স্পোর্টস ডেস্ক: চলতি বছরের শুরুতেই ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। টেস্ট ক্রিকেটকেও বিদায় জানিয়েছেন। শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। এখন থেকে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাওয়া যাবে না ওয়ার্নারকে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হারে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া। এরপরই অবসরের ঘোষণা দিলেন দলটির তারকা ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার।
সেন্ট ভিনসেন্টে আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচে ছিল নানা সমীকরণ। ১২.১ ওভারের মধ্যে জয় পেলে বাংলাদেশ যেত সেমিফাইনালে। আর এরপর জয় পেলে অস্ট্রেলিয়া পেত সেমিফাইনালের টিকিট। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। বাংলাদেশ হেরেছে। একাধিকবার বৃষ্টি নামা এই ম্যাচে ডিএলএস মেথডে ৮ রানের জয়ে ইতিহাস গড়েছে আফগানিস্তান। তারা উঠে গেছে সেমিফাইনালে।
আর এতেই শেষ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল স্বপ্ন। একইসঙ্গে শেষ হলো ডেভিড ওয়ার্নারের যাত্রা। ভারতের বিপক্ষে সোমবারের ম্যাচই ছিল ডেভিড ওয়ার্নারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডেভিড ওয়ার্নারের টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান সম্বলিত পোস্টে তাকে ধন্যবাদ দিয়েছে।
ওয়ার্নারের অবসরের প্রক্রিয়াটা অবশ্য ছিল ধারাবাহিক। এ বছর জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনি টেস্ট দিয়ে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। জীবনের শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৪ রান ও শেষ ইনিংসে ৫৭ রান করেন। জয় দিয়েই টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করেন তিনি।
আর ওয়ানডে থেকে ওয়ার্নারের বিদায়টা হয়েছে রাজসিক। আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে। সে ম্যাচে ভারতের দেয়া ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মোহাম্মদ শামির বলে আউট হওয়ার আগে ৭ রান করেন তিনি। তবে ট্রাভইস হেডের ১৩৭ রানের ইনিংসে ভর করে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা খুব একটা ভালো কাটেনি ওয়ার্নারের। প্রথম ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে ৫৬ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসের বাইরে বলার মতো ইনিংস হচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ৩৯ রানের ইনিংসটি।
ওয়ার্নারের বিদায়ের বেদনা ছুঁয়ে গেছে তার সতীর্থদেরও। বাংলাদেশের ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে হ্যাজেলউড বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য ছিল (ওয়ার্নারের ক্যারিয়ার)। আমরা তাকে আমাদের গ্রুপে অবশ্যই মিস করব, মাঠে এবং মাঠের বাইরেও – সব ফরম্যাটেই অসাধারণ এক ক্যারিয়ার।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমরা এরই মধ্যে এর (ওয়ার্নারকে ছাড়া খেলার) কিছুটা স্বাদ পেয়েছি। এটা কিছুটা ধীরে ধীরে পুড়ে যাওয়ার মতো, টেস্ট ও ওয়ানডেতে এবং এখন টি-টোয়েন্টিতেও। তাকে ছাড়া জীবন কেমন তার কিছুটা অভিজ্ঞতা আমরা টি-টোয়েন্টিতেও পেয়েছি নিউজিল্যান্ডে। এটা সবসময় অন্যরকম, যখন আপনি এমন খেলোয়াড়কে হারাবেন, যিনি দীর্ঘদিন থেকে আপনার জন্য খেলছে। কিন্তু আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে এবং সামনে তাকাতে হবে।’
অস্ট্রেলিয়ার বিদায়ের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ট্রাভিস হেড জানান, এভাবে ওয়ার্নারের বিদায়টা হতাশার। তিনি বলেন, ‘আমরা হতাশ হব, যদি এভাবে ওয়ার্নারকে বিদায় জানাতে হয়, যেখানে আমাদের আরেকটা ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের টপ অর্ডারে তার (ওয়ার্নারের) অবদান নিয়ে অনেককিছুই বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, তিনি সব ফরম্যাট মিলিয়ে আমাদের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় নিচ্ছেন। টপ অর্ডারে আমরা তার অভাব অনুভব করব, কিন্তু আশা করব আজ (সোমবার) রাতে এটা এভাবে শেষ না হোক।’
২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মেলবোর্নে ওয়ানডে অভিষেক ওয়ার্নারের। এরপর একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সে বছরের ১৯ জানুয়ারি হোবার্টে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তার। এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রিসবেনে টেস্টেও অভিষেক হয় ওয়ার্নারের।
১১২ টেস্টে ৪৪.৫৯ গড়ে ৮৭৮৬ রান করেছেন ওয়ার্নার। হাঁকিয়েছেন ২৬টি সেঞ্চুরি। ১৬১ ওয়ানডের ১৫৯ ইনিংসে ৪৫.৩০ গড়ে ৬৯৩২ রান করেছে তিনি। এই ফরম্যাটেও আছে ২২টি সেঞ্চুরি। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১১০ ম্যাচে ৩৩.৪৩ গড়ে ৩২৭৭ রান করেছেন ওয়ার্নার। এই ফরম্যাটেও আছে একটি সেঞ্চুরি। দুইবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি একবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: