পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গত ১০ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও মানহানীর অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে পৌর বিএনপি। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করে বিএনপি নেতা কর্মীদের হয়রানি ও লুটপাট চালিয়ে এখন তিনি সুশীল সেজেছে।
জমির দালালী করে জেলে থেকে তিনি কোটিপতি হয়েছে। অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছে। তার বিরুদ্ধে পৌরসভার কাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যা দুদক তদন্ত করছে। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, কুয়াকাটা পৌর বিএনপি সিনিয়র সহ সভাপতি জসিম উদ্দিন বাবুল ভূইয়া বাদী হয়ে ফ্যাসিবাদদের দোসরদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। যা দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়েছে।
এই মামলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগে আনোয়ার হাওলাদার ও তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্টাটাস দেন। এতে পৌর বিএনপির নেতাকর্মী সহ দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি আনোয়ার হাওলাদার এর সকল অপকর্ম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির নেতৃবৃন্দ জানান, গত সেপ্টেম্বর,২০১৭ইং সালে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন সহ নেতাকর্মীরা ঈদ পরবর্তী ভ্রমণে আসে। এসময় কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ বারেক মোল্লার নির্দেশে এবিএম মোশাররফ হোসেন, কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আঃ আজিজ মুসুল্লি হামলা করে। এতে এক ডজনেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এবিষয়ে থানায় মামলা করতে গেলে দলীয় প্রভাবের কারণে তখন তারা মামলা করতে পারেনি। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ মামলা করা হয়। এ মামলায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ বারেক মোল্লা, সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার, পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও কাউন্সলির আবুল হোসেন ফরাজি, শ্রমিক লীগ সভাপতি আব্বাস কাজী, যুবলীগ আহবায়ক ইসাহাক শেখ সহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১২০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এনিয়ে কুয়াকাটার সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার সহ তার পরিবারের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টাটাস। ওই স্টাটাসে তিনি এ মামলা কে মিথ্যা ও হয়রানি মুলক মামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
পৌর মেয়রের এমন স্টাটাসকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তোলে। এরই প্রেক্ষিতে পৌর বিএনপি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এবিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ২০১৭ সালে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন না। ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ বারেক মোল্লার নৌকা প্রতীকের বিপরীতে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হই৷ আমি মেয়র নির্বাচিত হবার পর বিএনপির নেতাকর্মী সহ সাধারণ মানুষ খুব শান্তিতে বসবাস করেছে। তার সাথে কোন ব্যক্তি কিংবা দলের কোন বিরোধ নেই।
তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে তাকে মাইনাস করতেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, মামলার বাদীর ভাই পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির আহমেদ ভূইয়া, তার দুই ছেলে সোহাগ, সবুজ এবং ভাতিজ আবু ছিদ্দিক আওয়ামী রাজনীতির সাথে সরাসরি জরিত। অথচ তাদের কাউকেই মামলার আসামী করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জসিম উদ্দিন বাবুল ভাইদের ছত্র ছায়ায় ব্যবসা বানিজ্য করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি জসিম উদ্দিন বাবুল, সহ সভাপতি আঃ মান্নান চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন ঘরামী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সোহেল, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিরন, ছাত্রদল সভাপতি জোবায়ের আহমেদ রিয়াজ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।