October 13, 2024 - 4:18 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসারাদেশ ও রাজনীতিসারাদেশবঙ্গবন্ধু দর্শনের উত্তম পুরুষ বদরখালীর হান্নান মিয়া

বঙ্গবন্ধু দর্শনের উত্তম পুরুষ বদরখালীর হান্নান মিয়া

spot_img

মোহাম্মদ রিদুয়ান হাফিজ কক্সবাজার প্রতিনিধি: “বঙ্গবন্ধুর গ্রাম সমবায়, গরিব মানুষের বাঁচার উপায়”বঙ্গবন্ধু দর্শনের একটি  অন্যতম তাত্ত্বিক প্রতিপাদ্য ।এক কথায় জাতির পিতার শেষইচ্ছে, সাম্যতার দর্শন।দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বনির্ভরতার এক অনন্য প্রচেষ্টার নাম।তেমনই সাম্যতাভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে  প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা তাঁর পিতার সপ্নকে  বুকে ধারণ করে উক্ত  কর্মসূচিকে  গণমুখী করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বনির্ভর এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গিকার নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।  বদরখালী সমবায়  ও উপনিবেশ এলাকা একটি  সাম্যভিত্তিক সমাজেরই মডেল। ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে  উক্ত সমিতি অত্র এলাকার জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে আসছে

উক্ত  সমিতি এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ সমবায়  সমিতি । ২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি  দেশসেরা  সমবায় পুরস্কার লাভ করে।সমিতির এমন উচুঁসন্মানে আসীন হওয়ার পিছনে যাদের দক্ষ ভূমিকা  “হান্নান মিয়া” তাদের মধ্যে  অন্যতম অনস্বীকার্য। বঙ্গবন্ধু আদর্শের নির্ভেজাল আওয়ামী লীগ নেতা,মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,পরোপকারী সমাজসেবক, উদার চিত্তের কালজয়ী  নন্দিত জননেতা তিনি। জীবনের সবটাই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।

সমাজ বিশ্লেষকদের মতে,”মানুষের  জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মানুষের জন্য কিছু করা। আর অন্তর থেকে ভালমানুষ  না হলে মানুষের জন্য কিছু  করা সম্ভব হয় না”। দার্শনিক সক্রেটিসের মতে “সদ্ব গুণই জ্ঞান” । তাই বলা চলে আলোচিত হান্নান মিয়া উভয় গুণের অধিকারী ছিলেন।

ইতিহাসের পরিভাষায়,   মেধাবী ও চারিত্রিক সৌন্দর্যে অধিকারী ব্যক্তিরাই পরিবর্তন করতে পারে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র।তেমন ব্যক্তিত্বই সময়ের পরিক্রমায় নিজেই ইতিহাস হয়ে রয়।  এমনই  বিস্তৃত পরিচয়ের অধিকারী হান্নান মিয়া।   বদরখালীর  হান্নান মিয়া, হান্নান মিয়ার বদরখালী, সমিতির নামের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে সে নাম। অজপাড়াগাঁ  থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনীতির প্রিয় পরিচিত মুখ। নিজের দলের বাইরেও  ভিন্ন মতাদর্শের নেতাদের কাছে ছিলেন  সজ্জন মানুষ হান্নান মিয়া ।

বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান   স্মৃতিচারণে  বলেন, , “দীর্ঘকাল ভিন্ন মতে রাজনীতি করলেও তাঁর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক অম্লান ছিল”।তাঁর মতে  “দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ের নেতৃত্বে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন একটি জনপদ। তথা এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি”।

(হান্নান মিয়ার জন্ম৩১মে১৯৪৩,মৃত্যু,১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। 

