নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারে পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এক দিনের বিরতি দিয়ে বুধ-বৃহস্পতিবার আবার অবরোধের ঘোষণা দিলো বিএনপি। ঘোষণা অনযায়ী, বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল ছয়টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তৃতীয় দফার অবরোধের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর অবরোধ কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়া হয়েছে। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ও যুগপৎভাবে এই কর্মসূচি পালন করবে।
এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে আগামী ৮ ও ৯ নভেম্বর (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ৪৮ ঘণ্টা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ (বীর বিক্রম)।
সোমবার এক বিবৃতিতে অলি আহমদ বলেন, এলডিপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলনরত দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী ৮ ও ৯ নভেম্বর বুধ ও বৃহস্পতিবার অবরোধ কর্মসূচি সফল করুন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডাকে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে সেই সমাবেশ থেকে ২৯ অক্টোবর হরতাল ডাকে দলটি।
একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর সারা দেশে অবরোধ করে তারা। আলাদা কর্মসূচি দিয়ে সঙ্গে যোগ দেয় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা কয়েকটি দলও একই কর্মসূচি দেয়। সেই অবরোধ শেষে রোব ও সোমবার নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকা হয়।
গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশের দিন থেকে অবরোধ কর্মসূচির শুরুর পর থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন সড়কে বাস, ট্রাক, অটোরিকশায় আগুন দেওয়ার এবং ভাঙচুর করার খবর এসেছে।
২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের পর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন, দলের ভাইস চেয়ারপারসন শামসুজ্জামান দুদু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীও।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ। সেদিন দুপুরের দিকে বিএনপির সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে কাকরাইল মোড়ের কাছে আওয়ামী লীগের সমাবেশগামী লোকজনের সংঘর্ষ হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পুলিশ। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয় এবং বেশকিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উপস্থিত সাংবাদিকদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিএনপির সমাবেশ ভন্ডুল করে দেয়। এর ফলে সংঘর্ষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়, পুলিশের বহু সদস্যকে পিটিয়ে আহত করা হয় এবং পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
সমাবেশ বানচালের প্রতিবাদে পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি হরতাল পালন করে। হরতালের দিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন।