মো. গোলাম রউফ খান: লেখা-পড়া শেখার সময়কে বয়সের ফ্রেমে বাঁধানো যায় না। তাই এই পড়তি বয়সে এসে পড়া-লেখা শিখতে আবার কলেজে ভর্তি হলাম। তবে নব্বই দশকের একেবারে গোড়াকার উঠতি বয়সের সময়কার মত এবারো আমার সহপাঠীদের অনেকেরই বয়স কিন্তু আমার মত, কারো কারো আবার আমার থেকেও বেশি। বলতে পারেন – এটি বয়স্কদের শিক্ষালয়। সহপাঠীরা সমবয়সী আর বেশি বয়সী যাই হোন না কেন প্রত্যেকেই আমরা কিন্তু স্ব স্ব দেশের সদাশয় জনগণের তৃতীয় গ্রেডভুক্ত কর্মচারী। সেখানেই আমাদের মধ্যে মেলা মিল। যদিও পোশাক-পরিচ্ছদ, গাত্রবর্ণ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদিতে আমাদের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। আমার ৩২ জন সহপাঠী পরবেন জলপাই রঙের উপর সরিষা ফুলের রঙের ছোঁয়া লাগানো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধোপযোগী পোশাক যাঁরা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা, ০৫ জন পরবেন শান্তির দূত শ্বেত কপোতের মত ধবধবে সাদা পোশাক যাঁরা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমোডর পদমর্যাদার কর্মকর্তা, ০৬ জন পরবেন শরতের উজ্জ্বল দুত্যিসম্পন্ন দিগন্ত বিস্তৃত অসীম আকাশের রঙের মত নেভী-ব্লু রঙের পোশাক যাঁরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এয়ার কমোডর পদমর্যাদার কর্মকর্তা, ১১ জন পরবেন কোর্ট পরা ভদ্রলোকের মত স্মার্ট & ফরমাল পোশাক যাঁরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। আর আমরা বাংলাদেশ পুলিশের দু’জন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা যদিও আমাদের দু’জনের পোশাক আবার দু’ধরনের- একজন পরবেন বাংলাদেশ পুলিশের সেমি এ্যালিট ইউনিট অর্থাৎ এপিবিএনের স্মার্টেস্ট পোশাক আর আমারটা হলো বাংলাদেশ পুলিশের ঐতিহ্যবাহী মাইট্টা পুলিশের পোশাক। আমার সহপাঠীদের মধ্যে আরো ৩১ জন আছেন বিদেশি যাঁরা তাবৎ বিশ্বের ১৭টি ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। তাঁরা আবার ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও রঙের ইউনিফর্মের অধিকারী। আমরা আবার আর্য-অনার্য/দ্রাবিড়ীয়, ককেশীয়-নিগ্রো ইত্যাদিতে বিভক্ত। আমাদের এই পোশাক-পরিচ্ছদ, গাত্রবর্ণ, খাদ্যাভ্যাস, রীতি-নীতি, আচার-আচরণ, স্বদেশ-বিদেশ ইত্যাদিতে ভিন্ন ভিন্ন রং, রূপ, রস ও গন্ধ থাকলেও আমাদের মধ্যে একটি ক্ষেত্রে কিন্তু দারুণ মিল আছে আর তা হলো ০২টি প্রতিষ্ঠানে ০৫ দিনের ওরিয়েন্টেশন কোর্স শেষে আজ থেকে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিরপুর, ঢাকায় শুরু হওয়া প্রায় এক বছর মেয়াদী এই এনডিসি গ্রাজুয়েশন কোর্স থেকে জাতীয় নিরাপত্তা, দৈশিক উন্নয়ণ, কৌশলগত পরিকল্পনাসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে অর্জিতব্য জ্ঞান যেন আমরা নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও এতদসংক্রান্ত পরিকল্পনায় তথা জনগণের মঙ্গল ও কল্যাণে সমান্যতম পরিমাণে হলেও কাজে লাগাতে পারি, আমরা যেন স্ব-স্ব বিভাগ ও ডিপার্টমেন্টের সম্মান সমুন্নত রাখতে পারি, এদেশ ও বিদেশের পার্টিসিপ্যান্টসদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিতব্য এই গ্রাজুয়েশন কোর্সটি যেন সুস্থ দেহে, সুন্দর মনে ও স্বসম্মানে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারি। এজন্য আমরা সকলেই কিন্তু আমাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, আপনজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভকামনা প্রত্যাশা করি। সকলের মত আমিও আমার সকল ফেসবুক বন্ধু, আপনজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভকামনা প্রত্যাশা করছি।
স্ব-বেতনে ও সরকারি কিছুটা সুযোগ-সুবিধা সহযোগে এই গ্রাজুয়েশন কোর্সে আমাকে মনোনীত করার জন্য আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ মহোদয়গণদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার কর্মস্থল বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহীর সম্মানীয় প্রিন্সিপ্যল মহোদয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা এই জন্য যে তিনি আমাকে এই দীর্ঘ সময়ের জন্যে স্পেয়ার করেছেন। আপনাদের সকলের দোয়া ও আশীর্বাদও প্রার্থনীয়, স্যার।
লেখকঃ মো. গোলাম রউফ খান, বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি।