তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: এপৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু নাকি পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। টকবগে সন্তানের লাশ বুকে পাথর নিয়ে কাঁধে তুলতে হবে এবং মৃত শরীর পরম আদরে কবরে রাখতে হবে এ ব্যথা কেউ কখনো বাবা না হলে এমন অনুভূতি বুঝতে পারবে না।’ কথাগুলো এভাবে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার উত্তর জাঙ্গিরাই গ্রামের মোঃ মোস্তাকিম হোসেন। বেপরোয়া অটোরিকশার ধাক্কায় একমাত্র সন্তান তালহাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ পুরো পরিবার।
জানা যায়, রবিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল চারটার দিকে বেপরোয়া অটোরিক্সার ধাক্কায় তালহা নামে তিন বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ঘটনাটি উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের উত্তর জাঙ্গিরাই এলাকায় ঘটেছে। শিশুটি উত্তর জাঙ্গিরাই গ্রামের মোঃ মোস্তাকিম হোসেনের একমাত্র সন্তান। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে উত্তর জাঙ্গিরাই জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর থেকে শিশুটির পরিবারসহ পুরো উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, শিশুটি তার বাবার সাথে বাড়ির পাশের সড়কে হাঁটা অবস্থায় বেপরোয়া অটোরিক্সা সজেরো ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলে অটোরিক্সার ধাক্কায় শিশুটি ছিকটে পরে মারাত্মক আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে নেওয়ার পথে শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ করে বলেন, জুড়ীতে নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিক্সার ধাক্কায় একের পর এক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অবুঝ শিশু তালহার মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অনতিবিলম্বে অবৈধ অটোরিক্সার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাই।
জুড়ীতে অদক্ষ অটোরিক্সা চালকের বেপরোয়া চালনায় ধাক্কায় একজন ফুটফুটে শিশুর অকালে প্রাণ গেল। আমাদের প্রশ্ন আর কত অনুমতি দিলে উপজেলায় কোটা শেষ হবে? সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ অনুমতিবিহীন সকল যানবাহন ছাটাই এবং প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে শিশুসহ সর্বসাধারণের চলাচল অনেকটা নিরাপদ হবে।
এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কতব্যরত মেডিকেল অফিসার জানান, শিশুটির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে নেওয়ার পথে শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তার মৃত্যু হয়।