সাইফুল ইসলাম তানভীর, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদী ভাঙ্গন। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথেই উত্তাল হয়ে উঠেছে এ নদী। ঢেউয়ের তোড়ে নদী ভাঙন রোধে ফেলা জিও ব্যাগগুলো যাচ্ছে সরে। এতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নিয়ে ভাঙন আতংকে রয়েছে চরাঞ্চলসহ পদ্মা পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ।
জানা যায়, পদ্মার ভাঙনে এক সময় সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যাওয়া হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ এ তিনটি ইউনিয়নে নতুন করে চর জেগে উঠলে সত্তর দশকে সেখানে আবার জনবসতি শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক মানুষের বসবাস। তবে এখনো আছেন তারা ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়েই ।
২০২২ সালের দিকে পদ্মায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হলে জরুরি ভিত্তিতে চরাঞ্চলে নদী শাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থ বছরে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আজিমনগরে ৪০০ মিটার এলাকা জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর কাজ করা হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে আজিমনগরের হাতিঘাটা এলাকায় নতুন করে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে জিও ব্যাগ ধসে নদী তীরের মাটি বের হয়ে আসছে।
উপজেলার মালুচী গ্রামের বাসিন্দা নোয়াব আলী বলেন, কুশিয়ারচর পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়েছে। আর শিবালয়ের শেষ সীমানা মালুচী ঘাটের পশ্চিমে জিও ব্যাগ পড়েছে। মাঝের এই জায়গাটুকুতে এখনও জিও ব্যাগ পড়েনি। গত কয়েকদিনে জোয়ারের পানি আসতে শুরু করায় এই এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এখানে পানির গভীরতাও বেশি। তাই এখনই ভাঙনরোধ করা না হলে বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বলেন, কুশিয়ারচর বিল্লাল মেম্বাবের বাড়ি পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়লেও তারপর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এখনও কোনো জিও ব্যাগ পড়েনি। জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কোটকান্দি এলাকায় জিও ব্যাগও নদীতে ধসে পড়ছে। আমি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে৷ জিও ব্যাগ ধসে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা না চরাঞ্চলের ফসলি জমি সহ ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, হরিরামপুরের বেশিরভাগ এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে নদী শাসনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে কিছুদিন পূর্বে ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তীব্র ঢেউয়ের কারণে পদ্মার তীরে কিছু কিছু জায়গায় জিওব্যাগ স্লাইড করে। এখন পানি বৃদ্ধির কারণে কিছু কিছু জায়গায় আবার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমি হরিরামপুর উপজেলার ভাঙ্গনকবলিত স্থানগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করছি। যতদ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব জিওব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।