আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে এখন মনোনয়ন ফরমের ছাড়াছড়ি। টাকা থাকুক আর না থাকুক বেশির ভাগ চোখ কান ফোটা নেতারা এমপি হতে চান। নব্বই দশকে যেখানে এমপি হওয়ার মতো পদকে দেখা হতো মর্যাদার সম্মানে। ছিল ভোটের লড়াইয়ে জিতে আসার ভয়। প্রার্থীর অর্থ না থাকলেও কর্মীর ভালোবাসা তাদের সঙ্গী ছিল। সেই যুগ পাল্টেছে। যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক এখন সবাই এমপি হতে চান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসছে বছরের ৭ জানুয়ারি।
বিএনপি ভোটে আসুক বা না আসুক তৃণমূল বিএনপির ব্যানারে ঝিনাইদহের অন্তত ৩টি আসন থেকে সাবেক বিএনপির এমপি ও নেতারা নির্বাচন করবেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শৈলকুপা থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাব ডিগবাজী দিয়েছেন। তিনি তৃনমুল বিএনপিতে যোগদান করে শৈলকুপা থেকে নির্বাচনের ঘোষনা দিয়েছেন। তার এই যোগদান ভোটার মাঠের লড়াইয়ে আ’লীগকে স্বস্তি দিলেও বিএনপিকে অস্তিতে ফেলেছে। অনেকেই মনে করছেন শেষ বয়সে আব্দুল ওহাব আরেক উলিত আব্দুস সাত্তার হতে চলেছেন।
এদিকে আসন্ন নির্বাচনে ঝিনাইদহের ৪টি নির্বাচনী আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ৪৫ জন।
শৈলকুপা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ঝিনাইদহ-১ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ৮ জন। তারা হলেন- বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই এমপি, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের কন্যা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের ছেলে পারভেজ জামান, বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার, চিত্র নায়িকা সিমলা ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপি। তবে এই আসনে আরেকজন প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এম আব্দুল হাকিম মনোনয়ন উত্তোলন করেছেন বলে গুজব ছড়িয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন, সদর পৌরসভা, হরিণাকুন্ডুর ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ঝিনাইদহ-২ আসন। এই আসনে মনোনয়ন উত্তোলন করেছেন ৮ জন।
তারা হলেন- ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, সাবেক সংসদ সদস্য সফিকুল ইসলাম অপু, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল, ঝিনাইদহ-মাগুরা সংরক্ষিত আসনের সাংসদ খালেদা খানম, হরিণাকুন্ডু উপজেলার বিদ্রোহী চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন ও বাজার পাড়ার মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপন।
কোটচাঁদপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা, মহেশপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাপ নিয়ে ঝিনাইদহ-৩ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন উত্তোলন করেছেন ১৪ জন।
তারা হলেন-বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব সালাহউদ্দিন মিয়াজি, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাড: আজিজুর রহমান, সাবেক এমপি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার নবী নেওয়াজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, সাধারণ সম্পাদক মীর সুলতানুজ্জামান লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আনিচুর রহমান টিপু, টিএম আজিবর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামিদ, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এম জামান মিল্লাত, কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুন্নেছা মিকি, বাশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা জিন্টু ও মোহাম্মদ আলী।
ঝিনাইদহ সদরের ৪টি ইউনিয়ন, কালীগঞ্জের ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন উত্তোলন করেছেন ১৫ জন।
তারা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসরাইল হোসেন, বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, সাবেক এমপি প্রয়াত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী শামীম আরা মান্নান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি, রাশেদ শমসের, আনোয়ার পারভেজ সাগর, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কাজী নাসিম আল মমিন রুপক, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন, আলী হাসান মোঃ গোলাম কিবরিয়া, আব্দুর রশিদ খোকন, মীর আমিনুল ইসলাম ও শাতিল ইসলাম।
বৃহষ্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে কোন আসনে কে নৌকার মাঝি হচ্ছে তা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এই ৪৫ জনের মধ্যে এলাকার লোক চেনে না এমন অনেক প্রার্থী রয়েছেন। রয়েছেন বিদ্রোহী ভোট করা প্রার্থীও। কেউবা জীবনেও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেননি এমন বসন্তের কোকিলও রয়েছেন।