মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরের শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল পৌর সভার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আগুন। আর সেই আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে পকেট উজাড়, ক্রেতা পড়েছেন মহাসংকটে। ফলে নাভিশ্বাস ওঠা ক্রেতা বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই বাজার সেরে ফিরছেন ঘরে। অভাব ও দারিদ্র্যের কশাঘাতে আজকের জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পূর্ণ। মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যেমূল্য বৃদ্ধির ঘোটক।
জীবনধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মধ্য বিও মানুষ, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অন্যদিকে বন্যায় সবজিতে ব্যাপক ক্ষতি বলে উদাহরণ দিচ্ছে । সব মিলিয়ে কাঁচাবাজারের লাগামহীন মূল্যে নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত। সবজি কেনা এখন দুরূহ ব্যাপার। তাই ডাল আর ডিমের ওপরই ভরসা প্রত্যন্ত এলাকার খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর। সবজির দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রতিটি সবজি কেজি প্রতি দুই থেকে চার গুণ দামে কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে
বাজারের এ নিয়ন্ত্রণহীন অস্থিরতার জন্য কারসাজি আর সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন খুচরা বিক্রেতারা। আর এ বাজারে অস্থিরতার চাপ থেকে মুক্তি চান ভোক্তারা। আবারও যেন লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। ঊর্ধ্বমুখী শাক-সবজি, মাছ ও মাংসসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম। এতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারে এসে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা। তাদের বক্তব্য, বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফার আশায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবই এর মূল কারণ।
উপজেলা শার্শা ও বেনাপোলের নিত্যপণ্যের দামে আগুন মধ্যবিত্তদেরও সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলে প্রতিটি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, মসলা, শাকসবজিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। মাছ-গোশতে হাত দেয়ার উপায় নেই। আলু, বেগুন, কলা, ঝিঙে ঢেঁড়সসহ সবজির দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। ফলে মধ্যবিত্তদের ন্যায় বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ মানাসক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাদের সংসার দুবেলা আলুভর্তা ও ডাল খেয়ে কোনো ভাবে চলত। তারাও এখন নিরুপায়। বাড়তি চাল-ডালের দামের কারণে ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ পরিবার। মানুষের জীবনযাত্রায় খরচ বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় বাড়ছে না। এতে অধিকাংশ ভোক্তার সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি খাচি (৩০টি) ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৮০ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হয়েছে ১টি ডিম ১৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও কিছুটা কম ছিল। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকা। যা দুয়েক দিন আগে ৬০-৮০ টাকা ছিল। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ -১৫০ টাকা এর আগে ছিল ৩০-৪০-টাকা, রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০, যা ১ সপ্তাহ আগেও ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশী আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। যা আগে ৩০০ টাকা ছিল। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা। প্রতি কেজি আলু এখন ৫৫-৬০টাকা। বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও।
খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্যার কারণে পণ্য পরিবহনে সংকটের কারণে দাম বেড়েছে। পাইকারদের কাছে মজুত থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাচ্ছেন না তাঁরা। এ ছাড়া পাইকারি পর্যায়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। আবার দফায় দফায় বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় বেড়েছে সবজির দামও। সব মিলিয়ে বাজারে পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ কারণেই দাম বাড়ছে। দামের এই লাগাম টানতে হলে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে উপজেলা থেকে তদারকিও।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্যের মজুত রয়েছে। কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের তেমন কোনো তৎপরতাও নেই। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও তাদের সারা বছরের কার্যক্রমের মতোই গতানুগতিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অভিযান চালিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা আর বন্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। তারপরও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। সরকারের প্রচার-প্রচারণা যেমন ক্রেতাদের মজুত করা থেকে থামাতে পারছে না, তেমনি মূল্য বৃদ্ধিও ঠেকাতে পারছে না।
স্বাধীন দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের গল্গাছাড়া অবস্থা দরিদ্র ব্যক্তিদের পক্ষে বজ্রাঘাততুল্য। বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। সরকারকে কঠোর হাতে অতিলোভী অসাধু এসব ব্যবসায়ীকে দমন করতে হবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যতালিকা টাঙানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে দেশের সাধারণ মানুষের আরও একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকারী ভাবে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ান (টিসিবি) কার্ড ধারী পণ্য কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষের
তাতে তারা খুসী।
বেনাপোল বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারী চাকরিজীবী মোঃ শামছুল আলম বলেন, বাজারে পণ্যের দাম শুনে এখন ভয় হয়। এ দিকে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়তি রেখে ভোক্তাদের পকেট কাটছেন। অনেক সময় একই সিন্ডিকেট চক্র বারবার ভোক্তার পকেট কাটলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। তাই বাজার মনিটরিংয়ের এ দিকে নজর দিতে জোর দাবি তাদের।
বাজার করতে আসা আরো কয়েকজন ক্রেতা আমির হোসেন, রবিউল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, আশরাফ আলী, বলেন, মাসে যে টাকা আয় হয়, স্ত্রী ছেলেমেয়ে ও পরিবার নিয়ে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা এলাকায় বাজারের এক ক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগে গেছে যেন। সবকিছুরই দাম বাড়তি। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে বাড়তি খরচ গুনতে ফাঁকা হচ্ছে ভোক্তাদের পকেট।
বেনাপোল সাংবাদিক লোকমান হোসেন রাসেল বলেন, মধ্যবিত্তরা দুর্বিষহ সময় অতিক্রান্ত করছেন। সরকারের উচিত এখন থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।
বেনাপোল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের (বেনাপোল ও পুটখালী ইউনিট) কমান্ডার শাহ আলম বলেন, মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রন করার যে কোন ব্যবস্থা এখন নিতে হবে। সবকিছুরই দাম বাড়তি। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।