October 7, 2024 - 3:33 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসারাদেশ ও রাজনীতিসারাদেশঅবশেষে ৬৮ বছর পর অবৈধ দখলমুক্ত: বেনাপোলের হাকর নদ খনন শুরু

অবশেষে ৬৮ বছর পর অবৈধ দখলমুক্ত: বেনাপোলের হাকর নদ খনন শুরু

spot_img

বেনাপোল প্রতিনিধি : অবশেষে ৬৮ বছর পর দখলমুক্ত হতে চলেছে বেনাপোলের ঐতিহ্যবাহী হাকর নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে শুরু হয়েছে নদী খননের কাজ। ভারতের ইছামতী নদীর সাথে সংযুক্ত প্রবহমান হাকর নদী ১৯৫৫ সালে নদীর দু‘পাড়ের প্রভাবশালী লোকজন দখল করে নেয়। ভূমি কর্মকর্তাদের সহায়তায় ৬২ সালে হাকর নদী চলে যায় ব্যক্তি মালিকানায়। দীর্ঘ এ সময়ে নদী দখলমুক্ত করতে করার শত চেষ্টা চললেও তা হয়নি শেষতক আলোর মুখ দেখলো বেনাপোলবাসী।

বেনাপোলের ঐতিহ্যবাহী হাকর নদী নারায়নপুর থেকে বেনাপোলের সাদীপুর চেকপোষ্ট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খনন করা হবে। ২২ কিলোমিটার দুরুত্বের বাকি অংশ পরবর্তীতে ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন বিলের সাথে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে। জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। দখলমুক্ত করতে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের কোন বাঁধা আসেনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী খনন চলছে। খনন শুরুর আগে ১৯২৬ সালের রেকর্ড অনুসরন করা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ২০০ গজ দূরে হাওর নদীর অবস্থান। বন্দরের পানি নিষ্কাশনের জন্য হাকর নদী খনন করা খুবই জরুরি। ভারতের গঙ্গা, ইছামতি, ফারাক্কা ও কুদলা নদীর সঙ্গে সীমান্তের সাথে সংযুক্ত হাকর নদী।

বেনাপোল সীমান্তের সংযুক্ত হাকর নদী পথে দু‘দেশের মধ্যে চলাচল করত লঞ্চ ও রং বেরংঙের পাল তোলা নৌকা। ভারতের কোলকাতা বনগাঁ, বশিরহাট থেকে বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে বজরা নৌকা ভিড়তো বেনাপোলের এই হাকর নদীতে।
নদীটি ছিল এ অঞ্চলের জেলেদের মাছ শিকারের প্রধান ক্ষেত্র। মৎস্য, কৃষি ও ব্যবসায়ীদের জীবন জীবিকার উৎস ছিল নদীটি। বিশাল পরিসরে নদীটির দু‘পাড়ে গড়ে ওঠে সাদিপুর, নামাজগ্রাম, নারানপুর, ধান্যখোলা, নাভারনসহ অসংখ্য গ্রাম। কালের বিবর্তে প্রবাহমান নদীটি সরু খালে পরিণত হয়ে গেছে। দেশ স্বাধীনের পর নদীকে ঘিরে শুরু হয় অপ-দখল আর কেনাবেচার উৎসব। অনেকেই নদী দখল করে তৈরি করেছেন বড় বড় অট্রলিকা।

রাজনৈতিক পালাবদলে এলাকার প্রভাবশালী মহল জবরদখল করে নদী দখল করে তৈরি করেছে হাজার পুকুর। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছে মাছের ঘের। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে জোয়ার ভাটা। বাংলাদেশীদের দেখাদেখি ওপারে ভারতের পেট্রাপোল এলাকায় বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা ভূয়া জাল দলিল করে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছে পররবর্তীকালে। বেনাপোল স্থলবন্দরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নদীটি দখলমুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। সম্প্রতি হাকর-নদী খনন কাজ শুর হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেনাপোলবাসী।

শার্শা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নারায়নপুর হইতে বেনাপোল চেকপোষ্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার নদী দখলমুক্ত করতে সরকার ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন। কক্সবাজারের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আগামী জুন মাসের মধ্যে খননকাজ সম্পন্ন করবে বলে জানা যায়।

বেনাপোলর নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সদস্য আলী কদর সাগর বলেন, আন্ত:সীমান্ত নদীটি দখলদারদের কারণে নাব্যতা হারিয়েছে। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বেনাপোল-শার্শা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ‘নদী দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন সময় আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। সরকার খননের উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমরা আনন্দিত।’

সংবাদকর্মী বকুল মাহবুব বলেন, ‘ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশে প্রবেশমুখে বেড়িবাঁধ দিয়ে নদীর পানি চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষাকালে পানির চাপে বাঁধ খুলে দিলে বেনাপোল সীমান্তে বন্যার সৃষ্টি হয়। খনন হলে মানুষ বন্যা থেকে রক্ষা পাবে।’

বেনাপোল পৌরসভার প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, ‘বেনাপোল পৌরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির মুখে হাকর নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে খনন কাজ শেষ করা হবে। নদীর ধারে গাছ লাগানোসহ ওভারব্রিজ ও পার্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ ফিরে পাবে বেনাপোলবাসী।’

তিনি আরও বলেন, এখনও কোনো উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়নি। খনন কাজের প্রয়োজনে তা চালানো হবে। অনেকেই জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু নদীটি দখল করে অনেক প্রভাবশালী স্থাপনা তৈরি করেছেন ফলে খনন কাজের সময় তারা বাধা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বেনাপোল পৌর সভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, বেনাপোল পৌর সভার সাদিপুর গ্রামের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৮ নম্বর সীমানা পিলার এলাকা দিয়ে হাকর নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করেছে। বেনাপোলের বড়আঁচড়া, ছোটআঁচড়া, ভবারবেড়, বেনাপোল ও নারায়ণপুর মৌজার মধ্য দিয়ে রঘুনাথপুরের কোদলা নদী হয়ে বেতনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে এ নদী। নদীটি খনন হলে তারা বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবেন এবং দখল করে গড়ে তোলা ভবন, মাছের ঘের, পুকুরসহ নানা স্থাপনাও এ সময় উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রবাহ ফিরিয়ে আনা জরুরী। দীর্ঘদিন পর হলেও প্রভাবশালীদের কাছ থেকে হাকরনদী অবমুক্ত করায় আমরা খুশি।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, বেনাপোলের নারায়ণপুর থেকে বেনাপোল সাদীপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খনন করা হবে। ৫ কি: মি: খনন কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার ৯৪ টাকা। ২২ কিলোমিটার দূরত্বের বাকি অংশ পরবর্তীতে ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন বিলের সঙ্গে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে। দখলমুক্ত করতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কোনো বাধা আসছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী খনন চলছে। তবে নদ খননের পক্ষে এলাকার ৯৭ শতাংশ মানুষ অবস্থান নিয়েছে।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, দীর্ঘদিন পর শার্শা উপজেলার বেনাপোলে হাকর নদীর খনন প্রকল্প শুরু হয়েছে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে। খনন কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার ৯৪ টাকা। খনন কাজ শুরু হয়েছে সাদিপুর থেকে নারায়ণপুর পর্যন্ত। যার দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। খনন কাজ শেষে বেনাপোলবাসী বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। যেমন জলবদ্ধতা দূর হবে এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