September 20, 2024 - 2:40 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসমো. সেকান্দর মিয়া, সভাপতি, চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি...

মো. সেকান্দর মিয়া, সভাপতি, চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড

spot_img

চট্টগ্রামে এবার কোনো ট্যানারি চালু না থাকায় ঢাকার ট্যানারির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের। এবার ঈদে চামড়া সংগ্রহ, দরদাম ও চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়ার ব্যবসা নিয়ে সঙ্গে কথা বলছেন চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. সেকান্দর মিয়া। 

প্রশ্ন: চট্টগ্রামে এবার চামড়া সংগ্রহ পরিস্থিতি কেমন? 
সেকান্দর মিয়া: চট্টগ্রামে এবার পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি আমরা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন লাখের বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। লবণযুক্ত চামড়া আসবে আরও কয়েক দিন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা থেকে আসা পশুর চামড়া নগরের আতুরার ডিপোর চামড়ার আড়তে আসবে। সব মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এবার চামড়া সংগ্রহ হবে বলে আশা করছি।

প্রশ্ন: চামড়া সংগ্রহ ও দরদাম নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের মধ্যে সব সময় অসন্তোষ চলে আসছে। এটা কেন হয়?
সেকান্দর মিয়া: চামড়া পচনশীল পণ্য। ১২ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ দিতে হয়। এ সময়ের মধ্যে লবণ না দিলে নষ্ট হয়ে যায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এবার বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ করে বিপাকে পড়েছেন। দাম পাওয়ার জন্য ঈদের দিনও অনেকে চামড়া বিক্রি করেননি। ধরে রেখেছেন। ঈদের পরদিন অনেকে চামড়া বিক্রির জন্য আড়তদারদের কাছে এনেছেন। এতে অনেক চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে। ট্যানারি মালিকেরা সব সময় ভালো চামড়া খোঁজেন। গুণগত মান নষ্ট হওয়া চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যায় না। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ভাবেন, আমরা তাঁদের ঠকাচ্ছি। কিন্তু আড়তদারদের চামড়া কিনতেই হয়। কারণ ঈদের আগে লবণ কেনা, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রস্তুতিসহ নানা খাতে আড়তদারেরা বিনিয়োগ করেছেন। চামড়া নষ্ট হলে ক্ষতি দেশেরই। এ জন্য চামড়া সংগ্রহে নিয়মনীতি থাকা দরকার। নিয়মনীতি হলে যে কেউ যেমন চামড়া কিনতে পারবের না। তেমনি চামড়ার গুণগত মানও নষ্ট হবে না। 

প্রশ্ন:চট্টগ্রামে কোনো ট্যানারি চালু নেই কেন? আর ট্যানারি না থাকায় আড়তদার-ব্যবসায়ীদের কী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে? 
সেকান্দর মিয়া: চট্টগ্রামে একসময় প্রায় ২২টি ট্যানারি স্থানীয় বাজার থেকে চামড়া সংগ্রহ করত। নানা কারণে এখানে একের পর এক ট্যানারি বন্ধ হয়েছে। সর্বশেষ দুটি চালু ছিল। তবে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বছর খানেক আগে নগরের জালালাবাদের মদিনা ট্যানারি ও কালুরঘাট এলাকার রিফ লেদার লিমিটেডও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই দুটি ট্যানারি চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে ৭০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করত। এই ট্যানারি দুটির মালিকেরা আবার নগদ টাকায় চামড়া কিনে নিতেন। বাকি ৩০ শতাংশ ঢাকার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যেতেন। কারখানা দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া বাজারে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ ঢাকার ট্যানারিগুলো বাকিতে চট্টগ্রাম থেকে চামড়া কিনে নিয়ে যায়। গত বছরের বিক্রি করা চামড়ার টাকাও পাননি চট্টগ্রামের আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। 

প্রশ্ন: চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়ার ব্যবসার অবস্থা এখন তাহলে কেমন?
সেকান্দর মিয়া: ঢাকার লালবাগের পোস্তার পরে চট্টগ্রামের আতুরার ডিপো এলাকার চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়ত। এখানে চামড়ার বেচাকেনার বড় অংশই হয় ঈদুল আজহার সময়। শুধু ঈদের সময় এখানে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়। চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য আছেন ১১২ জন। তবে এখানে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। চট্টগ্রামে ট্যানারি চালু থাকলে কাঁচা চামড়ার ব্যবসা ভালো হতো। এখন আমরা ঢাকার মুখাপেক্ষী। তারা ভালো দাম না দিলে এখানে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। প্রতিবছর ঈদের সময় ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট তৈরি হয়। তাঁরা বাজার অনুযায়ী দাম দিতে চান না। তাঁদের সঙ্গে অনেক দর-কষাকষি করে চামড়া বিক্রি করতে হয়। গত বছর ভালো মানের চামড়া প্রতি বর্গফুট ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে অর্ধেক, চট্টগ্রামে প্রতি বর্গফুট ৪০ টাকা। গত বছরের চেয়ে দাম অর্ধেক হয়ে গেল। অথচ এবার লবণের দাম তিন গুণ বেড়েছে। প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচও বেড়েছে। চামড়া প্রতি প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ ৩২৫ টাকার কম হবে না। অর্থাৎ আমরা ফাঁদে পড়ে গেলাম। আমরা যাতে ফাঁদে না পড়ি সে জন্য ট্যানারি মালিকদের চামড়া সংগ্রহ করা উচিত। এবার চামড়ার ভালো দাম না পেলে আড়তদারেরা পথে বসবেন।সূত্র: প্রথমআলো।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