আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রথম ‘ফিফা শান্তি পুরস্কার’ পেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানের আগেই ট্রাম্পকে ফিফা শান্তি পুরস্কার প্রদান করেন সংস্থাটির প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।
ওয়াশিংটন ডিসিতে শুক্রবারের এই ড্র অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের নাম ঘোষণা করা হয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফান্তিনোর সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার ঘনিষ্ঠ উপস্থিতি এবং একাধিক যৌথ আয়োজন হওয়ায় অনেকেই আগেই ধারণা করেছিলেন যে তিনিই হবেন বিজয়ী।
ফিফা আগেই জানিয়েছিল, ফুটবল বিশ্বজুড়ে শান্তি ও একতার প্রতীক, আর মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে যারা ভূমিকা রাখেন, তাদেরই সম্মান জানাতে এই উদ্যোগ।
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেন, ‘পৃথিবী যখন নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন মানুষকে আরও কাছে টেনে আনতে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
পুরস্কার প্রদানের সময় ইনফান্তিনো ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। এর মধ্যে রয়েছে তথাকথিত ‘আব্রাহাম চুক্তি’, যা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রশ্ন সমাধান না করেই ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
ইনফান্তিনো আরো বলেন, ‘আমরা একজন নেতার কাছ থেকে এটাই চাই— এমন একজন নেতা যিনি জনগণের জন্য চিন্তা করেন। আমরা একটি নিরাপদ বিশ্বে, একটি নিরাপদ পরিবেশে বাস করতে চাই। আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাই… মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আপনার কর্মকাণ্ডের জন্য… আপনি অবশ্যই প্রথম ফিফা শান্তি পুরস্কারের যোগ্য।’
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প খোলাখুলিভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন, কিন্তু এই বছরের শুরুতে তিনি সেটি পাননি। তিনি নতুন ফিফা স্বীকৃতিকে তার প্রাপ্ত ‘মহান সম্মান’গুলোর মধ্যে একটি বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, তার কারণে লাখ লাখ জীবন রক্ষা পেয়েছে এবং তিনি আটটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে ডেমোক্র্যাটিক পূর্বসূরি জো বাইডেনের রেকর্ডের সমালোচনা করে বলেন, ‘এক বছর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা ভালো করছিল না এবং এখন আমাকে বলতে হচ্ছে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম দেশ।’
ইনফান্তিনো পূর্বে ফুটবলকে বিভক্ত করার জন্য ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছিলেন, খেলার ‘রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা’ রক্ষা করা উচিত। তবে সমালোচকরা বলছেন, মাত্র কয়েক দিন আগে যিনি সোমালিয়ার মানুষকে ‘আবর্জনা’ বলেছেন, তাকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া সেই নীতির বিরোধী।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও এর সমালোচনা করে বলেছে, ‘ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে পারেননি তাই ফিফা তার জন্য একটি পুরস্কার তৈরি করেছে।’
সমালোচনা ও বিতর্ক
সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ক্যারিবীয় অঞ্চলে আরেকটি মারাত্মক বিমান হামলা চালানোর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এই পুরস্কারটি দেওয়া হয়েছে।
গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলকে বিশ্ব ফুটবল থেকে স্থগিত করার জন্য প্রচারণা চালানো জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা ক্রেগ মোখিবার ট্রাম্পকে এই পুরস্কার দেওয়াকে ‘সত্যিই লজ্জাজনক ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন।
আল জাজিরাকে মোখিবার বলেন, ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিষয়ে ফিফা গত দুই বছর ধরে যা করেছে, তা যথেষ্ট নয়। এখন ইনফান্তিনো ও তার সহযোগীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য একটি নতুন ‘শান্তি পুরস্কার’ তৈরি করেছেন।
ইনফান্তিনো আরও মনে করেন, এই পুরস্কারের লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের ‘লজ্জাজনক রেকর্ড’, ক্যারিবিয়ান সাগরে তার মারাত্মক হামলা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ কে আড়াল করা।