দীর্ঘ বিদেশি শাসন থেকে  মুক্ত হয়ে স্বাভাবিকভাবেই  সদ্যস্বাধীন দেশের  পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তখন  দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির কোন কোন ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জিত হলেও কিছুক্ষেত্রে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে যুদ্ধোত্তর দেশে একটা গ্রুপ  উগ্রবাদী মতবাদে সম্পৃক্ত হয়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে পরিচালিত হয়ে যায় । স্বার্থান্বেষী একটিশ্রেণি সম্পদ  কুক্ষিগত করতে উঠেপড়ে। বাকি জনগোষ্ঠী   জীবনধারণ নিয়ে  চরম বেসামাল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। দেশের এমন  অবস্থায় বঙ্গবন্ধু সব অর্থনৈতিক শক্তিকে সংহত করে,দেশপ্রেমিক সকলকে সাথে নিয়ে  জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ়  এবং সাম্যতা ভিত্তিতে দেশকে  ঢেলে সাজানোর  কাজে আত্মনিয়োগ করতে কিছু  পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তারমধ্যে ছিল  দীর্ঘমেয়াদী এবং  সল্পমেয়াদী কর্মসূচি।জরুরীভিত্তিতে সম্পাদনের লক্ষ্যে   উল্লেখযোগ্য দুটি হলো( ১) দূর্নীতিবাজ খতম করা।  (২) কলে-কারখানায় ক্ষেতখামারে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

আর  দীর্ঘমেয়াদীতে প্রধানতম কর্মসূচি ছিল, বাংলাদেশের পয়ঁষট্টি হাজার গ্রামে  বাধ্যতামুলক বহুমুখী  সমবায় গড়ে তোলা। চাষাবাদ বৃদ্ধি এবং কুঠির শিল্প গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনিবেশ করা। এসব  কাজে   বঙ্গবন্ধু যখন  এগিয়ে যাচ্ছেন , সেই সময়টাতেই  মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশী-বিদেশী অনুচরদের  চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু  সপরিবারে নিহত হল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট।

বিশ্লেষকদের অভিমত , “বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া শেষ আদর্শ ছিলো  বহুমুখী গ্রাম সমবায়ের মাধ্যমে দেশকে সাম্যতাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে তৈরী করা”। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সাথেই সেই  কর্মসূচি মাঠেই আটকে যায়। থমকে দাঁড়ায় কৃষক শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষের স্বাবলম্বী হওয়ার  উদ্যোগ।   কিন্তু দীর্ঘ একুশ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা সমবায় নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সমবায় ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে দারিদ্র নির্মুলে বহুমুখী গ্রাম সমবায় গড়ে তোলার আহ্বান  জানিয়ে বলেন, “এটা পরীক্ষীত যে বহুমুখী গ্রাম সমবায় যদি আমরা গড়ে তুলতে পারি,তাহলে বাংলাদেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না। দারিদ্র্যতা সম্পুর্ন নির্মুল হবে। সেটা আমরা করতে পারব”। এ প্রেক্ষাপটে  শতবর্ষী বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। এই সমিতিতে  একযুগের ও বেশী সময়  নেতৃত্ব দিয়ে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও আবেগের জায়গা দখল করে আছেন এম এ হান্নান বিএ। হান্নান সাহেব ছিলেন একজন পরিপূর্ণ সমবায়ী মানুষ। সমবায় আইনে তাঁর যথেষ্ট  অভিজ্ঞতা ছিল, মেধাবী রাজনৈতিক তিনি।  হান্নান মিয়া ও সমবায় আন্দোলন একসূত্রে গাঁথা। তাই  বঙ্গবন্ধুর বহুমুখী গ্রাম সমবায় তথা বঙ্গবন্ধুর শেষ ইচ্ছে নিয়ে আলোচনায় হান্নান সাহেবদের মতো  বলিষ্ঠ নেতৃত্বের  সমবায়ী  ব্যক্তিদের কথা সামনে চলে আসে ।তবে হতাশার বিষয় হলো ” যে কর্মসূচির জন্য বঙ্গবন্ধু  প্রাণ দিয়েছেন সে কর্মসূচির বিষয়  নিয়ে  আমরা  কতটুকু জানি কিংবা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সাথে জড়িতদের  কতটা ধারণা আছে।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি   বিশাল  সংগঠন ।এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুকে  ধারণ করে,লালন করে।টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতকালে এই দলে অনেক  নেতাকর্মী।মুজিবকোট তৈরীতে দর্জির দোকান ব্যস্ত সময় পার করছে ।তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে,  মুজিবের আদর্শ নিয়ে  অনেকেরই অজানা”।আর নেতাকর্মীদের কাছে রাজনীতি পঠনপাঠনে চরম অনিহাবোধ। সংগঠনে প্রশিক্ষণ নেই।অনুশীলনের  কোন তদারকি নাই।তাই বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের  রাজনৈতিক পরিমন্ডলে কর্মীদের  অস্থিরতার জন্য “মুজিব দর্শন” নিয়ে অজ্ঞতাকে চিহ্নিত করছেন বিশ্লেষক মহল।

