December 16, 2025 - 11:34 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeআন্তর্জাতিকখাবার পাচ্ছে না গাজার বাসিন্দারা

খাবার পাচ্ছে না গাজার বাসিন্দারা

spot_img

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ১০ বছরের ইউসুফ আল-নাজ্জার নগ্নপায়ে দৌড়ে আসে গাজা সিটির একটি কমিউনিটি কিচেনে মানে লঙ্গরখানায়, হাতে একটি পুরনো হাঁড়ি। কিন্তু এসে দেখে, শত শত মানুষ ইতোমধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।

‘পাছে সুযোগ পাবে না, এই ভয়ে মানুষ ঠেলাঠেলি করে ছোট ছোট বাচ্চারা পড়ে যায়,’ ফিসফিস করে বলছিল ইউসুফ।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, প্রতিদিন হাজার হাজার গাজাবাসী, বিশেষ করে শিশুরা, পরিবারকে খাবার জোগাতে কমিউনিটি কিচেনগুলোর দিকে ছোটে।

গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইল গাজার ওপর সমস্ত ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর মানবিক সংকট মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় সামরিক অভিযান শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই এই অবরোধ জারি হয়।

সরবরাহ ক্রমশ কমে আসছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) শুক্রবার জানিয়েছে, তারা কমিউনিটি কিচেনগুলোতে তাদের ‘’শেষ খাদ্য মজুদ’ পাঠিয়ে দিয়েছে।

যুদ্ধে বাবা নিহত হওয়ার পর ইউসুফের কাঁধে পুরো পরিবারের ভার এসে পড়েছে। তার স্বপ্ন খেলনা বা খেলার জগত নিয়ে নয়; বরং করুণ এক বাসনা : মায়ের ও বোনের সঙ্গে শান্তিতে বসে একসঙ্গে খাওয়া। এজন্য প্রতিদিন সকালে সে কমিউনিটি কিচেনে দৌড়ে যায়।

‘অনেক সময় ভিড়ের মধ্যে আমার হাঁড়ি হাতছাড়া হয়ে পড়ে যায়, আর খাবার মাটিতে পড়ে যায়,’ এএফপিকে বলছিল ইউসুফ। ‘তখন আমি খালি হাতে বাড়ি ফিরি… আর সেই কষ্ট ক্ষুধার চেয়েও বেশি যন্ত্রণাদায়ক।’

এএফপির ধারণকৃত ফুটেজে দেখা যায়, গাজা সিটির এক কমিউনিটি কিচেনের সামনে অগণিত ছেলে-মেয়ে হাঁড়ি-পাত্র নিয়ে ভিড় করছে, হুমড়ি খেয়ে খাবারের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে।

এক তরুণকে দেখা যায়, এক বালকের দিকে ধাক্কা দিয়ে ধাতব হাঁড়ি ছুড়ে মারছে, যখন সে সদ্য রান্না করা ভাতের একটি পাত্রের দিকে এগোচ্ছিল।

আরেকটি কিচেনে বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী মোহাম্মদ আবু সানাদ বলেন, ‘আমি পাঁচ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি শুধু একটা চালের থালা পাওয়ার জন্য।’ ‘আমার কোনো আয় নেই। ফ্রি কিচেন থেকে খাবার পেলে খাই, না পেলে না খেয়েই থাকতে হয়—ক্ষুধায় মরে যাই।’

ডব্লিউএফপি, গাজার অন্যতম প্রধান খাদ্য সহায়তা সংস্থা, জানিয়েছে—এই কমিউনিটি কিচেনগুলোও ‘কয়েক দিনের মধ্যেই’ খাবারের মজুদ ফুরিয়ে যাবে।’ ৪২ বছর বয়সী আইদা আবু রায়ালা বললেন, এখন প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

‘ঘরে একফোঁটা ময়দাও নেই, রুটি নেই, কোনো উপায় নেই সন্তানদের খাওয়ানোর। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে কিংবা কখনও ঠান্ডায়, আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকি,’ বললেন নুসাইরাত এলাকার এই বাসিন্দা।

‘অনেক দিন এমনও হয় যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও খাবার শেষ হয়ে যায় — আমার পালা আসার আগেই।’

বিমান হামলায় রায়ালার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন তারা পাতলা নাইলনের একটি তাঁবুতে বাস করছেন।

একদিন তিন ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, পায়ে ফোসকা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু যখন অবশেষে কাউন্টারে পৌঁছলেন, তখন কোনো খাবার অবশিষ্ট ছিল না।

‘খালি হাতে ঘরে ফিরলাম। সন্তানরা কান্নায় ভেঙে পড়ল… আর তখন আমার মনে হলো, আমি যেন মরে যাই —যেন সন্তানদের আবার না খাওয়ার কষ্ট দেখতে না হয়।’

গাজায় খাদ্য সহায়তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ৫২ বছর বয়সী ফাতেন আল-মাজুন, যিনি উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় একটি দাতব্য রান্নাঘর পরিচালনা করেন।

তিনি ও তার ১৩ জন স্বেচ্ছাসেবক খোলা জায়গায়, কাঠের আগুনে, হাতে রান্না করেন — আধুনিক কোনো রান্নাঘর বা উপকরণ ছাড়াই।

‘কখনও আমরা ৫০০ খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত করি, অথচ হাজির হয় ৬০০ জনের বেশি,’ বললেন মাজুন। প্রয়োজন বিশাল। আর যতদিন সীমান্ত বন্ধ থাকবে, এই প্রয়োজন আরও বাড়বে।’

বাজার থেকে ময়দা উধাও হয়ে গেছে, বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, এমনকি সাধারণ সবজিও এখন বিলাসবস্তু হয়ে উঠেছে — ফলে হাজার হাজার মানুষের জন্য কমিউনিটি রান্নাঘরই এখন একমাত্র ভরসা।

‘মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চাই’

গাজার দক্ষিণের খান ইউনুস এলাকায় আলা আবু আমিরার পরিস্থিতিও একইরকম। ‘মাত্র কয়েক মিনিট দেরি করলেও আর খাবার পাওয়া যায় না,’ বললেন ২৮ বছর বয়সী আবু আমিরা, যিনি আগে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় থাকতেন।

‘মানুষ ঠেলাঠেলি করে, পড়ে যায়। আমি দেখেছি এক শিশু আহত হয়েছে। একবার ছোট একটি মেয়ে গরম খাবারের হাঁড়ি উল্টে গিয়ে পুড়ে গেছে।’

যখনই কোনো খাবার সংগ্রহ করতে পারেন, তা প্রায়ই ঠান্ডা, বিস্বাদ, একঘেয়ে — কখনও আধা রান্না করা ভাত, কখনও টিনজাত মটরশুঁটি আর সিম।

‘আমাদের পেট এসব সহ্য করতে পারছে না,” বললেন আবু আমিরা, ‘কিন্তু আমাদের আর কোনো উপায়ও নেই। ক্ষুধা সবকিছু ভেঙে দেয়।’ তবে প্রতিদিনের এই সংগ্রাম সত্ত্বেও রায়ালা প্রতিজ্ঞা করেছেন, খাবারের জন্য তার লড়াই চলবে।

‘আগামীকাল আরও আগে গিয়ে দাঁড়াবো, যাতে একটা থালা ভাত পাই। আমরা কেবল মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চাই,’ বললেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

মহান বিজয় দিবস আজ

কপোরেট সংবাদ ডেস্ক: মহান বিজয় দিবস আজ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন।...

আইসিএসবি’র কর্পোরেট গভর্নেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলো ৪৩ প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠায় উৎকর্ষতা সাধন এবং কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ৪৩টি প্রতিষ্ঠানকে...

১৬ ডিসেম্বর জাতির অহংকার, আনন্দ আর বেদনার এক মহাকাব্যিক দিন: তারেক রহমান

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া স্বাধীনতাযুদ্ধ ওই বছর...

নিজ বাড়িতে সস্ত্রীক খুন হলিউডের কিংবদন্তী অভিনেতা

বিনোদন ডেস্ক: নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার হলো হলিউডের কিংবদন্তী পরিচালক-অভিনেতা রব রাইনা ও তার স্ত্রী মিশেল সিঙ্গার রাইনার মরদেহ। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকালে মার্কিন...

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজকে ৮ লক্ষ টাকা অনুদান দিল আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক

কর্পোরেট ডেস্ক: শীর্ষস্থানীয় শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজকে ৮ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে।...

বিডি ল্যাম্পসের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিডি ল্যাম্পস লিমিটেডের ক্রেডিট রেটিং নির্ণয় করে তা প্রকাশ করেছে। কোম্পানিটিকে ক্রেডিট রেটিং দিয়েছে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ইসিআরএল)।...

শেখ হাসিনা-কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এক অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড...