্যহত থাকে।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১২-১৪ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন বলে ধারণা করেছেন আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বিরা। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক দেশের ৩ হাজার ২৬৩ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান তারা।
রোববার ফজরের পর বয়ান করবেন ভারতের মুফতি মাকসুদ তার বক্তব্য বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। এরপর হেদায়েতি বয়ান। হেদায়েতি বয়ানের শেষে হেদায়েতের কথা ও দোয়া। মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। এদিকে ইজতেমার প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি চলছে।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকেই মানুষ অংশ নিয়েছেন দ্বিতীয় পর্বের এ ইজতেমায়। তারা জেলাভিত্তিক নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরে থেকেও ইজতেমায় অংশ নিতে এসেছেন অনেক অতিথি। সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, ইরাক, তুরস্ক, এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপসহ ৫৪টি দেশ থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৬ জন বিদেশি মুসল্লি ইজতেমার ময়দানে এসেছেন।
তাবলিগ জামাতের বিরোধের কারণে কয়েক বছর ধরে দুই পর্বে হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। এবারও প্রথম পর্বে শুরায়ে নিজাম অনুসারী মুসল্লিরা এবং দ্বিতীয় পর্বে নিজামুদ্দিন অনুসারী মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতে শেষ হয় প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা।