শেরপুর জেলা প্রতিনিধি: শেরপুরের নকলায় আলোচিত চাঞ্চল্যকর দর্জি আইয়্যুব আলী (৪৫) হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে নকলা থানা পুলিশ। একইসাথে নিহত দর্জি আইয়্যুব আলীর ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উপজেলার রুনীগাও মধ্যপাড়া এলাকার নিহত আইয়্যুব আলীর ভাতিজা মুকুল মিয়া (৪৫), তসর পুত্র মহসিন হাসান (২৩) ও ভাড়াটিয়া খুনি উপজেলার কুর্শাবাদাগৌড় এলাকার স্বপন রবিদাস সেতু (২৫)।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রুবী বেগম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আইয়্যুব আলীর সাথে জমিজমা নিয়ে ভাতিজা মুকুল মিয়ার দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। এজন্য মুকুল তার চাচা আইয়্যুব আলীকে হত্যার হুমকী দিয়ে আসছিলো। এদিকে কুর্শাবাদাগৌড় এলাকার স্বপন রবিদাস সেতু রুনীগাওয়ের জনৈক এক ব্যক্তিকে বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা দেয়। র্দীর্ঘদিনেও সে টাকা তুলতে পারে নাই সেতু। পরে মুকুল মিয়াকে বিষয়টি জানাইলে সে (মুকুল) সেতুকে তার চাচাকে হত্যার কাজে সহযোগিতা করলে সহযোগিতা করলে পাওনা টাকা উদ্ধার করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। সে এই শর্তে রাজি হলে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে ঘটনার দিন আইয়্যুব আলী নকলা বাজার থেকে দর্জির কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে রুনীগাও এলাকায় পিছু নেয় সেতু। তাকে অনুসরণ করে এবং মুকুলকে অবস্থান জানায়। মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজেও আইয়্যুব আলীর সাথে সেতুকে যেতে দেখা যায়। আইয়্যুব আলীর বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের দিকে পূর্ব থেকেই উৎ পেতে ছিল মুকুল মিয়া ও তার ছেলে মহসিন হাসান। আইয়্যুব আলী পুকুর পাড়ের কাছাকাছি এসে পৌছা মাত্রই সেতু পিছন থেকে ধরে মুকুল ও তার ছেলে কুপিয়ে হত্যা করে পুকুরে ফেলে চলে যায়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এসব স্বীকার করে ভাড়াটিয়া খুনি স্বপন রবিদাস সেতু।
প্রসঙ্গত, আইয়্যুব আলী নকলা বাজারে দর্জির কাজ করে সংসার চালাইতেন। প্রতিদিনের মতো ১৪ নভেম্বর দুপুরের খাবার টিফিন ক্যারিয়া করে সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে নকলায় দর্জির কাজ করতে দোকানে যান। রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় ও মোবাইল ফোনটিও বন্ধ থাকায় পরিবারের সবাই চিন্তায় পরে যায এবং বাজারে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে রাত অনুমান ১০টার দিকে কাজ শেষ করে বাড়ি চলে আসছেন। পরে সবাই মিলে খুঁজে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে আইয়্যুব আলী জুতা ও বাজারের ব্যাগ এলোমেলো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। তখনই পুকুরে আইয়ুব আলীর মরদেহ উদ্ধার করে। পরে পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুকুল মিয়া ও তার দুই ছেলেকে আটক করে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে স্বপন রবিদাস সেতু গ্রেফতার করলে স্বপন রবিদাস সেতু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, আমরা আইয়্যুব আলী হত্যা কান্ডটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করি। হত্যার সংবাদ পেয়ে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুকুল মিয়া ও তার দুই ছেলে আটক করি। পরে গোপনে ছায়া তদন্ত শুরু করি। তখন বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেই তথ্যের ভিত্তিতে স্বপন রবিদাস সেতু কে গ্রেফতার করি। সেতুর দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যার সরঞ্জামাদি ও নিহত আইয়্যুব আলী মোবাইল ফোন উদ্ধার করি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কাসেম বিজ্ঞ আদালতে গ্রেফতারকৃত আসামী মুকুল মিয়া ও তার পুত্র মহসিন হাসানের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।