নিজস্ব প্রতিবেদক :বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র ও বিএনপি দু’টি সমার্থক শব্দ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। তিনি বলেন ‘গত ১৬ বছরে আমাদের (বিএনপি) অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির বহু নেতা নির্বাসিত হয়েছেন। আজকে আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি সেটা যেন হেলায় না চলে যায়।’
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র উদ্যোগে দলের নয়াপন্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিশাল সমাবশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।
তিনি বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজকে সরকারে যারা আছেন, তাদের বলব- এখনো ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেকে তাদের চেয়ারে বসে আছে। এরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাধা হয়ে নানা ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছেন। তাদেরকে দ্রুত চেয়ার থেকে সরাতে হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণের অধিকার এখনো ফয়সালা হয়নি। এই অন্তর্বর্তী সরকার নানা সংস্কারের কথা বলছেন। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার, সেটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করতে চাই, অনতিবিলম্বে এদেশে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সাজানো মামলায় জেল খেটেছি, এর বিচার আমরা করব। গত কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যেখানেই তাদের পেয়েছে গণপিটুনি দিয়েছে। এই ১৭ বছরে ৩৪ বার গ্রেপ্তার হয়েছি। কই আমাদের তো ফুল দিয়ে বরণ করেছে। আমরা জেলে গিয়েছি বীরের মতো, বেরও হয়েছি বীরের মতো।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা যে ইতিহাস তৈরি করেছে, তা পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ছাত্র-জনতার স্রোতে স্বৈরাচার হাসিনা ভেসে গেছে। ছাত্র-জনতাকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে ও দেবে। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রথম ম্যান্ডেট নির্বাচন দিতে হবে। একই সঙ্গে গত ১৬ বছরে যে জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে, তার বিচার করতে হবে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। তীব্র রোদ ও ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। স্লোগানে স্লোগানে নয়াপল্টন প্রকম্পিত করে তোলেন তারা। নেতাকর্মীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। নয়াপল্টনে আশেপাশের এলাকা ও অলিগলিতে অবস্থান করেন ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর, ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকায় যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়।
বিএনপির এই সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন দলের অঙ্গ ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানের নামে নেতা-কর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সমালোচনা সম্বলিত স্লোগানের স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে নয়াপল্টন এবং আশেপাশের পুরো এলাকা।
নেতাকর্মীরা আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোনো রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই সমাবেশে আসতে পেরে সবার মধ্যেই আনন্দ-উদ্দীপনা কাজ করেছে বলে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।