তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা ঘটার আগেই মুঠোফোনে পৌঁছে যাবে ক্ষুদে বার্তা আর সাথে ফোন কল। স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ। এতে কমে যাবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা। নতুন এই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। এখন তার পরিকল্পনা এই প্রযুক্তিকে মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি মাহফুজের বিগত ছয় মাস ধরে এই প্রযুক্তি তৈরিতে ব্যয় করেছেন। তার উদ্ভাবন করা এই প্রযুক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানানো। যাতে প্রাথমিক অবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
মাহফুজ জানান, এই মেশিনটি মূলত কক্ষের তাপমাত্রার রেকর্ড করতে পারে। সাধারণ বাসা বা অফিসে আগুন ধরে যায় কিংবা নির্দিষ্ট মাত্রার ওপরে গ্যাসের উপস্থিতি থাকলে তাহলে কক্ষের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। সেই সময় তাপমাত্রা পরখ করে ‘স্মার্ট লাইফ সেইভার’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পূর্ণ বাসার বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে দেবে। বেজে উঠবে ইমারজেন্সি সাইরেন। এমনকি ফায়ার বল ফ্লোরে পড়বে। এর সঙ্গে সঙ্গেই কর্তপক্ষকে সতর্ক করার জন্য ইমারজেন্সি কল যাবে এবং কী সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে তা জানানোর জন্য এসএমএস যাবে। যার ফলে বাসার কিংবা অফিসের বাইরে থেকেও দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারবেন সুবিধাভোগী ব্যবহারকারীরা।
ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যদি দুর্ঘটনা চলাকালীন সময়ে নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড টাইপ করার মাধ্যমেও বিদ্যুৎ প্রবাহ পুনরায় চালু করা যাবে না। বিদ্যুৎ প্রবাহ পুনরায় চালু করার জন্য স্মার্ট লাইফ সেইভার দুর্ঘটনা হয়েছে কি না অথবা দুর্ঘটনা ঘটার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা তা যাচাই করবে। যদি এখানে দুর্ঘটনা ঘটার কোনো আশঙ্কা নেই তবেই বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু করার অনুমতি দেবে যন্ত্রটি। তখন নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে পুনরায় বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু হবে।
এছাড়াও স্মার্ট লাইফ সেইভার ইমারজেন্সি মুহূর্তে মেইন সুইচ অফ করার মতো সুযোগ না থাকে তাহলে নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বাসার বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করা যাবে। দুর্ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিক মানুষ যে কাজগুলো করতেন সেই কাজগুলো সিস্টেমে নিজ দায়িত্ব থেকেই করবে মাত্র কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে। এই প্রযুক্তিটিতে আরডুইনো, জাম্পার ক্যাবল, জিএসএম মডিউল, বিভিন্ন সেনন্সসহ ইত্যাদি কম্পোনেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, আমি দেখেছি আমাদের দেশর অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনাগুলো ক্ষতির সংখ্যা খুব বেশি হয়। তাই অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা আগাম বার্তা মানুষকে দিতে আমি এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজে নামি। এটি যদি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হয় তাহলে তিন রুমের ডিভাইসের মূল্য আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হতে পারে। কল এবং ম্যাসেজ আসার জন্য প্রতি মাসে খরচ পড়বে ১০ টাকা। আমি মনে করি স্মার্ট লাইফ সেইভার ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ৯০ শতাংশ কমে আসবে।
তিনি বলেন, এটিকে আপডেট করার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কোনো সেন্সর কাজ না করলে ব্যবহারকারীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেম জানানো, ব্লুটুথ এর সাহায্যে কানেক্ট হয়ে অ্যাপের মাধ্যমে গ্যাস লেভেল, টেম্পারেচার ও পাসওয়ার্ড ইত্যাদি ইউজারের চাহিদা অনুযায়ী সেট করা, দুর্ঘটনার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস লাইন বন্ধ করতে পারার ফিচারগুলো নিয়ে কাজ করছি। আশাকরি সেগুলো সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রধান এস. এম. আবুল ফাত্তাহ তুহিন বলেন, আমদের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ একেবারেই নতুন একটি ডিবাইস সম্বলিত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। সে নিজের আগ্রহ থেকেই তার মেধার বিকাশ দিয়ে এটি তৈরি করেছে। যদি তার এই প্রযুক্তিটিকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে নতুন একটি আশার দিক দেখবে দেশবাসী। তার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযত প্রয়োগের মাধ্যমে মেধার প্রতিফলন বিকশিত হবে।