মোহাম্মদ রিদুয়ান হাফিজ, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরীর অস্ত্রবাজির ঘটনায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে ওই অস্ত্রটি জমা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে ২০৫টি বৈধ অস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত ১০৬টি অস্ত্র জমা দেয়া হয়েছে। বাকি ৯৯টি অস্ত্র কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী জানান, ২০২৪ সালের ৭ মে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরীর নামে একটি ‘ইতালিয়ান মডেল’ পিস্তল ইস্যু করা হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে ৪০ রাউন্ড গোলাবারুদসহ পিস্তলটি জমা দেয়া হয়েছে। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, রুস্তম তার ইস্যুকৃত ৫০ রাউন্ড গোলাবারুদ থেকে ১০ রাউন্ড গুলি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে ব্যবহার করেছে।
কক্সবাজারের মহেশখালী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মকসুদ মিয়া সহ আরও অনেক নেতা এখনো তাদের অস্ত্র জমা দেননি। মকসুদ মিয়ার নামে একটি শটগান ও একটি পিস্তল ইস্যু করা হয়েছিল ২০১৪-১৫ সালে, যা এখনো জমা দেয়া হয়নি।
অন্যদিকে, ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইস্যুকৃত সকল বেসামরিক অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা থানায় জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। জমা না দিলে অস্ত্রগুলো অবৈধ হিসেবে গণ্য করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রমতে, কক্সবাজারে ১৬ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্র- জনতার আন্দোলন দমাতে কক্সবাজার শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়া হয়। ইতিমধ্যে আলোকিত বাংলাদেশ এর প্রতিবেদকের হাতে কয়েকটি ভিডিও এসেছে। এর মধ্যে যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। অপর একটি ভিডিতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী মিছিল থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। ওই মিছিলের ভিডিওতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সামনে, পেছনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আরো কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হেলমেট পরিহিত কালো টি-শার্ট পরিহিত যুবক ভারি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী ও যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেনের অস্ত্রবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অস্ত্রবাজসহ আওয়ামী লীগ নেতারা আত্নগোপনে চলে যান। দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় পার হলেও একজন অস্ত্রবাজকে গ্রেফতার করতে না পারায় ছাত্র -জনতার মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের একাধিক মিছিল মিটিং এ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী অধিকাংশ সময় প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করে থাকেন। অনেকটা পুলিশের উপস্থিতিতে সে অস্ত্রবাজি করেন। তার অস্ত্রবাজি প্রত্যক্ষ করে ওই সময়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা তাঁর প্রশংসা করেন। জেলা প্রশাসনের তথ্য সূত্র মতে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তমের অস্ত্রটি বৈধ হলেও যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেনের অস্ত্রটি বৈধ নয়।
কক্সবাজারে এখনো বাকি ৯৯টি অস্ত্র জমা না পড়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অস্ত্রবাজির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে, তবে এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি।
কক্সবাজারের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাকি অস্ত্রগুলোর দ্রুত জমা পড়া এবং অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।