বঙ্গবন্ধুর মূল  দর্শনই  ছিল গ্রামের কৃষককে সংগঠিত করা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা,উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা,পণ্যের  সঠিক বাজারদরের নিশ্চয়তা করা।কৃষকের উৎপাদিত পন্যকে ফঁড়িয়ামুক্ত করা।দালাল সিন্ডিকেট থেকে কৃষকদের রক্ষা করা। সিন্ডিকেট কৃষক করে না,সাধারণ মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ে  কোননা কোনো পণ্যের সিন্ডিকেটে অস্থির বাজার, সল্প আয়ের মানুষ সংসার  নিয়ে  কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। কখনো পিয়াঁজ , কখনো আদা, কখনো ধান চাল,আলু,  কাঁচা মরিচ, টমেটোর  আকাশ ছোঁয়া দাম উঠে। কিন্তু পণ্যের বাড়তি মুল্য উৎপাদক কৃষক পায় না। মধ্যসত্ত্বলোভী দালাল সিন্ডিকেটের ঘরে উঠে অতিরিক্ত মুনাফার টাকা। ফলে এই শ্রেণি অল্প সময়ে বিস্তর ধনসম্পদের মালিক বনে যায়।

অন্য দিকে দেখা যায় যে ,জমিনের সাথে সম্পর্কিত কৃষক ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ছিল মাটিখুঁড়া  কৃষকই  নিজেদের পণ্য নিজেরা বিক্রি করবে। কৃষকদের নিজেদের  সমবায়  সমিতি হবে ।সমিতির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করার জন্য বাজার খুঁজে বের করবে। সমবায়ের তত্ত্বাবধানে সেপণ্য নিজেরা বিক্রি করবে। ফলে  দালালরা সিন্ডিকেট করার সুযোগ পাবে না।এখন বাজারের যে অস্থিরতা বিরাজিত  তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীনের পরপরই চিন্তা করেছিলেন বলেই সমবায় কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭২ সালের ৩ জুন জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,”আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে,আশ্রয় পাবে,শিক্ষা পাবে,উন্নত জীবনের অধিকারী হবে।এই হবে আমার সপ্ন”। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহ্বান করেছিলেন তিনি।বঙ্গবন্ধুর ভাষায়,” আমাদের সমবায় আন্দোলন হবে সাধারণ মানুষের যৌথ আন্দোলন। কৃষক শ্রমিক মেহনতী জনতার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান”। জেলে সমিতি, তাঁতী সমিতি, গ্রামীণ কৃষক সমিতির মধ্যে যেন সত্যিকারের জেলে, তাঁতী, কৃষকের সংস্থা হয়ে থাকে “। তিনি সতর্ক  করেছিলেন, দালাল শ্রেণিভুক্ত কেউ যেন সমবায় দখল করতে না পারে। দেশের মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে  সোনার বাংলার ব্যাখা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু  বলেন, “সোনার বাংলা ঘুমিয়ে আছে চির অবহেলিত গ্রামের আনাচে কানাচে। চির অবহেলিত  পল্লীর অন্দরমহলে। বিস্তীর্ণ জলাভূমির আশেপাশেই, আর সুবিশাল অরণ্যের গভীরে”। রাজধানী থেকে দুরে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকায় “বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি” যেন সমতা ভিত্তিক সমাজের আইডল।

