মোঃ বাদল হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি।।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ হযরত ইয়ারউদ্দীন খলিফা (রঃ) মাজারের কম্পিউটার অপারেটর সোহাগ মল্লিক একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন ধরণের অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দানবাক্সের টাকা আত্মসাৎ, উৎকোচ নিয়ে মাজারের চৌহদ্দির মধ্যে দোকান বসানো আবার উঠিয়ে দেয়া, নিয়োগ বাণিজ্য, বহিষ্কার বাণিজ্য সহ নানা ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে চতুরপ্রকৃতির এই সোহাগের বিরুদ্ধে। এছাড়া মাজারের সকল ধরণের কেনাকাটার দায়িত্ব নিজের কব্জায় রেখে কোনো প্রকার জবাবদিহিতা ছাড়াই মনগড়া ভাউচার দিয়ে আত্মসাৎ করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি চালক সোহাগ মল্লিকের পিতা ইউনুস মল্লিক। এই সুবাদে মাজারের সোহাগ মল্লিক যা করেন, তা অনৈতিক হলেও জায়েজ হয়ে যায় বলে মাজার সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং স্থানীয়দের অভিযোগ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ‘‘সোহেল পিওন নামের এক ব্যক্তি ৩০ বছর ধরে মাজারের চৌহদ্দির মধ্যে ব্যবসা করে আসছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে কারফিউ চলাকালীন সোহেল পিয়ন কে মোবাইলে ফোন দিয়ে দোকান সরিয়ে নিতে বলে সোহাগ মল্লিক। সরিয়ে নিতে দেড়ি হওয়ায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকার মালামাল সহ দোকান সরিয়ে মাজারের চৌহদ্দির বাইরে ফেলে রাখা হয়। এতে দোকানের মালামাল লুট এবং কিছু মাল নষ্ট হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন সোহেল পিওন’’।
এর কারণ জানতে চাইলে সোহেল পিওন জানান, ‘‘প্রায় দু’বছর আগে মাজারে চাকুরি দেয়ার কথা বলে তার নিকট হতে ৫০হাজার টাকা নেন সোহাগ মল্লিক। কিন্তু চাকুরি না দেয়ায় ওই টাকা ফেরত চাওয়া হয়। এরপর থেকেই ব্যবসায়ী সোহেল পিওনের পিছুু লাগে সোহাগ মল্লিক। এরপর সুুযোগ বুঝে তার দোকান সরিয়ে দেয়া হয়’’।
সূত্র জানায়, ‘‘বিভিন্ন কৌশলে মাজারের দানবাক্সের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন কম্পিউটার অপারেটর সোহাগ মল্লিক। দানবাক্সের টাকা আদায়কারীর মধ্যে প্রায় ৩৫জনকে জিম্মি করে টাকা আত্মসাৎ করছেন তিনি। এরমধ্যে কলাপাড়ার জব্বার মুন্সি, নাসির উদ্দিন সহ বিভিন্ন এলাকার আদায়কারীর টাকা মাজারের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য আদায়কারীর নিকট থেকেও বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে- ‘‘জব্বার মুন্সির নামে বরাদ্দ দানববাক্স নিজের কব্জায় রেখে জাকির নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে দানবাক্স খুলে সেই টাকা নিজের পকেটস্থ করেন তিনি।
এছাড়া প্রায় দুই মাস আগে বাউফল এলাকায় নাসির উদ্দীনের নামে বরাদ্দ দানবাক্স খুলে টাকা নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন সোহাগ মল্লিক। এঘটনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির এক পর্যায়ে নাসিরের স্ত্রী তাকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করেন’’।
সূত্রানুযায়ি- ‘‘অপকর্মের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে কিনেছেন জমি। এরমধ্যে মির্জাগঞ্জের নেগাবান বাড়ির পাশে চড়ামূল্যে ২০ শতাংশ জমি ক্রয়ের তথ্য মিলেছে। হারুণ মাঝি নামে এক ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করা জমির মূল্য ১৫ লক্ষাধিক টাকা। এছাড়া নিজ গ্রাম পশ্চিম সুবিদখালী এবং শ^শুরবাড়ি পটুয়াখালীতে নামে-বেনামে বিপুল পরিমান জমি কেনার অভিযোগ পাওয়া গেছে’’।
এবিষয়ে মাজারের কম্পিউটার অপারেটর সোহাগ মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে, এই প্রতিবেদকের সাথে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। এছাড়া সাংবাদিক শামিম আহমেদ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তার সাথেও দম্ভোক্তি করে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন তিনি।
মির্জাগঞ্জ হযরত ইয়ারউদ্দীন খলিফা (রঃ) মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম ফয়সাল এর কাছে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মির্জাগঞ্জ হযরত ইয়ারউদ্দীন খলিফা (রঃ) মাজার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি জানতে চাইলে- ‘লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন’।