কর্পোরেট ডেস্ক: এজেন্ট ব্যাংকিং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহজে ব্যাংকিং সেবায় অন্তর্ভুক্তির অন্যাতম মাধ্যম। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে এ বিশেষায়িত ব্যাংকিং সেবা পরিচালনার অনুমতি দেয়ার পর সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২১,৪৪৮ টি এজেন্ট আউটলেটের আওতায় প্রায় ২ কোটি ৭ লক্ষ আমানত হিসাব খোলা হয়েছে যার প্রায় ৮৬ শতাংশ গ্রামীন গ্রাহকগণের।
এ সকল গ্রাহকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত ব্যাংক সমূহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক “প্রুডেনশিয়াল গাইডলাইন ফর এজেন্ট ব্যাংকিং অপারেশন ইন বাংলাদেশ-২০১৭” প্রণয়ন করা হয়। তারই ধারাবহিকতায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই কার্যক্রম শুরু করে। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম কিছুটা দেরীতে শুরু হলেও গ্রাহকদের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যাতায় খুব দ্রুত প্রসার লাভ করে।
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং ২৭৫৯টি আউটলেটের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৪৬৮টি উপজেলায় আধুনিক ব্যাংকিং সেবাপ্রদান করছে। এজেন্ট আউটলেটগুলোতে এ পর্যন্ত ৪২ লক্ষ ৮১ হাজার হিসাব খোলা হয়েছে যেখানে ডিপোজিটের পরিমাণ ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
তৃণমূল মানুষের ব্যাংকিং সেবা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এ আর্থিক পরিষেবার মধ্যে রয়েছে সাধারণ হিসাব খোলা, পার্সোনাল রিটেইল একাউন্ট বা মাইক্রো মার্চেন্ট হিসাব খোলা, নগদ জমা ও উত্তোলন থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রদান। লেনদেন হয় ব্যাংকের মতোই। শাখার মতোই বিভিন্ন ধরনের সেবা নিচ্ছেন গ্রাহকরা। এটুআই এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সকল ধরনের ইউটিলিটি বিল প্রদান ও ইন্সুুুরেন্স প্রিমিয়াম সংগ্রহের ব্যাপক পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে এজেন্ট আউটলেটগুলো। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্টগুলোর দৈনিক লেনদেন প্রায় ১০০০ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংকের বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স সহজেই উত্তোলন করতে পারছেন প্রবাসীদের স্বজনরা। রেমিট্যান্স আহরণ ও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের শীর্ষ অবস্থানে। ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের ১৩৮৪৫ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে যা দেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আহরিত রেমিট্যান্সের ৬০ শতাংশের উপরে। কোন কোনদিন দৈনিক রেমিট্যান্স সরবরাহ হয় প্রায় ১২০ কোটি টাকার উপরে।
ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত সকল নিয়ম কানুন মেনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যেমন বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা, গ্রাহকদের শতভাগ ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি, ফাস্ট মুভিং কনজুমার গুডস কোম্পানি ও অন্যান্য কোম্পানির এপিআই কেন্দ্রিক অনলাইন লেনদেনের উদ্যোগসহ বিভিন্ন প্রকল্প এজেন্ট ব্যাংকিং জগতে নতুনদ্বার উন্মোচন করছে। তাছাড়া গ্রাহকদের আমানত শতভাগ নিরাপদ রাখতে টুফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিত করা, জাতীয় পরিচয়পত্র, ওটিপি ও বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের আমাতন ও লেনদেন শতভাগ নিরাপদ করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) একটি জনপ্রিয়, জনকল্যাণমূলক এবং সফল প্রকল্প। এর মাধ্যমে এজেন্ট আউটলেটগুলো দেশব্যাপী ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৩৮ টি এজেন্ট আউলেটে প্রকল্পের আওতায় বিনিয়োগ বিতরণ শুরু করেছে। মোট ৭০৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ বিতরণ করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দেড় লক্ষ গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকের এজেন্টের মাধ্যমে সেবাগ্রহণ করছে। পিওএস ও অন্য ব্যাংকের কার্ডে নগদ টাকা উত্তোলন, ই-কেওয়াইসি কার্যক্রম জোরদার করা, সেলফিনের মাধ্যমে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট করা, সামাজিক সুরক্ষা ভাতা প্রদান, কিউআর কোড সহ অন্যান্য লেনদেন পরিচালনার সক্ষমতা ইত্যাদি পদক্ষেপ সমূহ বাংলাদেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসছে।
যেহেতু এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাংকিংপরিষেবার বাইরে নয়; তাই এর প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত নিয়ম-কানুন যথাযথ ভাবে পালন করা হয়। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতিটি এজেন্ট কেন্দ্রই ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত।
এজেন্ট কেন্দ্রে সন্তোষজনক ও ঝুঁকিমুক্ত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাংকের নিকটস্থ শাখা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সফটওয়্যার ব্যাংকের নিজস্ব হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত ঝুঁকি ও অনেক কম। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল করতে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ইতোমধ্যেই বেশ কার্যকর মাধ্যম হিসেবে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয়েছে।