এডভোকেট জহিরুল ইসলাম তার লেখা বইয়ে উল্লেখ করেছেন  যে, “বদরখালী সমবায় সমিতি এলাকার জনগণ উদার, গনতন্ত্রমনা ও স্বাধীনচেতা।বস্তুতপক্ষে বদরখালী সমবায় ও উপনিবেশ এলাকা একটি সাম্যভিত্তিক সমাজের মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে”।এই সমিতি অত্র ইউনিয়নের আওতাধীন  এলাকায় সর্বসাধারণের জন্য  দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের মতো একটি মিনি সচিবালয়ের আদলে গড়া এবং কাজ করে। এলাকার অর্থনৈতিক সামাজিক শিক্ষা সহ মানুষের  সব মৌলিক অধিকার  নিয়ে কাজ করে। এখানে কোন ভূমিহীন নাই।আর এই কাজটির দীর্ঘ সময়ে নেতৃত্বে ছিলেন হান্নান মিয়া। বদরখালী  সমিতির বর্তমান সভাপতি দেলোয়ার হোসেন স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন, “হান্নান মিয়া প্রায় সময় বলতেন বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি একটি মডেল। যা অনুসরণ ও অনুকরণ করে সাম্যবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবন সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব”।

দেলোয়ার হোসেনের মতে, “আবদুল হান্নান ছিলেন মানবিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ। প্রখর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত প্রদানে সক্ষম। এ সকল বৈশিষ্ট্যের জন্য তাঁর নেতৃত্ব কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখিনি। সর্বোপরি তিনি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও সোনার বাংলার সপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানে একজন আপোষহীন  সৈনিক”।

কমিটির নির্বাচিত সদস্য(পরিচালক) আবদুল হান্নান স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রচার সম্পাদক , বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনীতির সাথে বেড়ে উঠা সাবেক ছাত্রনেতা,মাতামুহুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের (সাং) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক  শাহাবুদ্দিন উদ্দিন শাকিল বলেন — “হান্নান সাহেব আমাদের আদর্শ ও প্রেরণা।বদরখালী সমিতি উনাকে চিরকাল কৃতজ্ঞতাভরে মনে রাখবে”।বরণ্য রাজনৈতিক, সমাজসেবক হান্নান মিয়ার সন্তানরাও  বিভিন্ন জায়গায় পিতার সুনামকে ধারণ করে নিজেদের অবস্থানে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।

  বদরখালী সমবায় ও উপনিবেশ সমিতি সৃষ্টির পর থেকে ১৯৮৯ সালটি সমিতির ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই বছর বদরখালী হাইস্কুল মাঠে দেশের প্রথম লবণ ও চিংড়ি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন। তখন তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। পুত্র জয় এবং মেয়ে পুতুল সেদিন  শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ছিলেন । সেই সময়কার স্বৈরশাসকের চোখরাঙ্গানী উপেক্ষা করে হান্নান সাহেবের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী জনপদ থেকে হাজার হাজার কৃষক, চিংড়ি চাষি, লবণচাষি উপস্থিত হয়েছিল উক্ত সম্মেলনে। টানা ১৬ ঘন্টা এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু তনয়া। আছরের পর থেকে একনাগাড়ে মাগরিব পর্যন্ত বক্তৃতা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন সেইদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা।স্মরণকালের বিশাল  সেই  সভায়  সভাপতিত্ব করেছিলেন  উপকূলীয় এলাকার প্রাণ পুরুষ বদরখালী সমিতির সভাপতি  এম এ হান্নান।বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির জন্য  হান্নান মিয়া একজন অনুকরণীয় অধ্যায়।এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা মুজিবুর রহমান মেয়র এর সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেন “বঙ্গবন্ধু দর্শনের উত্তম পুরুষ বদরখালীর হান্নান মিয়া”, লেখাটির শিরোনাম যথার্থ হয়েছে বলে মনে করি। হান্নান সাহেবের জীবনের সবটাই নিঃস্বার্থ ও পরোপকারী ছিলেন।সাহসী, নির্লোভ নিরহংকার আওয়ামী লীগের প্রাণ পুরুষ তিনি। নেতাকর্মীরা যদি হান্নান সাহেবকে অনুসরণ করে, তাহলে বঙ্গবন্ধু দর্শন অর্ধেক অধ্যায়ন  হয়ে যায়”।

