নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট রোগীর ৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর ৩০ শতাংশ বেসরকারিতে। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। গড়ে রোগীপ্রতি ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় করেছে সরকার।
রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই শত শত মানুষ এডিস মশাবাহিত এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রাণহানির তালিকাটা বড় হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। সরকার গড়ে রোগী প্রতি ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করছে। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় করেছে সরকার। কোনো রোগী যাতে চিকিৎসার বাইরে না থাকা সেই চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।
জাহিদ মালেক আরো বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অনেকের প্লাটিলেট ও আইসিইউ প্রয়োজন হয়। আবার অনেকে শুধু ওষুধেই সুস্থ হচ্ছেন। এ বছর ইতোমধ্যে ৫৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যাও লাখ ছাড়িয়েছে। এখনও প্রতিদিন শত শত মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে খুব বেশি কাজে আসছে না।
তিনি বলেন, সারাদেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৪১১ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ২৩৬। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারী কম। তবে মৃত্যুর ক্ষেত্রে নারীর হার বেশি। সারাদেশে মোট ভর্তি রোগীর ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৫ শতাংশ নারী। অথচ মোট মৃতের মধ্যে নারীদের হার ৬৫ শতাংশ। নারীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নিতে দেরি করছেন। তাদের অসুস্থতার ক্ষেত্রে পরিবারসহ আশপাশে মানুষদের নজর দিতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের অর্ধেকই ঢাকার বাসিন্দা। তাই ঢাকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অর্ধেক রোগী কমে যাবে।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, এখন আমাদের দায়িত্ব চিকিৎসা দেওয়া। আমরা তা দিচ্ছি। আমরা রোগীদের স্যালাইনসহ সেবার সব ব্যবস্থা নিয়েছি। সিটি করপোরেশনসহ সবার সঙ্গে তথ্য শেয়ার করছি। তাদেরকে এডিস প্রতিরোধে সহযোগিতা করছি। আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি। কারও একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। একে অপরকে দোষারোপ না করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
এডিশ মশা নির্মূলে সিটি করপোরেশনের ব্যবহৃত ওষুধের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মশা নিধনে যেভাবে ডোবা-নালায় স্প্রে হওয়া দরকার, সেভাবে হচ্ছে না। স্কুলেও অনেক বাচ্চা আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু সেখানে ঠিকমতো মশা নিধনের স্প্রে হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। পাশাপাশি কল কারখানায় যাতে নিয়মিত স্প্রে হয়, সেটি তদারকি করতে হবে। যেসব মশা জন্মাচ্ছে, সেগুলো নিয়েও গবেষণা হওয়া দরকার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় জড়িত স্টেক হোল্ডাররা।
আরও পড়ুন:
পুলিশ ভ্যানে ট্রেনের ধাক্কা, প্রাণ গেল ৩ পুলিশ সদস্যের