সফলতার চেয়ে জীবনে সার্থকতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি হিসেবে আমি সফল কি-না এটা পরিমাপের সময় এখনও হয়নি। সফল হতে পারব কি-না জানি না; তবে জীবনকে সার্থক করে তুলতে চাই। ছাত্রজীবনে সফলতা বলতে যদি বোঝায় ভালো রেজাল্ট করা ও ভালো ক্যারিয়ার শুরু করতে পারা, তাহলে আমি বলব এখানে খুব শুরুতেই স্বপ্ন দেখতে পারা ও কিছু ভালো বন্ধু থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেউ আমার কাছে কারও ভবিষ্যৎ কেমন হবে জানতে চাইলে আমি প্রথমে তার বন্ধু তালিকা চাইব। আমাকে তোমার বন্ধুদের তালিকা দাও, আমি তোমার ভবিষ্যৎ বলে দেব। এসএসসিতে মাত্র ৩.৬৯ জিপিএ নিয়ে শুরু করে আমি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো ফল নিয়ে পাস করেছি_ আলহামদুলিল্লাহ। এখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটা ছেলের জন্য এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় অর্জন। দুটি বিষয় এখানে কাজ করেছে_ আমার স্বপ্ন ও আমার বন্ধুরা।
সহপাঠী সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলেও খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকত আমার দু'একজন। তাদের নিয়ে একসঙ্গে পড়তাম, আড্ডা দিতাম। আমাদের আড্ডার পুরোটাই থাকত আমাদের স্বপ্ন ও পড়াশোনা। এখানে দু'জনের কথা বিশেষভাবে আমি বলতে চাই। কলেজ জীবনে বন্ধু তারেক আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মাসুম। এ রকম পড়ুয়া বন্ধু না পেলে আমার পক্ষে ভালো ফল করা হয়তো সম্ভব হতো না।
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু সম্ভাবনার বীজ লুকিয়ে থাকে। প্রয়োজন সেটাকে জাগিয়ে তোলা। ভালো বন্ধুরা এ কাজটি করতে পারে। কিছু হতাশাবাদী মানুষ আছে যারা নিজেরা কিছু করে না, অন্যদেরও হতাশ করে। যেমন_ তুমি এটা পারবে না, এটা সম্ভব না ইত্যাদি। অর্থনীতির ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে এসে এমন অনেক কথা শোনে_ অর্থনীতির মতো কঠিন সাবজেক্টে কেন ভর্তি হয়েছ, অনেকেই ফেল করে, তুমি আর্টস থেকে এসেছ, মাদ্রাসা থেকে এসেছ, তোমার ম্যাথমেটিক্স ছিল না, সময় থাকতে মাইগ্রেশন কর ইত্যাদি। আমি জুনিয়রদের সব সময় বলতাম এ ধরনের হতাশাবাদীর কাছ থেকে শত হাত দূরে থাকতে। যারা সাহস দিতে জানে, সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে জানে, সফল মানুষদের উদাহরণ দেখিয়ে অনুপ্রেরণা জোগায়, তাদের সঙ্গেই কেবল পরামর্শ করা উচিত।
জীবনে সার্থকতার কথা বলতে গেলে বলতে হয়, যা কিছু অর্জন করতে পেরেছি তার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের জন্য, মানবতার জন্য কিছু করতে পারা। গত তিন বছরে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অনেক জেলায় হতদরিদ্র মানুষদের জীবন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমার হয়েছে। জনম জনম ধরে বয়ে বেড়ানো দরিদ্রতার বিভীষিকা দেখেছি। অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে ভবিষ্যতে উন্নয়ন অর্থনীতিতে কাজ করতে চাই, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে চাই। এটা আমার প্রধানতম স্বপ্ন।
সামাজিক, জাতিগত বা রাজনৈতিক বিভেদ, ঘৃণাচর্চা বা সংঘর্ষ অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়। আমরা দেখেছি যেসব দেশে গৃহযুদ্ধ, জাতিগত বা আদর্শিক-সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজমান, সেখানে উন্নয়ন মন্থর হয়ে পড়ে। আমার মনে হয়, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে আমাদের বিভেদচর্চা। আমাদের তরুণ প্রজন্ম বিভেদ আর ঘৃণাচর্চার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে। অথচ একটা সুন্দর দেশ গড়তে হলে প্রয়োজন ইনক্লুসিভ ও অংশীদারি সমাজ। সহনশীলতার চর্চার মাধ্যমেই কেবল তা সম্ভব। এ উপলব্ধি থেকেই আমরা 'ওয়ান বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন' শুরু করেছি। যার মাধ্যমে আমরা তরুণদের মাঝে সহনশীলতার চর্চা বাড়াতে চাই; বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে একটা ইনক্লুসিভ সমাজ গড়া যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। তরুণ প্রজন্ম পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে শিখবে, নিজের মত বা আদর্শের বাইরের মানুষকেও সম্মান করবে, সহনশীল হবে এবং একটা ইনক্লুসিভ সমাজের ধারণা নিয়ে বড় হবে, এই প্রত্যাশা করছি।
তথ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
সম্পাদকীয় কার্যালয়: ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা,
সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০