দেশের খাদ্য নিরাপত্তার কারিগর গ্রামের কৃষক।  কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কৃষক লীগ গঠন করেছিলেন।  বিগত বন্যায়  চকরিয়া পেকুয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন  হয়েছে প্রান্তিক কৃষক। অনেক এলাকায়  ধানের বীজ তলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে যথাযথ সময়ে ধানের চারা রোপণ করা পর্যন্ত  সম্ভব হয় নাই। বন্যায় অনেক গুলো কারণের মধ্যে খাল-বিল দখল হয়ে যাওয়া, কচুরিপানা পঁচে গিয়ে আবর্জনা স্তূপ হয়ে খালভরাট হয়ে যায়। ফলে খালবিল বৃষ্টির  পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অতিরিক্ত পানি  বের হতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।  সমাজের এসব সমস্যা নিয়ে সাধারণ কৃষকদের সাথে  মতবিনিময় কিংবা  সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে কতৃপক্ষের সাথে কৃষকলীগ  দেনদরবার করেছে কিনা এমন কোন খবর  জানা নেই। যদি বঙ্গবন্ধুর  গ্রাম সমবায় কার্যকর থাকতো  কৃষক সমবায়ের মাধ্যমে নিজেরা স্বপ্রনোদিত হয়ে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারতো মনে করেন সচেতন মহল।

গোটা পৃথিবীতে চলছে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুদ্ধ। সম্পদ লুন্ঠনের প্রতিযোগিতা। হিংসা, বিবাদ প্রতিহিংসা ছড়িয়ে আছে সবখানে। তাই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে হলে সাম্যতাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থাই পরীক্ষিত পদ্ধতি। মানুষের আর্থসামাজিক জীবন উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন সাম্যবাদী দর্শনই উত্তম পন্থা।তাই দরকার  মডেল হান্নান মিয়ার মতো বিশাল ব্যক্তিত্বের, নীতি আদর্শে অবিচল সাহসী পরিশ্রমী জননেতা।বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম গঞ্জে হান্নান মিয়ার মতো  বঙ্গবন্ধু দর্শনের দক্ষ চৌকস মেধাবী নেতা সৃষ্টি হলে সমবায় আন্দোলন আরও গতিশীল হবে। ।কারণ সুন্দর এই পৃথিবীতে “কেউ খাবে কেউ খাবে না। তাতো হতে পারে না”। তাই  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতো গড়ে উঠুক পৃথিবী “একসাথে বাঁচি আর এক সাথে মরি,এসো বন্ধু এ জীবন সুমধুর করি”।

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

ময়মনসিংহে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ১

ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহের সিনিয়র সাংবাদিক স্বপন ভদ্রকে (৫৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সাগর নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জেলার...

সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকারের বাংলাদেশ গড়তে চাই: ড. ইউনূস

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‌‘আমরা এমন সমাজ চাই না যেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ দিয়ে উৎসব পালন করতে...

এবার অ্যালেক্স হেলসকে দলে ভেড়াল ঢাকা ক্যাপিটালস

স্পোর্টস ডেস্ক : আগামী ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বিপিএলের একাদশ আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফট। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্দা উঠবে টুর্নামেন্টটির আসন্ন...

মেহেরপুরে জমি নিয়ে বিরোধ, বোন-ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা

সেলিম রেজা, মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুরের গাংনীতে ভাইয়ের কাটারিদায়ের আঘাতে সহোদর বড় বোন ও আপন মেজো ভাবি খুন হয়েছে। নিহত সহোদর বড় বোন জোসনা...

সনি-স্মার্ট শোরুমে মিলছে সনি ব্রাভিয়া’র নতুন মডেলের জেনুইন টিভি ও আল্ট সাউন্ড সিস্টেম

নতুন পণ্যের বাজারজাত এবং দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ক্রেতারা পাচ্ছেন ক্যাশব্যাক আর নিশ্চিত উপহার কর্পোরেট ডেস্ক : দেশব্যাপী সনি-স্মার্টের শোরুমে এখন পাওয়া যাচ্ছে জাপানের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড সনি’র...

প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না: উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, ‘একটি আশার কথা হচ্ছে এখন পর্যন্ত সারাদেশের পরিস্থিতি খুবই...

ধোবাউড়ায় ভিমরুলের কামড়ে বাবা-মেয়ের মৃত্যু

ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ভিমরুলের কামড়ে পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের দুধনই বাজার মসজিদের ইমাম এবং তার ৮ বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নৌকাযোগে...

বগুড়ার ধুনটে ৮ রাউন্ড গুলিসহ বিদেশি পিস্তল উদ্ধার

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনটে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৮ রাউন্ড তাজা গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন...