April 13, 2025 - 11:29 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeশেয়ার বাজারকমেছে প্রফিট ও ডিভিডেন্ট, বেড়েছে এমডির বেতন!

কমেছে প্রফিট ও ডিভিডেন্ট, বেড়েছে এমডির বেতন!

spot_img

মাহিদুল ইসলাম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা অন্যান্য কর্মচারীদের তুলনায় অনেক বেশি হারে বেতন নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোম্পানির এমডির বেতন অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি প্রফিট, দেয়নি ডিভিডেন্ট।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে লিজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) প্রতিমাসে যে পরিমাণ আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি, ডিভিডেন্ট ঘোষণা এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এই রিপোর্টে।

আজ তুলে ধরা হলো ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেড সম্পর্কে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কোম্পানিটি ৩০০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ১৯৯৪ সালে তালিকাভূক্ত হয়েছে। কোম্পানির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ১৮৭ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার ১৮ কোটি ৭১ লাখ ১৪ হাজার ৬১৪ এবং রিসার্ভ অ্যান্ড সারপ্লাস রয়েছে ১৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

কেম্পানিটির বিগত ৬ বছরের ২০১৮-২০২৩ পর্যন্ত বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বেতন ভাতা, মুনাফা, ডিভিডেন্ট ও অন্যান্য আর্থিক প্যারামিটার সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে,

২০১৮ সালে কোম্পানিটির এমডি সৈয়দ এহসান কাদির বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৯৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। একই সময় কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ২৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১.৪৮ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৬.৬৭ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। বছরে ২৭ কোটি টাকা প্রফিট করে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ৮৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। প্রতি মাসে যা ৭ লাখের অধিক। আলোচ্য বছর কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন ইমরান আহমেদ।

২০১৯ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার তামিজ আমিন বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ১ কোটি টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১.৩১ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল ১৬.৯৮ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। বছরে ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রফিট করে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ১ কোটি টাকা। প্রতি মাসে যা ৮ লাখের অধিক। ওই বছর কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন ইমরান আহমেদ।

২০২০ সালে কোম্পানিটির এমডি থাকা অবস্থায় কায়সার তামিজ আমিন বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ২১ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১.১৩ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৭.১১ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। বছরে ২১ কোটি ১২ লাখ টাকা প্রফিট করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ১ কোটি ৫ লাখ টাকা যা প্রতি মাসে ৮ লক্ষ টাকার অধিক। উক্ত বছর কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন ইমরান আহমেদ।

গত বছরের তুলনায় আলোচ্য বছরে কোম্পানির নিট প্রফিট কমেছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর্থিক সুবিধা নিয়েছে ১ কোটি ৫লাখ টাকা।

২০২১ সালেও কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার তামিজ আমিন বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ২২ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১.১৯ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৭.৩০ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। বছরে ২২ কোটি ২২ লাখ টাকা প্রফিট করে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিজেই নিয়েছেন ১ কোটি ৫ লাখ টাকা যা মাসিক হিসেবে ৮ লক্ষ টাকার অধিক। ২০২১ সালেও কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন ইমরান আহমেদ।

২০২২ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল আহসান বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ৮৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল .৭৬ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৭.০৬ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো শতাংশ দেয়নি। বছরে ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রফিট করে বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে এমডি নিয়েছেন ৮৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা যা মাসিক হিসেবে ৭ লক্ষ টাকার অধিক। ওই বছর কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন ইমরান আহমেদ।

২০২২ সালে কোম্পানিটির নিট প্রফিট কমে দারিয়েছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকায় যা বিগত বছরের তুলনায় কমেছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
২০২৩ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ সর্বমোট নিয়েছেন ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রফিট হয়েছিল ১৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ..৭৬ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৭.৩২ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০২৩ সালে কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন ইমরান আহমেদ।

২০১৮ সালে কোম্পানির লোন্স অ্যান্ড এডভান্স ছিল ১৭৯৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা যা ২০২৩ সালে হয়েছিল ২০৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৬ বছরে ২০১৮-২০২৩ পর্যন্ত কোম্পানিটির লোন্স অ্যান্ড এডভান্স বেড়েছে ২৪৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

পক্ষান্তরে, ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ডিপোসিট ও অন্যান্য প্রাপ্তি ছিল ১৫১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা যা ২০২৩ সালে হয়েছিল ১৪২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৬ বছরে ২০১৮-২০২৩ পর্যন্ত কোম্পানিটির ডিপোসিট ও অন্যান্য প্রাপ্তি কমেছে ৯২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

এছাড়া, ২০১৮ সালে কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় ছিল ১৯ কোটি ১ লাখ টাকা যা ২০২৩ সালে কমে দাড়িয়েছে ১৫ কোটি ২২ লাখ। অর্থাৎ বিগত ৬ বছরে ২০১৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয় কমেছে ৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

কোম্পানির বিগত ৬ বছরের ২০১৮-২০২৩ পর্যন্ত শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) নিম্নমুখি একই সময় (২০১৮-২০২৩) কোম্পানিটির নিট প্রফিট ১৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কমে দাড়িয়েছে ১৪ কোটি ৩১ লাখ টাকায় যা ২০১৮ সালে ছিল ২৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এছাড়া কোম্পানির সংরক্ষিত আয় ৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা কমে দাড়িয়েছে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকা যা ২০১৮ সালে ছিল ১৯ কোটি ১ লাখ টাকা। অপরদিকে কোম্পানিটির ডিপোসিট ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কমে দাড়িয়েছে ১৪২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকায় যা ২০১৮ সালে ছিল ১৫১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং লোন্স এ্যান্ড এডভান্স ২৪৩ কোটি ৪৩ লাখ বেড়ে দাড়িয়েছে ২০৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা যা ২০১৮ সালে ছিল ১৭৯৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কোম্পানির সকল আর্থিক প্যারামিটার নিম্নমুখি কিন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন ভাতা উর্ধ্বমুখি। সকল আর্থিক প্যারামিটার নেগেটিভ হওয়া সত্বেও এমডির বেতন ভাতা পজিটিভ দৃশ্যমান। এই দায় কার কোম্পানির চেয়ারম্যান নাকি পরিচালনা পর্ষদের।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

মুক্তাগাছায় যুবতীর আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ভাইরাল করায় যুবক গ্রেফতার

ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বর্ষা আক্তার (১৭) নামের এক যুবতীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করায় যুবককে গ্রেফতার করেছে আর্মড পুলিশের এসআই(নিঃ)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়,...

এবারের সম্মেলনে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে: বিডা চেয়ারম্যান

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত সামিটে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার একশ’ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ...

দেশের সব মসজিদে একই সময় জুমার নামাজ আদায়ের আহ্বান

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: দেশের সব মসজিদে একই সময় (দুপুর ১.৩০ মিনিট) জুমার নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। রবিবার (১৩ এপ্রিল) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের...

জাতির আত্মপরিচয়ে পহেলা বৈশাখ এক উজ্জ্বল উপাদান: তারেক রহমান

কর্পোরেট সংবাদ ডেসক্ : বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জাতির আত্মপরিচয়ে পহেলা বৈশাখ এক উজ্জ্বল উপাদান। সোমবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উপলক্ষ্যে তার...

নির্মাণ উপকরণ বিষয়ে জিপিএইচ ইস্পাত ও পিডব্লিউডির যৌথ গবেষণা প্রকাশ

কর্পোরেট ডেস্ক: দেশের শীর্ষস্থানীয় রিবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে একটি টেকনিক্যাল সেমিনারের আয়োজন...

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪২১তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত

কর্পোরেট ডেস্ক: আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি. এর পরিচালনা পর্ষদের ৪২১তম সভা রবিবার (১৩ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্ষদ চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সভায় ব্যাংকের সার্বিক...

অডিট ফার্মে আইটি এক্সিকিউটিভ ও ম্যানেজার আবশ্যক

দেশের একটি স্বনামধন্য অডিট ফার্মে আইটি বিভাগে কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ দেয়া হবে। পদের নাম : আইটি এক্সিকিউটিভ/সিনিয়র আইটি এক্সিকিউটিভ/আইটি ম্যানেজার। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: ...

সোমবার বন্ধ পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজার ডেস্ক : বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে সোমবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন বন্ধ থাকবে। ডিএসই ও সিএসই...