October 9, 2024 - 10:28 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeবিশেষ প্রতিবেদনকর্পোরেট ক্রাইমহরিরামপুরে শিক্ষকের বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

হরিরামপুরে শিক্ষকের বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

spot_img

নিজস্ব প্রতিনিধি: ”আমাদের তিনজনের সাথে যা ঘটবে পৃথিবী উল্টে গেলেও তা কারো কাছে কিছু বলা যাবে না। আমার তা তোমার, তোমার তা আমার। আমি ওর সাথে যখন কিছু করবো তখন তুমি চোখ বন্ধ করবা। আর তোমার সাথে কিছু করলে ও চোখ বন্ধ করবে”। যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীদের এভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে চতুর্থ শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা ২৬নং মানিকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অভিযুক্ত মোহাম্মদ জাকারিয়া খান। পরে বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য বসলেও এলাকাবাসীর তোপের মুখে মিমাংসা না করেই অভিযুক্তকে নিয়ে চলে যান বিচারকেরা।

রবিবার (সেপ্টেম্বর ২৯) যৌন হয়রানির বিষয়ে অভিযুক্ত জাকারিয়া খানের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ছাত্রীদ্বয়ের পরিবার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার (সেপ্টেম্বর ২৪) এই ঘটনা ঘটে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ জাকারিয়া খান চতুর্থ শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে ওই বিদ্যালয়ে এবং তার বাড়িতে টিউশনের সময়ে প্রায়ই শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। একাধিকবার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে। গত কয়েকদিন আগে ওই ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ করলে তারা বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করে পরিবারেকে বিষয়টি জানায়। এছাড়া জাকারিয়া খান কয়েক বছর আগেও এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে ছয় মাসের জন্য চরাঞ্চলে ডেপুটেশনে চলে যায়। পরে টাকা পয়সা ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। বর্তমানে সে পুনরায় পূর্বের রুপে ফিরে এসেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয়। তাই জাকারিয়া খানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয় অভিযোগে।

সরেজমিনে গেলে রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই দুই শিক্ষার্থী জানান, মঙ্গলবার (২৪) সেপ্টেম্বর প্রাইভেট শেষে বাকি শিক্ষার্থীদের ছুটি দিলেও আমাদের দুজনকে আটকে রাখেন জাকারিয়া স্যার। এরপর বলে, “তোমরা শুক্রবার প্রাইভেটের দুই ঘন্টা আগে এসে ব্যাগ ও জুতাসহ ঘরে প্রবেশ করে ঘর খিল দিবা। এরপর কোরআন শরিফ ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করবা। আমাদের তিনজনের সাথে যা ঘটবে পৃথিবী উলটে গেলেও তা কারো কাছে কিছু বলা যাবে না। আমার তা তোমার, তোমার তা আমার। আমি ওর সাথে যখন কিছু করবো তখন তুমি চোখ বন্ধ করবা। আর তোমার সাথে কিছু করলে ও চোখ বন্ধ করবে।” পরে এগুলো বলে আমাদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় এবং শুক্রবার ভালো করে পরিষ্কার হয়ে যেতে বলেন। এছাড়া চলে আসার সময় আমাদের দু’জনকে ১০ টাকা করে খেতে দেন তিনি।

দুই ছাত্রীর পরিবার বলেন, জাকারিয়া স্যার ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাতে বিএনপির রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে ফোন আমাদের বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক ভাবে বসে সমাধানের কথা বলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সকালে বিদ্যালয়ে গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিক বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বসা হলে এলাকাবাসীর তোপের মুখে কোন সমাধান না করে শফিক বিশ্বাস অভিযুক্ত জাকারিয়া খান কে নিয়ে সটকে পড়েন। আমাদের দাবি তাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক। নইলে আমাদের সন্তানেরা আর ওই বিদ্যালয়ে যেতে পারবেনা।

এক ছাত্রীর মা বলেন স্যার এইরকম অনেকবারই করছে। আমার মেয়ের সাথেও করছে। অন্য মেয়েদের সাথেও করা পারে। আমরা তাই তার সুষ্ঠু বিচার চাই। যাতে অন্য কোন মেয়ের সাথে এমনটা আর না হয়।

মুঠোফোনে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ জাকারিয়া খান বলেন, বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট। এগুলোর কোন ভিত্তি নাই। তারপর যেহেতু অভিযোগ এসেছে, আমি বিষয়টি নিয়ে বসে একটা সমাধানের চেষ্টা করবো।

এবিষয়ে মুঠোফোনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আখতার বলেন, গতকালই আমি তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত করা হবে। তদন্তে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তখন তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